সাধারণ জ্ঞান : আবহাওয়া ও জলবায়ু

↬ আবহাওয়া ও জলবায়ু

আবহাওয়া কাকে বলে? — কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহের দৈনন্দিন সামগ্রিক অবস্থাকে সেই দিনের আবহাওয়া বলে। 

জলবায়ু কাকে বলে? — কোন একটি অঞ্চলের সাধারণত ৩০—৪০ বছরের গড় আবহাওয়ার অবস্থাকে জলবায়ু বলে। 

আবহাওয়া সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে বলে — মেটিওরোলজি। 

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান ধরা হয় — বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আর্দ্রতা ও বারিপাত। 

জলবায়ুর নিয়ামক কী? — কিছু ভৌগোলিক বিষয়ের পার্থক্যের কারণে স্থানভেদে জলবায়ুর পার্থক্যে দেখা দেয়, মূলত এই বিষয়গুলোই হলো জলবায়ুর নিয়ামক। 

জলবায়ুর বিভিন্ন নিয়ামকের ভেতর অন্যতম নিয়ামক হলো — অক্ষাংশ, উচ্চতা, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত, পর্বতের অবস্থান, ভূমির ঢাল ইত্যাদি। 

পৃথিবীকে কয়টি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা যায় ও কী কী? — ৪ টি। যথা— উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল, মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল, পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চল। 

সমভাবাপন্ন জলবায়ু কী? — সমুদ্রের নিকটবর্তী এলাকয় শীত—গ্রীষ্ম এবং দিনরাতের তাপমাত্রার তেমন পার্থকয় থাকে না বলে এ ধরনের জলবায়ুকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে। 

চরমভাবাপন্ন বা মহাদেশীয় জলবায়ু কাকে বলা হয়? — সমুদ্র থেকে দূরবর্তী এলাকায় শীত—গ্রীষ্ম এবং দিনরাতের তাপমাত্রার পার্থক্যে যথেষ্ট পরিমাণে হয় বিধায় এ ধরনের জলবায়ুকে চরমভাবাপন্ন বা মহাদেশীয় জলবায়ু বলে। 

বায়ুর তাপের প্রধান উৎস কোনটি? — সূর্য। 

বায়ুমণ্ডলের মোট তাপের কত শতাংশ সূর্য থেকে আসে? — ৯৯.৯৭% 

সাধারণত প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতার জন্য কত সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়? — ৬° ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বায়ুর চাপ কী? — যে কোনো পদার্থের মতো বায়ু তার ওজনের জন্য যে চাপ প্রদান করে তাকে বায়ুর চাপ বলে। 

বায়ুর স্বাভাবিক বা আদর্শ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান কত? — ৪৫° অক্ষাংশের সমুদ্রপৃষ্ঠে ০° উষ্ণতায় ৭৬ সেমি. বিশুদ্ধ পারদস্তম্ভের চাপকে আদর্শ বা স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলে।

স্বাভাবিক বায়ুর চাপ কত ফুট অবধি পানিকে ধরে রাখতে পারে? — ৩৪ ফুট পর্যন্ত। 

সাধারন পাম্প দিয়ে পানিকে সর্বোচ্চ কত উচ্চতায় উঠানো যায়? — ৩৪ ফুট বা ১০.৩৬ মিটার। 

সমুদ্রে পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক। কিন্তু সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে উপরে উঠলে — যত উপরে যাবে ততো বায়ুর চাপ কমবে। 

তাপের সাথে বায়ুর চাপের সম্পর্ক — ব্যস্তানুপাতিক।

বায়ুমণ্ডলের চাপ পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী? — ব্যারোমিটার। 

বায়ুর চাপ থেকে আবহাওয়া জানার পদ্ধতি :
  • বায়ুচাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অতএব, বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • বায়ুর চাপ হঠাৎ কমে গেলে বুঝতে হবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকের বায়ু দ্রুতগতিতে ঐ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলশ্রুতিতে ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
  • বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমতেছে। অর্থাৎ আবহাওয়া উন্নতি হচ্ছে।  

বায়ুপ্রবাহ হলো — ভূপৃষ্ঠে সমান্তরাল বায়ুর চলাচল। 

ফেরেলের সূত্র (Ferrel's Law) বায়ুপ্রবাহ ব্যাখ্যা কর? — বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। 

নিয়ত বায়ু কাকে বলে? — যে বায়ু সব সময় উচ্চ চাপ অঞ্চল হতে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলে।

নিয়ত বায়ুর প্রকারভেদ আলোচনা কর। — ৩ প্রকার। যথা— অয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু এবং মেরু বায়ু। 

নিয়ত বায়ু প্রবাহের দিক :
বায়ু প্রবাহ উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ গোলার্ধে
অয়ন বায়ু উত্তর - পূর্ব দক্ষিণ - পূর্ব
মেরু বায়ু উত্তর - পূর্ব দক্ষিণ - পূর্ব
পশ্চিমা বায়ু দক্ষিণ - পশ্চিম উত্তর - পশ্চিম

