ভাবসম্প্রসারণ : হাতে কাজ করায় অগৌরব নেই, অগৌরব হল মিথ্যায়, মূর্খতায়।

হাতে কাজ করায় অগৌরব নেই, অগৌরব হল মিথ্যায়, মূর্খতায়।

ভাব-সম্প্রসারণ : নিজের কাজ নিজে করার মধ্যে রয়েছে আত্মতৃপ্তি, গৌরব; মিথ্যায় কিংবা মূর্খতায় কোনো গৌরব নেই।

আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নিজের কাজ নিজে করাটাকে ছোট হওয়া মনে করে। নিজের কাজ নিজে করে জীবনে উন্নতি লাভ করার চেয়ে এসব মানুষ মিথ্যা আর মূর্খতায় নিজের গৌরব বৃদ্ধি করাতে চায়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ ও অন্যায়ভাবে টাকা উপার্জন করে জীবনের শ্রী-বৃদ্ধিটাকে এরা গৌরবজনক মনে করে। মূর্খতা এদের কাছে অভিশাপ মনে হয় না। অথচ নিজের কাজ নিজে করার মধ্যেই প্রকৃত গৌরব নিহিত। অন্যের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়া, চুরি করা কিংবা অবৈধ কিছু করার চেয়ে খেটে খাওয়া অনেক ভাল। কাজ, তা যা-ই হোক, কাজ করার মধ্যে কোনো অসম্মান নেই। শ্রমজীবী মানুষই নতুন সভ্যতার কারিগর। তাদের ঘামে ও শ্রমেই প্রোথিত বিলাসী জীবনের ভীত। পৃথিবীতে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছে তাঁরা সবাই নিজের কাজ নিজেই করেছে। অন্যদিকে মিথ্যা মূর্খতায় অন্যায়ভাবে যারা নিজেদের জীবনের গৌরবকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে তাদের পতন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সংকীর্ণমনারাই কাজের শ্রেণীবিন্যাস করে উঁচু-নিচু ভেদাভেদ সৃষ্টি করে থাকে। হাতে কাজ করায় অগৌরব নেই, অগৌরব হল মিথ্যায়, মূর্খতায়। বস্তুত যারা মূর্খ তারাই হাতের কাজকে অগৌরব মনে করে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মানুষের জীবন কর্মমুখর। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই কোনো না কোনো কর্মে ব্রতী হতে হয়। জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হলে অর্থোপার্জনের প্রয়োজন হয়। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্যের পরিধেয় বস্ত্রের এবং আরও অসংখ্য জিনিসের প্রয়োজন। যে যত পরিশ্রম করে ততই তার উন্নতি হয়। তাই দেখা যায়, জীবনের সাথে পরিশ্রমের একটা বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। মানুষে মানুষে শিক্ষা ও যোগ্যতার যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এ পার্থক্যের জন্য মানুষের জীবিকার্জনে শ্রমের পরিমাণগত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। কেউ অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হয়, আবার কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না। শ্রমের তারতম্যের জন্য মানুষের সামাজিক মর্যাদায় পার্থক্য দেখা দেয়। কোনো ব্যক্তি যোগ্যতার অভাবে নিচু স্তরের কাজ করে থাকে। আবার কেউ যোগ্যতার জন্য উঁচু স্তরের কাজ করে থাকে। যোগ্যতার তারতম্যের জন্য কাজের তারতম্য ঘটলেও সকল শ্রেণির কর্মীরই প্রয়োজন রয়েছে। কোনো ধরনের কায়িক শ্রমই ঘৃণার নয়। অথচ অনেকের ধারণা কাজকর্ম হতে হাত গুটিয়ে রাখলে সম্মান বেশি পাওয়া যায়। অনেক শিক্ষিত লোক আছেন যারা অশিক্ষিত লোকদের কাজকে অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকেন- এটি ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে হাতে কাজ করায় কোনো অগৌরব নেই, অগৌরব হয় মিথ্যায় ও মুর্খতায় ৷
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post