রচনা : তোমার পোষা প্রাণী

ভূমিকা : আমাদের দেশে নানা ধরনের পোষা প্রাণী আছে। যেমন : বিড়াল, কুকুর, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। এরা গৃহে পালিত হয় এবং প্রত্যেক বাড়িতেই এদের কোনো না কোনোটিকে দেখতে পাওয়া যায়। গৃহপালিত পোষা প্রাণীর মধ্যে বিড়ালের জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি।। তাই বিড়াল আমারও পোষা প্রাণী। শহরে ও গ্রামে সর্বগ্রহ বিড়ালের উপস্থিতি আছে।

আকৃতি : বিড়াল ছোট আকৃতির চতুষ্পদী প্রাণী। দেখতে বাঘের সাথে এর অনেক মিল আছে। এ জন্য বিড়ালকে মজা করে বাঘের মাসি বলা হয়ে থাকে। বিড়ালের চারটি পা আছে পায়ের নিচের অংশ বেশ নরম মাংসের কারণে হাঁটার সময় কোনো শব্দ হয় না। বিড়ালের সারা শরীর ছোট ছোট লোমে ঢাকা। এদের লেজেও প্রচুর লোম আছে। ঘন লোমের জন্য বিড়ালের শরীর খুব নরম। এদের পায়ের নখ খুবই ধারালো। এই নখ ব্যবহার করেই এরা শিকার ধরে এবং শিকার জব্দ করে। বিড়াল রাতে ভালো দেখতে পায় এবং রাতে চোখ জল জল করে। এ জন্য রাতের বেলায়ই এরা বেশি শিকার করে। শিকার দেখলে এরা লেজ নাড়িয়ে চঞ্চলতা প্রকাশ করে।

প্রকৃতি : বিড়াল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। যেমন: সাদা, কালো, লাল, ধূসর, বাদামি, কালো ডোরাকাটা, সাদার মধ্যে কালো ছাপ ইত্যাদি। এ ছাড়া বনের মধ্যে একধরনের বিড়াল দেখা যায়, যাদের বলা হয় বনবিড়াল।

স্বভাব : বিড়াল একটি আরামপ্রিয় শান্ত প্রাণী। এরা আদর পছন্দ করে। নরম বিছানায় ঘুমাতে ভালোবাসে। শক্ত বিছানা এদের পছন্দ নয়। এরা শিকারি প্রাণী। ইঁদুর শিকার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এরা বছরে দুবার বাচ্চা দেয় এবং একসঙ্গে ৩-৪টি বাচ্চা জন্ম দেয়। বিড়ালের একটা মজার স্বভাব হলো এরা পায়খানা করার পর সামনে যা পায় তা দিয়ে ঢেকে রাখে। আদর পেলে এরা খুশিতে গর গর শব্দ করে। বিড়াল সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছর বাঁচে।

খাদ্য : বিড়ালের প্রধান খাদ্য হলো দুধ। মাছও এদের খুব পছন্দ। মাংস, মাংসের হাড়, মাছের কাঁটা ইত্যাদি পেলেও এরা খুশি হয়। ছোট ছোট পাখি এবং ইঁদুর শিকারের পর এরা খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। দুধ পেলে এরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়। মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারও এরা উৎসাহ নিয়ে খায়।

উপকারিতা : বিড়াল আমাদের অনেক উপকার করে। এদের জন্য ইঁদুর, বিছা, তেলাপোকা, পোকমাকড় ইত্যাদি ঘরে থাকতে পারে না। ইঁদুর শিকার করে এরা মানুষের অনেক মূল্যবান সম্পদ, কাগজে লেখা দলিলপত্র, কাপড় ইত্যাদি বাঁচায়। বিড়াল শিশুদেরও খেলার সাথি।

অপকারিতা : বিড়েলর কিছু অপকারও করে থাকে। এরা চুরি করে মাছ, মাংস খেয়ে ফেলে। এরা খাবারে মুখ দিলে তা আর খাওয়া যায় না। বিড়াল ডিপথেরিয়া নামক রোগজীবাণু বহন করে। ঘুমের জন্য এরা মানুষের বিছানায় শুয়ে বিরক্তির কারণ হয়।

আমার বিড়াল পোষার কারণ : বিড়ালের কিছুটা অপকারিতা থাকলেও উপকারই বেশি। সে ইঁদুর ও পোকামাকড় মেরে আমাদের ঘরের সম্পদ যেমন রক্ষা করে, তেমনি রক্ষা করে জমির ফসল। তাছাড়া বিড়াল খুব প্রভুভক্ত প্রাণী। আমি বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমার পোষা বিড়ালটি আমাকে আদর ও অভ্যর্থনা জানায়। এ জন্য বিড়াল আমার পোষা প্রাণী।

উপসংহার : বিড়াল অপকারের চেয়ে আমাদের উপকার করে বেশি। বিড়াল তার স্বভাবের জন্য মানুষের আদর পায়। মানবেতর প্রাণী হিসেবে বিড়ালের প্রতি সব সময়ই আমাদের সহানুভূতিশীল থাকা উচিত।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post