সাময়িক বায়ু কী? — দিনের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে অথবা বছরের কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে যে বায়ুপ্রবাহ জল ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য সৃষ্টি হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলে। 

সমুদ্র বায়ুর বেগ কখন সবচেয়ে বেশি থাকে? — বিকালে (অপরাহ্ন)।

স্থলবায়ুর বেগ কখন সবচেয়ে বেশি হয়? — রাত ৩ টায়। 

মৌসুমী বায়ু কী? — ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হয়, তাকে মৌসুমী বায়ু বলে। 

অনিয়মিত বায়ুর উদাহরণ হলো — ঘূর্ণিবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণিবাত। 

বায়ুর আর্দ্রতা কী? — বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করাকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে। 

বারিপাত কী? — জলীয়বাষ্প উপরে উঠে শীতল বায়ুর স্পর্শে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়াকে বারিপাত বলে। 

তুষার (Snow) কাকে বলে? — তাপমাত্রা ০° সেলসিয়াস বা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে এবং পেঁজা তুলার ন্যায় ভূপৃষ্ঠে পড়াকে তুষার বলে। 

শিশির (Dew) কাকে বলে? — ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরের তাপমাত্রা হ্রাস পেলে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং অতিরিক্ত বায়ু তখন জলকণা রূপে ভূমিতে পড়াকে শিশির বলে। 

শীতপ্রধান এলাকায় ভূপৃষ্ঠের অত্যন্ত কমে গিয়ে শিশির জমাট বেঁধে কিসে পরিণত হয়? — তুহিনে (Frost).

বৃষ্টিপাত কাকে বলে? — স্বাভাবিকভাবে ভাসমান মেঘ ঘনীভূত হয়ে পানির ফোঁটা ফোঁটা আকারে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে বৃষ্টিপাত বলে।

বৃষ্টিপাতকে প্রধানত কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়? — ৪ টি। (পরিচলন, শৈলোৎক্ষেপ, বায়ু প্রাচীরজনিত এবং ঘূর্ণি বৃষ্টি)। 

বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্রের নাম কী? — রেইনগেজ (Rain Gauge)। 
 
সমবর্ষণ রেখা (Isohyets) কাকে বলে? — ভূপৃষ্ঠের সমান বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলগুলো মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা দেখানো হয়, তাকে সমবর্ষণ রেখা বলে। 

সূর্য হতে কোন প্রক্রিয়ায় তাপ পৃথিবীতে আসে? — বিকিরণ (Radiation)। 

সমান উষ্ণতাবিশিষ্ট অঞ্চলগুলোকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা সংযুক্ত করা হয় তাকে কী বলে? — সমোষ্ণরেখা।

ভূপৃষ্ঠের প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ — ১৪.৭২ পাউন্ড। 

স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের উপর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে বায়ুর চাপ পড়ে — ১৫ পাউন্ড। 

সমুদ্র পৃষ্ঠে প্রতি বর্গ সে.মি তে বায়ুর চাপ — ১০ নিউটন।

বায়ুর চাপ সাধারণত সবচেয়ে বেশি হয় কখন? — ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকলে।

সমবৃষ্টিপাত সম্পন্ন স্থানসমূহকে যোগকারী রেখাকে বলা হয়? — আইসোহাইট।

এশিয়ার যে অঞ্চলে সারা বছর পরিচলন বৃষ্টি হয় — মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। 

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় কোন স্থানে? — চেরাপুঞ্জিতে। 

বর্ষাকালে ভেজা কাপড় দেরীতে শুকায় কেন? — বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে বলে।

শীতকালে ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায় কেন? — বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে বলে।

শীতকালে ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেঁটে যায় কেন? — বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম বলে। 

আবহাওয়ার ৯০% আর্দ্রতা মানে কী? — বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ সম্পৃক্ত অবস্থায় ৯০%। 

আরব মরুভূমিতে প্রবাহিত বায়ুর নাম কী? — সাইমুন।

চট্টগ্রাম গ্রীষ্মকালে দিনাজপুর অপেক্ষা শীতল এবং শীতকালে উষ্ণ থাকে কেন? — সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাবে। 

মৌসুমী বায়ু সৃষ্টির মূল কারণ — উত্তর আয়ন ও দক্ষিণ আয়ন।

গর্জনশীল চল্লিশার অবস্থান কোনটি? — ৪০° দক্ষিণ থেকে ৪৭° দক্ষিণ। 

ব্যারোমিটার যন্ত্রের আবিষ্কারক হলেন — টরেসিলি। 

ব্যারোমিটারে কোন তরল পদার্থ গুলো ব্যবহার করা হয়? — পানি এবং পারদ।

গ্যাসের চাপ নির্ণায়ক যন্ত্র হলো — মনোমিটার।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post