মার্চের দিনগুলি

খনার বচন


স্বপ্ন তত্ত্ব : ব্যাধিগ্রস্ত, ক্ষুধিত চিন্তাক্লিষ্ট ব্যক্তির স্বপ্ন সাধারণত : বিফল হয়। প্রথম রাত্রিতে ও শেষ রাত্রিতে স্বপ্ন প্রায়ই বিফল হয়। গভীর রাতে স্বপ্ন দেখিয়া আর নিদ্রা না গেলে এবং স্বপ্নতত্ত্ব কাহারও নিকট প্রকাশ না করিলে ফল লাভ হয়। সাধারণত : তিথি হিসাবে স্বপ্ন ফলে। যথা- শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া, চতুর্থী, দশমী ও একাদশীর স্বপ্ন ফলে। স্বপ্নে দেবমন্দির, ফকির, দরবেশ, নৌকা, সর্প, ধন দৃষ্ট হইলে শুভ জানিবেন। অগ্নি, রক্তপাত, মৃতব্যক্তি প্রভৃতি অসুখ ও দুর্গতির কারণ। হিংস্র পশু দৃষ্ট হইলে বিপদের পূর্বাভাষ জানিবেন।

বিবাহ তত্ত্ব : শনি ও মঙ্গলবারে বিবাহ যে করে। সে দম্পতি অতি দঃখী হয় ধরা পরে। চৈত্র আ পৌষ মাস করিলে বর্জ্জন। বিবাহেতে সুখ লাভে নর নারীগণ। জন্ম বারে বিবাহ সে দুঃখের কারণ। অমাবস্যা বিষ্টি ভদ্রা রিক্তাতে বারণ। মাতাপিতা গুরুজনে লয়ে অনুমতি, বিবাহ করিলে সুখী হয় সে দম্পতি। শুভদিনের অভাব কভু যদি হয়। গোধুলি লগ্নেতে বিয়া করিবে নিশ্চয়।

তিল তত্ত্ব : জার্ম্মাণ জ্যোতিষ (Cabinet of Curiosities) হইতে গৃহীত। ললাটের দক্ষিণপার্শ্বে নাসার উপরে তিল থাকিলে দৈবধন ও যশোলাভের সম্ভাবনা। নেত্রের নিম্নে তিল অধ্যবসায়ীর চিহ্ন। গণ্ডস্থলে তিল থাকিলে কখনই ধনশালী হয় না। নিম্নস্থ উপর ওষ্ঠের তিল বিলাসিতা ও প্রেমিকতার চিহ্ন। কণ্ঠের তিল বিবাহ দ্বারা ধনলাভ প্রকাশ করে। বক্ষস্থ তিল সুস্থদেহ ও ভাগ্যের পরিচায়ক। দক্ষিণপঞ্জরস্থ তিল হীনবুদ্ধির চিহ্ন। উদরের তিল পেটুক, অর্থপর ও পরিচ্ছদ-প্রিয়তার চিহ্ন। হৃদয়ের বিপরীত দিকস্থ তিল নৃশংসতার চিহ্ন। দক্ষিণবাহুস্থ তিল দৃঢ়দেহ ও ধৈর্য্যশীলতার চিহ্ন। কণ্ঠস্থ তিল ধৈর্য্যশীলতা, বিশ্বাস ও ভক্তিমানের চিহ্ন। ভ্রু-নিম্নস্থ তিল জীবনব্যাপী দুঃখ-দারিদ্র্যের পরিচায়ক। ললাটের বামপার্শ্বস্থ (কেশের নিকট) দুঃখ ও অসচ্চরিত্রতার চিহ্ন। ললাটের বামপার্শ্বস্থ তিল অপব্যয়, নিন্দা ও অখ্যাতি ঘোষণা করে। নাসিকার দক্ষিণ পার্শ্বের (চক্ষুর দিকের) তিল দীর্ঘজীবী, ধনবান ও অধ্যবসায়ীর চিহ্ন। নাসিকার বামপার্শ্বের তিল নিধনী, অপব্যয়ী ও মূর্খের পরিচায়ক। বক্ষঃস্থলের মধ্যম সরোম তিল বিদ্বান ও কবিত্বশক্তির চিহ্ন। দক্ষিণপদের তিল জ্ঞানের পরিচায়ক। বামগন্ডের তিল দাম্পত্য-প্রেমে সুখী ও অসৌভাগ্যের চিহ্ন। কর্ণমধ্যস্থ তিল ভাগ্য ও যশের চিহ্ন।

