মার্চের দিনগুলি

৬ষ্ঠ শ্রেণি : অ্যাসাইনমেন্ট : কৃষি শিক্ষা : ৬ষ্ঠ সপ্তাহ : ২০২১

৬ষ্ঠ শ্রেণি : অ্যাসাইনমেন্ট : কৃষি শিক্ষা
৬ষ্ঠ সপ্তাহ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিনা বেগম ২০২০ সালে নিকলী উপজেলায় অনুষ্ঠিত ‘কৃষি মেলা’ দেখতে যান। তিনি মেলায় প্রদর্শিত কৃষি জাত পণ্য, বিভিন্ন ফসলের নানা জাতের চারা ও গাছের উন্নত ফলন দেখে কৃষি কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজের পৈত্রিক জমিতে কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করতে আগ্রহী হন। কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করতে রিনা বেগম অভিজ্ঞ কৃষক, কৃষি মেলা, কৃষি শিক্ষা, কৃষি গবেষণা, কৃষি তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎসগুলো কীভাবে কাজে লাগাবেন? নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তরের মাধ্যমে তোমার মতামত উপস্থাপন কর-

১। রীনা বেগম কৃষি মেলায় কী কী কৃষিজাত পণ্য দেখতে পেয়েছিলেন?
২। তার কৃষিকার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কাদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পেতে পারে?
৩। কৃষি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে?
৪। একজন কৃষক ও একজন কৃষি বিজ্ঞানীকে তুমি কীভাবে আলাদা করবে?


নমুনা সমাধান

১। রীনা বেগম কৃষি মেলায় কী কী কৃষিজাত পণ্য দেখতে পেয়েছিলেন?
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি মানবজীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য প্রায় সকল উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহ কৃষি করে থাকে। এছাড়া পণ্য ও সেবা ক্রয়ের অর্থের যোগানও কৃষি দেয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য খাতের চাহিদাগুলো পূরণে আমাদের জীবনে কৃষি তাই ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

রিনা বেগম কৃষি মেলায় যে সকল কৃষিজাত পণ্য দেখেছিলেন :
কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি উপকরণ ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য একসাথে একমাত্র কৃষি মেলার মাধ্যমেই দেখা সম্ভব। গ্রামের মতো শহরেও এ ধরনের মেলার আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মেলায় এক নজরে নানা ধরনের ফসল দেখা সম্ভব হয়। এই মেলায় চারা, বীজ, সার, কৃষি প্রযুক্তি ইত্যাদি দেখানো ও বিক্রি করা হয়। এ মেলায় কৃষিবিষয়ক নানা লিফলেট, পুস্তিকা, বুলেটিন, পত্রিকা প্রদর্শিত হয় এবং বিনামূল্যে দর্শকদের দেওয়া হয়। এতে কৃষি কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও উপস্থিত দর্শকগণও কৃষি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হন। সুতরাং কৃষিবিষয়ক তথ্য পেতে কৃষি মেলার বিকল্প নেই।

২। তার কৃষিকার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কাদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পেতে পারে?
তার কৃষিকার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য যাদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পাবেন :
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা যার যার অবস্থান থেকে কৃষকদের তথ্য প্রদান ও সেবা দিয়ে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট প্রযুক্তির উপর পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন। আবার রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমেও কৃষিতথ্য প্রচার করেন। কৃষিতথ্য প্রচারের জন্য ‘কৃষিতথ্য সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থা আছে। সম্প্রসারণ কর্মীরা কৃষকদের খামার ও গৃহ পরিদর্শন করেন। কৃষকদের সাথে সভা করেন। নতুন প্রযুক্তি বা পদ্ধতি প্রদর্শন করেন এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলাফল প্রদর্শন করেন। এছাড়া তারা কৃষি মেলার আয়োজন করেন ও কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো, কৃষকেরা কৃষি সমস্যা নিজেরা চিহ্নিত করেন। যার কিছুটা সমাধান নিজেরা দিতে পারেন। যেসব সমস্যার সমাধান কৃষকেরা দিতে পারেন না, কেবল সেগুলো সম্পর্কে সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। এ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের সমম্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

৩। কৃষি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে?
কৃষি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করতে আজকাল বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরে কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই কৃষিশিক্ষা দিয়ে থাকেন, তবে আজকাল উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় ও এই শিক্ষা ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ১৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। এছাড়াও প্রাইভেট কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আছে। কারিগরি বোর্ডের একাডেমিক অধীনে থেকে ইনস্টিটিউটগুলো ৪ বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা প্রদান করে থাকে। উচ্চতর কৃষিশিক্ষার জন্য বাংলাদেশে ৫টি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ চালু আছে। তাছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষি অনুষদ চালু আছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি অনুষদ হতে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়।

একজন অভিজ্ঞ কৃষক রিনা বেগমকে নানাভাবে সহায়তা করতে পারে। একজন অভিজ্ঞ কৃষক সবসময় একজন কৃষি নেতা ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। তার সাথে সবসময় কৃষি সম্প্রসারণের যাবতীয় তথ্যাবলী পাওয়া যায়, তিনি সবসময় স্থানীয় কৃষি সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখেন। অভিজ্ঞ কৃষক কৃষি সর্ম্পকীয় যাবতীয় জ্ঞানে নিজের ভাণ্ডারপূর্ণ করে এবং অন্যদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে। যেমন- রাসায়নিক সারের ব্যবহার, পানি সেচ ও নিঃষ্কাশন, উচ্চ ফলন, ফসলের রোগ বালাই রোধ, পোকামাকড় নিধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা ইত্যাদি। এসকল অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য অভিজ্ঞ কৃষকেরা অধিকতর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৪। একজন কৃষক ও একজন কৃষি বিজ্ঞানীকে তুমি কীভাবে আলাদা করবে?
একজন কৃষক ও একজন কৃষি বিজ্ঞানী কখনোই এক নয়। একজন কৃষক মাঠে ফসল ফলানোর যাবতীয় কাজ করেন। আর একজন কৃষি বিজ্ঞানী কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপারে তার প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করে কৃষির যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। একজন কৃষক কৃষি বিষয়ে নানা ধরনের জ্ঞান থাকে। কোন সমস্যা সমাধান না হলে অন্যের সাহায্যও নিয়ে থাকেন। কিন্তু একজন কৃষি বিজ্ঞানী ফসলের জীবন থেকে মৃত্যুর সম্পূর্ণ চক্র পৃথক পৃথক ভাবে উপাস্থাপনের ক্ষমতা রাখেন এবং তার জ্ঞান ভাণ্ডার সবসময় পূর্ণ থাকে। তারা সবসময় নতুন ও উন্নতমানের ফসলি বীজ, সার ইত্যাদি উৎপাদন ও সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করে থাকে।


আরো দেখুন :

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post