সময়কে আমি নষ্ট করেছি; সময় নষ্ট করছে আমায়

আমরা যারা পড়াশোনা করতেছি অথবা যারা পড়াশোনা শেষ করেছি কিন্তু চাকরী করছি না এই দুই ধরনের মানুষ গুলো যতো সহজে যতটা অবজ্ঞা করে সময় নষ্ট করি পৃথিবীর আর কোনো শ্রেণীর মানুষ সময়কে এতোটা হেয় করে না। প্রকৃতির খুব সুইট একটা রিভেঞ্জ হল: সময়কে নষ্ট করলে একসময় সময়ই তোমায় নষ্ট করবে। আমরা যারা এই দুই শ্রেণীর মধ্যে পড়ি তারা বর্তমানে অফুরন্ত সময় পার করতেছেন কোনো রকম গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ছাড়া। এই অগণিত সময়গুলো কি কাজে ব্যয় করলেন কোনো হিসাব রেখেছেন তো! মনে রাখুন— প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলা একদিন থেমে যাবে। মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। আর এই সুইট মোমেন্টসে গোটা বিশ্বে দক্ষ জনবল নিয়োগের এক বিশাল সুযোগের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হবে। তাই যা গেছে যাক কিন্তু যেটুকু এখনো অবশিষ্ট আছে তা কাজে লাগান। সময়ের কাটা পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে বদলাতে থাকুন। এমন সময়ে কি করতে পারেন এমন কিছু আইডিয়া শেয়ার করছি:—

।।এক।।
যারা শিক্ষার্থী আছেন তারা সময়গুলো অযথা নষ্ট না করে আপনার ব্যবহৃত সময়কে অর্থবহ করে তুলুন। আপনার পড়াশোনায় বেশি বেশি সময় দিন। পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে আপনার দক্ষতা বাড়িয়ে ফেলুন। এসবের পাশাপাশি আপনি আপনার মনের ভেতরের সখগুলো পূরণ করতে পারেন। যেমন ধরেন, আপনার বাগান করার খুব সখ ছিলো। কিন্তু সময়ে অভাবে তা করতে পারেন নি। তাই এই সুযোগে নাহয় বাগান করে ফেললেন। গাছগাছালি সবুজতা আমাদের মনকে বর্ণিল রঙ্গে সাজিয়ে তোলে। প্রকৃতির ছোঁয়া পেলে মানব মন পবিত্র ও শান্ত হয়ে পড়ে। এতে আপনার মানসিক অনেক স্ট্রেস কমে যাবে এবং আপনার মনে পজিটিভ থটগুলো উদয় হতে থাকবে। কাজেই চাইলে একটা বাগান করে ফেলতে পারেন বাড়ীর ছাদে, কার্ণিশে কিংবা জানালার পাশে একটুখানি জায়গায়।

।।দুই।।
মেয়েরা চাইলে এসময় অনেক কিছু করতে পারেন। আমাদের সমাজে মেয়েদের অফ সাধারণত খুবই কম সময় থাকে। কারণ তাদের বাহির ভেতর দুটোই সমানতালে সামলানো লাগে। তাই আপনি এই সময়ে আপনার রান্নার হাত ভালো করতে পারেন। নেট থেকে মজার মজার রেসিপি দেখে সেগুলো চেষ্টা করতে পারেন। আবার আপনার যদি ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি কোনো প্যাশন থেকে থাকে তো এসময়ে তা পূরণ করতে পারেন। আজকাল অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স অফার করতেছে ফ্যাশনের উপরে। আপনি চাইলে এগুলো থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খুলে ফেলতে পারেন আপনার অনেকদিনের স্বপ্ন আপনার চাওয়া নিয়ে একটা সুন্দর শপ কিংবা অন্যকিছু।

।।তিন।।
আমরা যারা পড়াশোনার বাহিরে বিভিন্ন ধরনের বই যেমন: গল্প, উপন্যাস, নাটক, ভ্রমণকাহিনী সহ নানারকম থ্রিলার সিরিজ কিংবা নানা রকম মজার এপিসোড নিয়ে সাজানো হাজারো রকমের বই পড়তে ভালোবাসি কিন্তু সময়ের কারণে পারি না।তারা এখন এই সময়ে এসব একটু একটু করে পড়তে পারেন। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হয়েছে যে প্রয়োজন না পড়লে আমরা কিছুই পড়তে চাইনা। বাংলা সাহিত্যের সেরা প্রবন্ধক প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন —"এদেশে লাইব্রেরীর গুরুত্ব হাসপাতালের চাইতে কিছু অংশে কম নয়।" কথাটা আসলেই সত্যি। কারণ আমরা যতো শিক্ষিত হচ্ছি আমরা ততো অমানুষে পরিণত হচ্ছি। আমাদের বিবেক–বোধ বিচার করার মনমানসিকতা ততো বেশি কমে যাচ্ছে। তাই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে একজন সত্যিকার মানুষ রূপে নিজেকে গড়তে হলে আপনাকে বই পড়তে হবে।

