সাধারণ জ্ঞান : কায়কোবাদ [ প্রার্থনা ]

কায়কোবাদ

কবি কায়কোবাদ কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৫৭ সালে।

তাঁর জন্মস্থান কোথায়? — আগলা পূর্বপাড়া গ্রাম, নবাবগঞ্জ, ঢাকা।

তাঁর মূল পরিচয় কি? — একজন কবি।

তাঁর প্রকৃত নাম কী? — কাজেম আল কোরেশী।

তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? — বাল্যের গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া শেষ করে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হন। পরে 'ঢাকা মাদ্রাসা' থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন।

কোন কোন কবির কাব্যপ্রভাব তাঁর উপর বেশি ছিল? — হেমচন্দ্র বন্ধ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন।

তাঁর কবিত্ব শক্তির বিকাশ ঘটে কোন কাব্য রচনার মাধ্যমে? — মাত্র ১৩ বছর বয়সে 'বিরহ-বিলাপ' (১৮৭০) লিখে। এটি তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।

তাঁর বিখ্যাত দুটি কাব্যগ্রন্থ কী কী? — 'অশ্রুমালা' (গীতিকাব্য) এবং 'মহাশ্মশান'।  (মহাকাব্য)

বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা কে? — কায়কোবাদ। 

বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচনা করেন কে? — কায়কোবাদ। 

কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
— কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'বিরহ-বিলাপ'। এটি ১৮৭০ সালে প্রকাশিত হয়। তবে অনেক সমালোচকই কাব্যটির নাম 'বিরহ-বিলাস' বলেছেন। কবি অবশ্য বলেছেন—"  আমি যখন বার বৎসর বয়স্ক বালক সেই সময় আমার 'বিরহ-বিলাপ' নামক ক্ষুদ্র একখানা কাব্য প্রকাশিত হয়।" কাব্যগ্রন্থটি আজ পাওয়া যায় না সহজে। 

"অশ্রুমালা" কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
— কায়কোবাদের খণ্ড কবিতাগ্রন্থ "অশ্রুমালা" (১৮৯৬)। এই কাব্যগ্রন্থের মূল সুর হলো প্রেম। তবে প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণবোধও এ কাব্যে খুব লক্ষ্য করা যায়। এই গ্রন্থে কোনো তত্ত্ব নেই, আছে মানব মনের আবেগ, আনন্দ - বিরহ, প্রেম - বেদনা ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রকাশ। কবি লিখেছেন— 'ইচ্ছা হয় তারে নিয়ে/ বনবাসী হই/ চাইলে এ লোকালয়/ এ যে বড় বিষময়।' সহজ উপস্থাপনা ও সরলতাই এ কাব্যগ্রন্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য। 

'মহাশ্মশান' গ্রন্থটির পরিচয় দাও।
— কবি কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'মহাশ্মশান' (১৯০৫)। কাব্যটি ধারাবাহিকভাবে মহম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত 'কোহিনূর' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১) অবলম্বনে এটি রচিত হয়েছে। কাব্যের মোট ৩ টি খণ্ড। প্রথম খণ্ডে ২৯ সর্গ, ২য় খণ্ডে ২৪ সর্গ, ৩য় খণ্ড ৭ সর্গ বিশিষ্ট। প্রধান চরিত্রগুলো হলো— ইব্রাহিম কার্দি, জোহরা বেগম, হিরণ বালা, আতা খাঁ, লঙ্গ, রত্নজি, সুজাউদ্দৌলা, সেলিনা, আহমদ শাহ্ আব্দালী ইত্যাদি। এই চরিত্রগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক এবং অনৈতিহাসিক উভয়ই আছে। চরিত্র তৈরিতে হিরণবালা শ্রেষ্ঠ। প্রেমিক আতা খাঁ নিজ পরিচয় গোপন অর্থাৎ প্রতারণার আশ্রয় নিলেও হিরণ বালা জোহরার ধর্মনিষ্ঠ থাকে নি। বরং আধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য মানবতাবোধের আলোকে সে বলেছে— নিজে প্রেমময় / জগদীশ, প্রেম শ্রেষ্ঠ সর্বধর্ম হতে / হিন্দু মুসলমান করেছে সৃজেছে কি বিধি / জীব শ্রেষ্ঠ মানবেরে- তোমারে আমারে?' অথচ জোহরা প্রাণাধিক স্বামীর চেয়ে ধর্মকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এব্রাহিম কার্দি বাহ্যিক কর্তব্যকর্ম করলেও স্ত্রীর প্রতি কর্তব্যকর্মে ব্যর্থ। এটি মহাকাব্য হিসেবে পরিচিত হলেও একে পুরোপুরি মহাকাব্য বলা যায় না। একে কাহিনিকাব্য বলা চলে। মূলত মুনীর চৌধুরীর 'রক্তাক্ত প্রান্তর' অবলম্বনে এটি তৈরি।

তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলোর পরিচয় দাও। — কুসুমকানন (১৮৭৩), শিবমন্দির (১৯২১), অমিয়ধারা (১৯২৩) ইত্যাদি। 

নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ থেকে ১৯৩২ খ্রিঃ এ তিনি কোন উপাধিগুলো পান? — কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন। 

তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ২১ শে জুলাই, ১৯৫৩ সালে। 

প্রার্থনা
কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

কায়কোবাদের মতে আমাদের কার কাছে সবসময় প্রার্থনা করা উচিত? — স্রষ্টার কাছে।

'বিভো' কী? — শব্দটি হলো বিভু। এই বিভুর কাব্যিক রূপ হলো "বিভো"। বিভোর আবিধানিক অর্থ হলো— বিধাতা মানে স্রষ্টা। 

" বিভো, দেহ হৃদে বল'। এখানে 'দেহ' কী? — এর অর্থ দাও। প্রাগাধুনিক বাংলা কবিতায় ক্রিয়াপদে ও-কার বদলে 'হ্' ব্যবহারের রীতি দেখা যায়। যেমন— অন্ধজনে দেহ আলো। ১৯ শতকের কবিতায় কেউ কেউ এটি ব্যবহার করেছেন।

স্রষ্টার কাছে কারা নিঃসম্বল? — এই জগতের মানুষ।

'প্রার্থান' কবিতার মূল চেতনা কী? — মূলচেতনা হলো— ''দেহ হৃদে বল'' অর্থাৎ হৃদয়ে শক্তি দাও বা আত্মশক্তি চাই।

'শোকানলে'কে সমাসকে বিচ্ছেদ করলে কী হয়? — শোক রূপ অনল > শোকানল ; রূপক কর্মধার য় সমাস।

"শোকানল" এর সন্ধিবিচ্ছেদ কী? — শোক + অনল।

'তরুলতা শিরে, তোমারি প্রসাদ'— প্রসাদ কী? — প্রসাদ হলো দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খাদ্যসামগ্রী, যা দেবতা গ্রহণ করেছেন বলে মনে করা হয়। তবে এখানে ঈশ্বরের সৃষ্টি ফল ফুল বা সৃষ্টিকে বা অনুগ্রহকে বোঝানো হয়েছে।

"প্রার্থনা" কবিতাটি কোথা হতে নেওয়া হয়েছে? — অশ্রুমালা কাব্যগ্রন্থ হতে।

জীবনে মরণে, শয়নে স্বপনে একমাত্র পথের অবলম্বন কে? — স্রষ্টা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post