খুদে গল্প : নগর জীবন

'নগর জীবন' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।

নগর জীবন

শুভদের বাসায় গ্রাম থেকে একজন লোক এসেছে। ষাটোর্ধ বয়স, মাথার চুল প্রায় সাদা হয়ে এলেও শরীরটা বেশ মজবুত। শুভ তার বাবার কাছে জানতে পারে লোকটির নাম তোবারক, গ্রাম সম্পর্কে চাচা হয়। গ্রাম সম্পর্কে গভীর কৌতূহল থাকার কারণে শুভ তার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষটি বাসার আসা অবধি মনে হচ্ছে কেমন একটা অস্থিরতা মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। তারপরও শুভ তোবারকের কাছে গিয়ে বলে কেমন আছেন চাচা? তোবারক আচমকা পেছনে ফিরে দেখে পনেরো ষোল বছরের একটা ছেলে তাকে চাচা বলে তার ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। সেও যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, বলে- আছি ভালো বাজান। তুমি বুঝি বশির ভাইয়ের পোলা? ভালো, ভালো। শুভর বাবার নাম বশির। শুভ বলে হ্যাঁ চাচা, তো আপনার এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? চোখের ভুরুদুটি ঈষৎ কুঞ্চিত করে তোবারক জবাব দেয়- কী আর অসুবিধা বাজান, কী কমু- আজ তিন দিন হইল তোমাগো বাসায় আইছি। এখনো পর্যন্ত কারও সাথে ভালোভাবে কথা কইতে পারলাম না। সজ্ঞলে যেন সারাক্ষণ দৌঁড়াইতাছে। আর আহনের সময় দেখি কী পরিমাণ মানুষ আর গাড়ি! আমি তো প্রায় হারায়াই গেছিলাম আর কী। অনেক কষ্টে বাসা খুঁইজ্যা পাইছি। ভাবছিলাম বুঝি হাট বারের দিন আইসা হাজির হইছি। কিন্তু এখন দেহি ঢাকা শহরে সজ্ঞল দিনই হাট বার। তোবারক চাচার কথা শুনে শুভ না হেসে পারে না। বলে- হ্যাঁ চাচা ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। আর সবাই প্রায় কর্মজীবী, তাই ছোটাছুটিও বেশি। কারও দিকে কারও তাকানোর সুযোগ নেই। তোবারক বলে, "হাচা কথা কইছো বাজান। কেউ কারও দিকে চায় না। কী আর কমু আমাগো যে বশির ভাই, কী ছিল দরিয়ার মানুষ ছেলেন। অথচ সেই আহনের দিন একবার দেখা দিয়া সেই মানুষটার আর কোনো পাত্তা নেই। আর তোমাগো বাসায় কী সব নিয়ম কানুন, ঠিক মতো নাইতে পারি না, সকালের কাম-কাজ করবার পারি না। খাইতেও পারতাছি না। আর বাসার বাইর অইলে মনে হয় আবার বুঝি হারাইয়া যামু। গাড়ির তলে চাপা পড়ুম। তুমি তোমার বাবারে কইয়া আমারে সদরঘাটের লঞ্চে উঠাইয়া দিয়া আসতে কও। আমার ঢাকা শহরে আহনের খায়েশ মিট্যা গ্যাছে। অ্যার চেয়ে আমাগো গেরাম ভালো। তোমরা থাকো তোমাগো শহরে।"
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post