মার্চের দিনগুলি

রচনা : বিজয়ের গল্প

ভূমিকা : ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আমরা এ দিন বিজয় পেয়েছিলাম। এ বিজয় অর্জনের পিছনে লাখো শহীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা। হাজারো মা-বোনদের বুকফাঁটা আর্তনাদ ও কান্না। আমাদের সকলকে বিজয় দিবসের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের বিজয় দিবস : বিজয় শব্দের অর্থ-আনন্দ। এ আনন্দ স্বাধীনতার আনন্দ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আমরা পেয়েছিলাম বিজয়। ১৬ ডিসেম্বরে আমরা শুধুমাত্র রাষ্ট্র হিসেবেই বিজয় লাভ করিনি বরং স্বাধীনতা পেয়েছি কথা-বার্তা, আচার-আচরণসহ সকল ক্ষেত্রে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্বাধীনতার ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসেও আমরা প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ পাইনি। এখনো রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার সকল স্থানে চলছে অরাজকতা। অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে অন্যায়, অসত্যের কালো থাবা। আমাদেরকে এখন কর্তব্য বিজয়ের মর্ম অনুধাবন ও এর জন্য গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ। তবেই বিজয় দিবসের প্রত্যাশা পূরণ হবে।

বিজয় দিবসের পটভূমি : বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। চিরসবুজের এই দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি। এদেশের কৃষকরা চাষ করে, তাঁতিরা বুনে বাহারি রঙের কাপড়। চারিদিকে যেন শান্তি। কিন্তু এ শান্তি বিঘ্নিত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসনামলে। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। মানুষের স্বাধীনতা বলতে যেন কিছুই ছিল না তখন। নদীর কূল ঘেষে মাঝি নৌকা বাইত ও গান ধরত। কিন্তু সে গানে ছিল না কোন প্রাণ। ১৯৭০ সালে নির্বাচনেও বাংলার মানুষের স্বাধীনতার দাবি উপেক্ষিত ছিল। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ রাজপথে নেমেছিল অসহযোগ আন্দোলন করতে। এই আন্দোলনই একসময় রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। শাসকশ্রেণির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করেছিল আমাদের সবার প্রিয় দেশ বাংলাদেশকে। ব্রিটিশদের ন্যায় পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীদেরকেও দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো বাংলার দামাল ছেলেরা। এতে ঝরে গিয়েছিলো অসংখ্য লোকেদের প্রাণ। অবশেষে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অপরিসীম ত্যাগ ও বিপুল ধ্বংসলীলা সাধনের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করেছি আমাদের বিজয়।

বিজয় দিবসের প্রত্যাশা : বিজয় আর স্বাধীনতা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তার চূড়ান্ত ফলাফলই ছিল বিজয়। কিন্তু এ বিজয় সত্যিকারার্থে কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা এখনো প্রশ্নের বাণে বিদ্ধ। আমরা বহু ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের এ দেশ। কিন্তু এ দেশে এখনো বহু মানুষ খাদ্যে অভাবে ও পুষ্টিহীনতা সহ নানা সমস্যায় ভুগছে। নানা স্থানে নিম্নভিত্তরা এখনো নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও খবরের পাতা খুললেই চোখে পড়ছে ধর্ষণ, রাহাজানিসহ নানা স্থানে নারী নির্যাতনের ঘটনা। তাদের জীবনে এখনো বিজয়ের স্বাদ আসেনি। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বাস্তবিকই যেন পরাধীন। পরাধীনতা হতে অবস্থার উন্নতি হওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত বিজয়। এ নিয়ে একজন ফরাসি লেখক ও সাহিত্যিক Albert Camus বলেছেন,
Freedom is nothing but a chance to be better
তাই বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। এ দেশের বিজয়গাঁথা লিখা হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ শহীদদের রক্তের কালিতে। তাই তো আমাদের এ দেশে বিজয় দিবস আমাদের কাছে এতটা মূল্যবান। তাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে নানা সমস্যা সমাধান করে আমাদের দেশকে এক সুন্দর ও সোনার দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা লাভ করতে পারবো প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ। 
উপসংহার : ১৬ ডিসেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অনেক ত্যাগের মাধ্যমে এদিন আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু বিজয়ের প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। এর জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি খোদার দরবারে আমাদের আকুল আবেদন-
“শহীদের রক্তে অর্জিত এ বিজয়
যেন লুণ্ঠিত না হয় কভু
প্রিয় জন্মভ‚মি প্রিয় বাংলাদেশকে
তুমি শান্তিময় করো প্রভু।”
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post