ভাবসম্প্রসারণ : পড়িলে বই, আলোকিত হই; না পড়িলে বই, অন্ধকারে রই।

পড়িলে বই, আলোকিত হই; না পড়িলে বই, অন্ধকারে রই।

মূলভাব : বই জ্ঞানের আলো বিতরণ করে, হৃদয়কে আলোকিত করে, দূর করে মনের সব অন্ধকার। মনের অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার জন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় বহুসংখ্যক বই পড়তে হবে। 

সম্প্রসারিত ভাব : পাঠ্যবই বাধ্য হয়ে পড়তে হয়। কিন্তু এ পড়া একবিন্দু শিশিরের সমতুল্য। পাঠ্যবইয়ের বাইরে রয়েছে অজস্র বিষয়ের অসংখ্য বই। এসব বইতে শুধু তত্ত্ব বা তথ্য নয়, বহু বিচিত্র বিষয়ের বর্ণনা, আলোচনা, তুলনা, কল্পনার বিষয় রয়েছে। ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ভূগোল, ধর্ম, জ্যোতির্বিদ্য নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, কল্পকাহিনি, কল্পবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ের বিস্তর উৎকৃষ্টমানের বই রয়েছে। এসব বই পড়ে আমরা নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি, নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। এসব অভিজ্ঞতা শুধু আমাদের আনন্দই দেবে না, জীবন চলার পথে পাথেয়ও জোগাবে। আমরা আমাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারব, দেশ ও জনগণের কল্যাণে গঠনমূলক কাজ করতে পারব। বই পড়ে এভাবেই আমরা নিজেরা আলোকিত হব এবং অন্যদেরও আলোকিত করতে সমর্থ হব। যারা বই পড়তে জানে না তাদের শিক্ষিত করে তুলতে পারব। আর যারা বই পড়ে না তাদেরকেও আগ্রহী করে তুলতে সক্রিয় হতে পারব। লেখাপড়া যারা জানে না তারা যেমন অন্ধকারে থাকে, তেমনি যারা লেখাপড়া জানে অথচ জ্ঞানের বই পড়ে না তাদের জীবনও অন্ধকারাচ্ছন্ন। অন্ধকার থেকে আলোকিত জীবনে আসতে হলে তাদেরকে অবশ্যই পছন্দের বই পড়তে হবে। তাতে তারা লাভ করবে নতুন আনন্দময় আলোকিত জীবন। যে জীবন অভীষ্ট লাভে সফল হবে এবং অপরের জন্য উৎসর্গীকৃত হবে। এমন আলোকিত সফল জীবনই প্রশংসা ও মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পারে। অজ্ঞান অন্ধকার জীবন কখনো প্রশংসা, মর্যাদা ও সাফল্য লাভ করতে পারে না।

সিদ্ধান্ত : সুতরাং বই না পড়ে অন্ধকারে থাকার চেয়ে বই পড়ে আলোকিত জীবন গ্রহণই শ্রেয়।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : মানুষের জ্ঞান আহরণের প্রধান উৎস বই। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ যেমন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়। তেমনিই বই বিমুখ মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : বই হলো জ্ঞানের আধার। বই পড়লে মানুষের জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হয়। মানুষ অজানাকে জানতে পারে। অচেনা জগৎ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। বই মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে। তবে পঠিত বই হতে হবে অবশ্যই মানসম্মত। কেননা মানহীন বই পাঠ করলে পাঠক পথভ্রষ্ট হতে পারে। তাই ভালো বই যেমন পাঠ করা দরকার তেমনই মন্দ বই পড়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। মানসম্মত বই-ই পারে মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে জীবনকে বদলে দিতে। তাই জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে অবশ্যই বই পড়তে হবে। প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়।’ পাঠ্যসূচির কয়েকটি বই পড়ে জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন হয় না। বহুমুখী প্রতিভা অর্জন ও বিচিত্র জ্ঞানের জন্য বিভিন্ন বই পড়তে হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে। জ্ঞানের রাজ্যের ক্ষুধা মেটাবার প্রধান মাধ্যম হলো বই। বই আত্মার খোরাক জোগায়। অন্ধকার যেমন আলো ছাড়া দূরীভূত করা যায় না, তেমনই বই পড়া ছাড়া অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করা যায় না। যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি উন্নত।

বই পড়ার অভ্যাস আলোকিত করে মানুষের ব্যক্তিমন। আর যাদের বই পড়া অভ্যাস নেই তারা জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত। তাই ব্যক্তি ও সমাজ আলোকিত করতে বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post