অনুচ্ছেদ : বৈশ্বিক জলবায়ু এবং বাংলাদেশ

বৈশ্বিক জলবায়ু এবং বাংলাদেশ


একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে, ঠিক তখনই পরিবেশ আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দিকে। পরিবেশে দেখা দিয়েছে “জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন”। পরিবেশের এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত আমরাই দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস জমা হওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এসব গ্যাস তাপ শোষণ করে। ফলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ মারাত্মকভাবে বাড়তে থাকার কারণে পৃথিবী দিন দিন উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইতোমধ্যেই এশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইসিপিপি) সতর্ক করে জানিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যেই হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে যেতে পারে যা বিশ্ববাসীর জন্য এক ভয়াবহ বার্তা বয়ে আনবে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউ এমও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আট লাখ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ২০১৬ সালে নির্গত হওয়া কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ সর্বোচ্ছ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। জেমস হ্যানসেনের মতে, গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি বেড়ে গেলে আমরা আমাদের সৈকত ও উপকূলীয় শহরগুলো হারাব। তিনি আরও বলেন, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় যে হারে বরফ গলছে তাতে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক মিটার বেড়ে যেতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলীয় জোয়ারের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমাদের সুন্দরবন ও হাওর অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে বিপর্যয় দেখা দেবে। অসময়ে হঠাৎ বন্যা, পাহাড়ধস, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘনঘন দেখা দেবে। বৈশ্বিক আবহাওয়ায় বাংলাদেশের দূষণ নগণ্য। কিন্তু দূষণের তীব্রতা ও ক্ষতি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে বাংলাদেশে। বৈরী আবহাওয়ার ফলে আমাদের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবুও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।


1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post