প্রতিবেদন : বাড়ছে শিশুশ্রম; রুদ্ধ হচ্ছে শিক্ষার হার

শিশুশ্রম বন্ধের আবশ্যকতা তুলে ধরে পত্রিকায় প্রকাশের জন্যের একটি প্রতিবেদন রচনা করো।


বাড়ছে শিশুশ্রম; রুদ্ধ হচ্ছে শিক্ষার হার


কায়সার হামিদ : ধোলাইখাল : মহান মে দিবসে শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা হয়; কিন্তু শিশুশ্রম প্রসঙ্গে কোনো আলোচবা হয় না। ‘স্বাবলম্বী’ নামক সংগঠন স্বেচ্ছায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সংগঠনটি ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ওপর সম্প্রতি একটি বিস্তারিত জরিপ চালিয়েছে। কুষ্টিয়া জেলায় দেখা গেছে - ৪৩৫ জন শিশু মোট ৪২ ধরনের কর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২০ ধরনের শ্রম মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ১৫৬ জন শিশু এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ৮ প্রকারের কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন: ওয়েলডিং, ওয়ার্কশপের কাজ, টেম্পো হেলপারের কাজ, জর্দা ফ্যাক্টরির কাজ, রিকশা চালানো, সিগারেট ফ্যাক্টরির কাজ ও ঠেলাগাড়ির কাজ। এসব অতিশয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৪৩৫ জন শিশুর মধ্যে ১১৫ জন শিশু। ৪৩৫ জনের মধ্যে ৬৮ জন কখনো স্কুলে যায় নি। বাকিদের মধ্যে কেউ প্রাইমারি উর্ত্তীন হতে পারে নি। এরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুরা জানিয়েছে, পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে তারা শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর শিশুশ্রম সহজলভ্য, তাই নিয়োগকর্তারা শিশুদের কাজ দেয়া লাভজনক মনে করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো বেতনাদি দিতে হয় না শিশু শ্রমিককে। শুধু খাবার প্রদানই তাদের বেতন আর মজুরি হিসেবে গণ্য হয়। 

জরিপে শিশুদের থাকা খাওয়া সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমীক্ষায় জানা যায়, ৪৩৫ জনের মধ্যে ১১৩ জন কর্মস্থলে, ২১৮ জন অভিভাবকদের সঙ্গে ও বাকিরা অন্যত্র রাত্রিযাপন করে। পরিবহন কাজে সংশ্লিষ্ট শিশু শ্রমিকরা বাসে বা ট্রাকের নিচে অথবা টেম্পো বা রিকশা গ্যারেজে রাত্রিযাপন করে। গৃহ পরিচারিকার কাজে নিযুক্ত শিশু ৯ জন তিনবেলা খাবার পায়। এ কাজে নিযুক্ত ৩১জন নিয়োগকর্তার রান্নাঘরে রাত কাটায়, ১০জন অভিভাবকের সঙ্গে এবং ৬ জন অন্যত্র রাত কাটায়। শিশু শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠেন নেই। নূন্যতম মজুরি কত সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারনা নেই। কোনো শ্রম আদালত শিশু শ্রমিকদের নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে, এমন উদাহারণ আমাদের সামনে নেই। দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজ কাঠামো শিশু শ্রমিকদের ওপর অনেকটাই ভর করে আছে। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে রাতারাতি কোন কিছুর পরিবর্তন হয় না। এ লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আবশ্যক। প্রতি বছর জুন মাসে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। সে উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, শিশুশ্রম অত্যন্ত অমানবিক। যে কোনোভাবেই শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। তবে শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্যে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা আবশ্যক। সবার আগে প্রয়োজন শিশুদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল মনোভান, তাদের দেহ-মনের সুষ্ঠু বিকাশে আমাদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু উপহার দেয়ার জন্যে শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে, শ্রমিক শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কিংবা তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post