মার্চের দিনগুলি

রচনা : একটি টাকার আত্মকাহিনী

ভূমিকা : আমি একটি মাত্র টাকা। তাই বলে আমার আভিজাত্য কম নয়। একটা সমৃদ্ধ বংশের সন্তান আমি। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যে আমাকে ভালোবাসে না।

আমার জন্ম : আমার জন্মের সঠিক সন তারিখ বলতে পারব না। তবে মোটামুটি আমার যখন জন্ম হয় তখন বাংলাদেশের এক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। পাক-ভারত উপমহাদেশে তখন ঘনিয়ে এল দুর্যোগের ঘনঘটা। স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছিল বহু বাঙালি তরুণ। পরে শুনেছি সেটা ছিল ১৯৪৭ সাল। ইংরেজ শাসনের বলান ঘটিয়ে ভারতবাসী স্বাধীনতা লাভ করল, ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হলো ভারত ও পাকিস্তান। আমরা অনেকেই সেদিন জন্মগ্রহণ করিনি। কী কৌশলে কাগজের সঙ্গে বিভিন্ন ছাপের সংমিশ্রণে আমাকে তৈরি করে রেখেছিল ব্যাংকে। কী সুন্দর ছিল আমার চেহারা!

বংশ পরিচয় : আমার আদি পূর্বপুরুষ কখন এই শ্যামল সুন্দর মায়াবী পৃথিবীর মুখ দেখেছিল আমার তা মরণ নেই। তবে সমাজের এক মহৎ কর্তব্য পালনের জন্যই যে তাঁর সৃষ্টি হয়েছিল তা বলা নিষ্প্রয়োজন। আমি শুনেছি, আমি আসার আগে দেশে বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল, টাকার প্রচলন ছিল না। তাদের সহজ সরল জীবনে স্বাচছদ্য ছিল, কাজেই সেভাবে চলতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমাজে যে জটিলতা সৃষ্টি হলো তাতে বিনিময় প্রথা তাল মিলিয়ে চলতে পারল না। ফলে শরণাপন্ন হতে হলো আমার পূর্বপুরুষদের। তাদের প্রয়োজন তখন বেড়ে গেল। আর এভাবেই আমার বংশ বৃদ্ধি হতে লাগল।

অনেকের তাচ্ছিল্যভাব : পৃথিবীতে আমাকে সবই সম্মান করে একথা সত্য। তবে অনেকে আমাকে দেখে তাচ্ছিল্যভাবে চট করে বলে ফেলে এতো একটা সামান্য টাকা। আমি যখন একা থাকি তখন আমার শক্তি কম কিন্তু আমরা যখন সব ভাই একত্র হই, তখন লোকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সকলেই আমাদেরকে সযত্নে রাখে।

বৃহৎ কল্যাণ সাধন : পৃথিবীর বৃহৎ বৃহৎ কাজ আমার ধারাই সাধিত হয়। বহু অসামাজিক কাজেও আমাকে ব্যবহার করা হয়। তবে আমার মুখ ক্য থাকায় আমি তাঁর প্রতিবাদ করতে পারি না। আমি শুধু তা নীরবে সহা করি। আবার আমার দ্বারা যখন সমাজের মহৎ কাজ সাধিত হয় তখন আমার আনন্দের সীমা থাকে না। আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমার তখন মনে হয় সমাজের এক বৃহৎ কল্যাণের জন্যই আমাদের সৃষ্টি। আর এ মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আমরা একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে চলে যাই। এতে আমার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে না। পরোপকারের মহৎ সাধনাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

আমার কর্মজীবন : দ্রব্য বিনিময় প্রথা অবলুক্তির পর মানুষের বৃহত্তর প্রয়োজন সাধনের জন্য আমাকে ব্যাংক থেকে বাজারে বের করে দেওয়া হয়। আমার বন্ধুরা তখন কে কোথায় চলে গিয়েছে আমি তাদের কোন খোঁজ খবর পেলাম না। আমরা সবাই বাজারে নেমে পড়লাম। একজনের পকেট থেকে অন্যজনের পকেটে যাতায়াত শুরু হয়ে গেল আমাদের। আমাদের এ যাত্রার কোন শেষ নেই। আমার এই যাত্রাপথে দেখেছি কত দুঃখিনী মায়ের হাহাকার শুনেছি কত অসহায় শিশুর তদন। আর ধনী ঘরে গিয়ে দেখেছি তাদের মুখের হাসিখুশি।

আমার অভিজ্ঞতা : কর্মময় আমার জীবনে বহু অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি। বসবাস করেছি শহরের বড় বড় অট্টালিকায়। আবার মানুষের কল্যাণে গিয়েছি ভিক্ষুকের হাতে। এতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি আমার জন্ম হয়েছে এব স্নান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্যই আমার ধর্মও ও ই। আমি এক জায়গায় বসে থাকতে পছন্দ করি না। চলার মধ্যেই আমার সার্থকতা। উপসংহার: আমার জন্মকথা শেষ হতে চলেছে। জন্মের পর থেকে আমি চলেছি তো চলেছি। কিন্তু একদিন আমারও মৃত্যু হলো। সে মৃত্যু কী ভয়াবহ! আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হলো। যন্ত্রণায় আমি ছটফট করলাম। জীবনের তরে আমি নিঃশেষ হয়ে গেলাম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post