রচনা : ছোট পরিবার সুখী পরিবার

ভূমিকা : বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। প্রায় ষোল কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের ছোট্ট একখণ্ড দেশ এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশে জন্মের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এখানে মৃত্যুর হার বেশি হলেও তা জন্মের হারের তুলনায় অনেক কম। সেজন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বর্তমানকালে সকল দেশেই জনসংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জমির পরিমাণ মোটেই বৃদ্ধি পায়নি; অধিকন্তু জমির উৎপাদিকা শক্তি ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সব দেশেই খাদ্যশস্যের মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু খাদ্যশস্য কেন, সব দ্রব্যের মূল্য আনুপাতিক হারে বেড়ে অধিকাংশ লোকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে জাতীয় জীবনে চরম হতাশা দেখা দিচ্ছে।

পূর্বের অবস্থা : একদিন বাঙালির গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, বাগান ভরা তরিতরকারি, কণ্ঠ ভরা গান ছিল –তখন বাঙালির অন্ন-বস্ত্রের অভাব ছিল না। বার মাসে তের পার্বণের মধ্যে দিয়ে বাঙালির সুখের দিনগুলো কেটে যেত। তখন লোকসংখ্যার স্বল্পতা ও খাদ্যশস্যের প্রাচুর্য ছিল বলে বাংলাদেশে নব-শিশুর জন্মোৎসব খুব ঘটা করে করা হতো। কিন্তু আজ সে দিন আর নেই। মানুষের জীবিকা অর্জন ও সন্তানাদি পালন এখন কঠিন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাই আজ নব শিশুর আগমনবার্তা অনেক গৃহে আনন্দ দান করে না। নতুন সন্তানের ভরপোষণের চিত্তায় অনেক পিতা-মাতার হৃদয়ই ভারাক্রাস্ত হয়ে ওঠে।

ছোট পরিবারের প্রয়োজনীয়তা : সুখী ও সমৃদ্ধিশালী পরিবার গঠনের জন্য পরিবারকে ছোট রাখতে হয়। পরিবার বড় হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুঃখ ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে শুধু একটি পরিবারকেই যে দুঃখ ভোগ করতে হয় তা নয়, বরং জাতীয় জীবনেও দুঃখ দুর্দশা দেখা দেয়। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং খাদ্যের সংস্থান করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। দেশের খাদ্য সমস্যা দূর করার জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয় বলে সরকারের পক্ষে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ সম্ভব হয় না।

সুসামঞ্জস্য পরিবার : সৃষ্টির ক্রমবিকাশের ধারা এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায় যে, পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বংশবৃদ্ধি ও আত্মরক্ষা করতে না পেরে বহু প্রজাতি ধরাপৃষ্ঠ থেকে লয়প্রাপ্ত হয়েছে। মানুষকেও পারিপার্শ্বিকতার সাথে সংগতি রক্ষা করে জীবনধারণ করতে হয়। মানুষ অসাধারণ বুদ্ধিবলে প্রকৃতিকে বশীভূত করতে প্রয়াস পায়। তাদের সে চেষ্টা বহুলাংশে সফল হলেও সম্পূর্ণরূপে সফল হয়নি। এর কতকাংশ বিফলতায় পর্যবসিত হয়। তখন তারা প্রকৃতির সঙ্গে আপোস করতে বাধ্য হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণ করে ছোট পরিবার গঠন করা প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আপোস ও সামঞ্জস্য বিধানের একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ –জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পথযাত্রায় প্রধান শ্লোগান। শান্তি ও সুখের মূলমন্ত্র।

ছোট পরিবার : ছোট পরিবার পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধানতম ভিত্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় জীবনে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছোট পরিবার গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। কারণ বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে ফসল এবং জাতীয় আয় বাড়ছে না। সুতরাং সমস্যা ক্রমেই জটিল ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো এ সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য বাস্তব কাজে হাত দিয়েছে। আমাদেরও এ সমস্যার মোকাবিলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। নতুবা এ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের বহু উন্নয়ন কার্য পরিত্যাগ করতে হবে।

সুখী পরিবার : পরিবার ছোট হলে পরিবারে যে শুধু সুখ ও সমৃদ্ধি দেখা দেয়, তাই নয়। যে পরিবারের জননী মাত্র দুটি সন্তান জন্ম দেয়, সে জননী স্বাস্থ্যবর্তী ও সুদ্ধ থাকে বলে তিনি পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের দিকে নজর দিতে পারেন এবং পরিবারের সমৃদ্ধির ভান্য নিরলস পরিশ্রম করতে পারেন। সন্তান সংখ্যা কম হলে তারাও স্বাস্থ্যবান হয়। তাদের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার পরিবেশন করা যায়; তাদের ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেওয়া যায় এবং তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে কষ্ট পোহাতে হয় না। অভাবহীন পরিবারে স্বাস্থ্যবান ও উচ্চশিক্ষিত মানুষ থাকলে পরিবার অবশ্যই সুখী হয়। ছোট পরিবার নিয়ে গঠিত সুখী ও সম্পদশালী সমাজই বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী জাতি গঠন করে। 

উপসংহার : প্রয়োজন অনুযায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ করে ছোট পরিবার গঠন করতে হবে। ভবিষ্যৎ বংশধরগণ সুস্থ দেহ, উৎকৃষ্ট খাবার ও উচ্চশিক্ষালাভ করে যাতে শক্তিশালী জাতি গঠন করতে পারে, তার প্রতি লক্ষ রাখা সকলের অবশ্য কর্তব্য এবং পবিত্র দায়িত্ব। কারণ, ছোট পরিবারই সুখী পরিবার এবং বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী জাতি গঠনের চাবিকাঠি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post