ভাষণ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য বর্ণনা করে একটি ভাষণ রচনা কর।

অথবা, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে তোমার কলেজ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রদানের জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।

অথবা, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ তৈরি কর।

অথবা, শহীদ দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একুশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে একটি ভাষণ রচনা কর।

অথবা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।

অথবা, ‘একুশের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।

অথবা, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে “বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক” – এই শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।

অথবা,
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে একজন বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা

মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মানুষকে চেতনাবোধে সমৃদ্ধ করার দিন।

সুধীমণ্ডলী,
ভাষা হলো মনের ভাব প্রকাশের প্রায়োগিক বাহন। মাতৃভাষা হলো কোনো জাতির স্বদেশীয় ভাষা, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিবাসী স্বীয় ভাব আদান-প্রদান করে। শিশু জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শিখে তাই হচ্ছে মাতৃভাষা। আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এ ভাষার জন্য সংগ্রাম করে এবং অনেকে এ ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে প্রাণ দান করেন। তদানীন্তন শাসকশ্রেণির অত্যাচারের স্টিম রোলারের আঘাতে নিষ্পেষিত হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং নাম না-জানা আরও অনেকে। 

১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ ঘোষণা করে অন্যান্য দিবসের মতো ২০০০ সাল থেকে বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম এবং আত্মদানকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে।

পৃথিবীর সকল দেশেই তা পালিত হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল ঢাকার শহীদ মিনারে নয়; বরং পৃথিবীজুড়ে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বিশ্ববাসী নতুন করে জানতে পারবে কীভাবে ভাষাশহীদরা তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছেন।

সুধীবৃন্দ,
মা, মাটি, মাতৃভাষা পরম সম্পদ। এ ভাষার সুধারসে যার মন তৃপ্ত না হয় তার সেদেশে বাস করার কোনো অধিকার নেই। মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম বলেছেন—

“দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায় ।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ না যায়।"

এ ভাষায় রচিত হয় গল্প, কবিতা, উপন্যাস নাটকসহ নানা ধরনের সাহিত্য। এ ভাষায় রূপায়িত হয় মানবমনের নানা কথার ফুলঝুরি, অজানা দুর্ত্তেয় রহস্য। এ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় একমাত্র বাঙালি জাতিই লিপ্ত হয়েছে সংগ্রামে, ঝরিয়েছে বুকের তাজা রক্ত। মাতৃভাষা একটি দেশের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই যখনই তাদের মাতৃভাষার ওপর কোনো আঘাত আসবে, তখনই তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠবে তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য।

সুধীবৃন্দ,
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা লাভ করায় সারাবিশ্বে বাঙালি এবং বাংলা ভাষা গৌরবের আসনে সমাসীন। এ দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

সবাইকে ধন্যবাদ।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post