ব্যাকরণ : ক্রিয়া পদ

ক্রিয়া পদ

১. আলম বই পড়ছে।
২. তোমরা আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

উপরিউক্ত বাক্য দুটিতে ‘পড়ছে’ এবং ‘দেবে’ পদ দুটো দ্বারা কোনো একটি কাজ সম্পাদন করা বোঝাচ্ছে। সুতরাং এরা হল পদ।

ক্রিয়া পদ : যে পদের দ্বারা কোনো কার্য সম্পাদন করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। আবার, অন্যভাবে বলা যায়— বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোনো পুরুষ কর্তৃক নিদির্ষ্ট কালে কোনো কার্যের সংঘটন বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। উপরের প্রথম উদাহরণে নাম পুরুষ 'আলম' দ্বারা বর্তমান কালের কাজ (পড়ছে) এবং দ্বিতীয় উদাহরণ মধ্যম পুুরুষ ‘তোমরা’ দ্বারা ভবিষ্যত ক্রিয়া সংঘটনের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে।

অনুক্ত ক্রিয়াপদ : ক্রিয়াপদ বাক্য গঠনের অপরিহার্য উপাদান। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোনো মনোভাবই সম্পূর্নরূপে প্রকাশ করা যায় না। তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন—

ইনি আমার ভাই = ইনি আমার ভাই (হন)।
আজ প্রচন্ড গরম = আজ প্রচন্ড গরম (অনুভূত হচ্ছে)।
তোমার মা কেমন? = তোমার মা কেমন (আছেন)?
বাক্যে সাধারণত ‘হু’ এবং ‘আছ’ ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে।

ক্রিয়ার প্রকারভেদ

বিবিধ অর্থে ক্রিয়াপদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।

১. ভাব প্রকাশের দিক থেকে ক্রিয়াপদকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
  • সমাপিকা ক্রিয়া এবং
  • অসমাপিকা ক্রিয়া।

(ক) সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রয়োগ করলে বাক্যের অর্থ সম্পূর্নরূপে ব্যক্ত হয়, অন্য ক্রিয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন— ছেলেরা খেলা করছে। আমি ঢাকায় যাব। এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

(খ) অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া প্রয়োগ করলে বাক্যের অর্থ সম্পূর্নরূপে ব্যক্ত হয় না, বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকে, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন—

১. আমি ভাত খেয়ে .........................
২. প্রভাতে সূর্য উঠলে ........................
৩. আমরা বিকেলে খেলতে ..................

এখানে, খেয়ে, উঠলে এবং খেলতে ক্রিয়াপদগুলো দ্বারা কথা শেষ হয়নি, কথা সম্পন্ন হতে আরো শব্দের প্রয়োজন আছে।তাই এগুলো যে ক্রিয়া প্রয়োগ করলে বাক্যের অর্থ সম্পূর্নরূপে ব্যক্ত হয়, অন্য ক্রিয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া। সুতরাং বাক্যগুলো পূর্ণ করলে এমন হতো—

১. আমি ভাত খেয়ে স্কুলে যাব।
২. প্রভাতে সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হয়।
৩. আমরা বিকেলে খেলতে না গিয়ে বাজারে যাব।

অর্থভেদে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া ২ ভাগে বিভক্ত। যথা—

১. সকর্মক ক্রিয়া
২. অকর্মক ক্রিয়া।

(১) সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্মপদ আছে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। (ক্রিয়ার সাথে কী বা কাকে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা—ই ক্রিয়ার কর্মপদ।) যেমন— বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন।

প্রশ্ন : কী দিয়েছেন? উত্তর : কলম (কর্মপদ)।
প্রশ্ন : কাকে দিয়েছেন? উত্তর : আমাকে (কর্মপদ)।

(২) অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্মপদ নেই, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন— মেয়েটি হাসে। ‘কী হাসে’ বা ‘কাকে হাসে’ প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর হয় না। কাজেই ‘হাসে’ ক্রিয়াটি অকর্মক ক্রিয়া।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া : কতিপয় ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। এর বস্তুবাচক কর্মপদটিকে মুখ্য বা প্রধান কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদটিকে গৌণ কর্ম বলে। যেমন— বাবা আমাকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন। বাক্যটিতে ‘কলম’ একটি বস্তু তাই এটি মুখ্যকর্ম এবং ‘আমাকে’ ব্যক্তিবাচক পদটি গৌণ কর্ম। এরকম আরো উদাহরণ —

১. স্বপনকে সংবাদ দাও। (স্বপন = গৌণ এবং সংবাদ = মুখ্য কর্ম)।
২. কাজল তোমাকে একটি গল্প বলেছে। (কাজল = গৌন এবং গল্প = মুখ্য কর্ম)।

প্রশ্ন : দুটি কর্মই ব্যক্তিবাচক বা বস্তুবাচক হলে ক্রিয়া কি দ্বিকর্মক হবে?
উত্তর : দুটি কর্মই ব্যক্তিবাচক বা বস্তুবাচক হলে ক্রিয়া দ্বিকর্মক হবে না। যেমন —

১. মা ছেলে ও মেয়েকে আদর করছেন।
২. মালি গোলাপ ও জবা ফুল তুলছে।

উপরিউক্ত বাক্য দুটিতে করছেন এবং তুলছে ক্রিয়া দুটো দ্বিকর্মক নয়। আসলে এখানে দুটো করে বাক্য আছে। বাক্যগুলো আসলে এমন হতো—

১. মা মেয়েকে আদর করছেন। মা ছেলেকে আদর করছেন।
২. মালি গোলাপ ফুল তুলছে। মালি জবা ফুল তুলছে।

সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের ক্রিয়া এবং কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে ওই কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্মপদ বলে। যেমন— প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে। এমন খেলা সে খেলেছে!

প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার অন্যকে দিয়ে করানো বা সংঘটন বোঝায়। সংস্কৃতে একে ণিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন— মা শিশুকে পড়াচ্ছেন। সে ঝাঁড়ুদার দিয়ে মাঠ পরিষ্কার করাবে

আজিবুল হাসান

Related Links
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post