।।চার।।
যারা চাকুরীর জন্যে ছোটাছুটি করি কিন্তু চাকুরী পাইনা। তারা শুধু আক্ষেপ করেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। কখনো নিজে থেকে বলি না আমার এইসব যোগ্যতা আর সবার যা আছে আমারো সেইম। আমাকে অন্য দশজন থেকে আলাদা করা না গেলে অন্য দশজন থেকে আলাদা করে আমায় চাকুরী কেন দিবে। তাই আপনার সিভিতে আপনার দক্ষতা বাড়ান। আপনার স্কিল ডেভেলপমেন্ট গুলো সিভিতে বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনার অযোগ্যতা গুলো যোগ্যতায় পরিণত করুন। এসময় আপনি চাইলে: মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট এসব শিখে ফেলতে পারেন। আবার চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন। অনেকে বলে থাকে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেকে পরিবর্তন করা সম্ভব। হ্যা— কথাটা একদম সত্য। আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন এবং এর থেকে আয় করতে পারেন। এজন্য আপনি ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং সহ নানারকম কাজগুলো শিখে একজন সফল মার্কেটার হতে পারেন। আজকাল এগুলোর জন্য অনেক কোর্স অফার করা আছে। আপনি চাইলে ইউডেমী, কোর্সেরাহ সহ গুগলের বিভিন্ন ডকের কোর্সগুলো করতে পারেন। যা আপনার ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে লাগবে।

।।পাঁচ।।
আপনি যদি ভালো মানের বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস কিংবা অনেক ভালো শিক্ষামূলক–বিনোদনমূলক লেখা লিখতে পারেন তাহলে চাইলে নিজেই নিজের একটা ব্লগ সাইট খুলে সেখান থেকে আয় করতে পারেন। অথবা আপনার লেখাগুলো দিয়ে কোনো প্রকাশনার কাছে যেতে পারেন। কে জানে আপনিই আগামীর সেরা গল্পকার হলেও হতে পারেন। আবার অনেকের সংগীতের প্রতি আলাদা একটা দুর্বলতা কাজ করে থাকে। তাই আপনি চাইলে এসময় বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখে ফেলতে পারেন। পাশাপাশি ইউটিউবে আপনার নিজস্ব চ্যানেল খুলে তাতে আয় করতে পারেন। সঙ্গে যদি আপনার দারুণ কন্ঠসর থাকে তো তাহলে নিজেই বিভিন্ন গানের ভয়েস দিতে পারেন।

।।ছয়।।
অবসরের এই সময়ে আপনার নিজেকে আরেকবার ঝালিয়ে নিতে পারেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজ শেখার কাজে। আমাদের দেশে ইংরেজির অনেক ডিমান্ড। আর তাই আপনি এসময়ে ইংলিশ স্পোকেন কোর্স শিখতে পারেন। আবার চাইলে নিজে নিজে শিখতে পারেন এবং বিভিন্ন সাব–টাইটেল মুভি দেখে প্রাকটিস করতে পারেন। সুন্দর সাবলিলভাবে ইংরেজি বলতে পারা ও ইংরেজি ভালো জানা থাকলে আপনি অনেক বড় বড় সেক্টরে জব পেতে পারেন। চাইলে বিভিন্ন ইংরেজি বিষয়ক কোর্স আইএলটিএস কিংবা জিআরই করতে পারেন। আবার ইন্টারভিউ বোর্ডের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারভিউ সংলাপ দেখে নিজেকে প্রিপায়ারড করতে পারেন। যেমন: আপনার নিজের সম্পর্কে জানা আপনার ৫/৬ টি দোষ কিংবা গুণ জানা এবং সেগুলোর সুন্দর ব্যাখ্যা জানা, আপনি কেন এই জবের যোগ্য এগুলোর খুব সুন্দর উত্তর গুলো প্রতিনিয়ত অনুশীলন করতে পারেন।

সময়কে মূল্য দিতে পারলে সময় আপনাকে মূল্য দিবে। তাই জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে কে কাজে লাগান। বর্ণিল হোক আপনার জীবন আর পূর্ণতা পাক আপনার সকল চাওয়া!
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post