যাত্রা পরিজ্ঞান : বারবেলা কালবেলা দুয়ে পরিহরি। করিবেক শুভ যাত্রা স্মরিয়া শ্রীহরি। শনি ও বৃহস্পতিবারের শেষ বেলা। যাত্রাতে কার্যের নাশ করিও না হেলা। মাহেন্দ্র অমৃতযোগে যেই যাত্রা করে। সর্ব কার্য সিদ্ধি তার হয় ধরা পরে। শুভদিনের অভাব যদি কভু হয়। ঊষা-গোধুলিতে যাত্রা করিবে নিশ্চয়। কিন্তু ঊষাকালে পূর্বদিকেতে নিষেধ। গোধুলি পশ্চিমে যাত্রা দেয় অতি খেদ। দিক্ শূলে যাত্রা হয় মৃত্যুর কারণ। সেই হেতু ত্যাগ তাহা করে জ্ঞানীগণ। শুরুর আদেশ যেই যাত্রাকালে লয়। সর্বকার্য সিদ্ধ হয়ে সেই-সুখী হয়। স্বর্ণ-রৌপ্য-হস্তী-গাভী-ধর্ম-পত্নী আর। পুষ্পমালা ও পতাকা দৃষ্ট হয় যার। যাত্রায় তাহার বাঞ্ছিত সফল। জ্যোতিষের মতে এই কথাই নিশ্চল। নাসিকার যেই রন্ধ্রে শ্বাস বায়ু বয়। সেই পদ অগ্রে ভূমে বাড়বে নিশ্চয়। তাহাতেই শুভ ফল লভি যাত্রিগণ। কার্যসিদ্ধি হয়ে হবে আনন্দে মগণ।

দিক্‌শূল কথন : শুক্র আর রবিবারে পশ্চিমেতে শূল। মঙ্গল ও বুধে হয় উত্তরে নির্ভুল। পূর্বদিকে শনি আর সোমবারে হয়। গুরুবারে দিকশূল দক্ষিণে নিশ্চয়। এই দিকশূল ত্যাগ করি সর্বজন। যাত্রা করি যথা ইচ্ছা করিবে গমন।

সঙ্কলক- শ্রীমদ বষ্ণুদাস গীতাভারতী, পোঃ বরাতিয়া, খুলনা।

হাঁচি ও টিকটিকির ফল : টিকটিকি খনার জিহ্বা ভক্ষণ করিয়াছিল বলিয়াই তাহার শব্দে শুভা-শুভ নির্ণীত হয়।

শয়নে, ভোজনে, উপবেশনে, দানে, বিবাহে ও নববস্ত্র পরিধানে হাঁচি, শুভফল প্রদান করে। শিশুর হাঁচি, বৃদ্ধের হাঁচি, অসুস্থ ব্যক্তির হাঁচি অশুভ। গোধনের হাঁচি মৃত্যুর কারণ হয়; পূর্বদিকে ও দক্ষিণ দিকে টিকটিকির শব্দ হইলে অমঙ্গল ও অশুভ জানিবে। অগ্নিকোণে ও ঈশানের শব্দ বিপদের কারণ, এতদ্ভিন্ন শুভ।

চক্ষুর নৃত্য (স্পন্দন) : ডানচক্ষুর উপরিভাগ এবং বাম চক্ষুর নিম্নভাগ স্পন্দিত হইলে শুভবার্তা ও আত্মীয়স্বজনের আগমন বুঝায়। বিপরীতভাবে স্পন্দিত হইলে অশুভ ফল দেয়।

খনার মতে শস্যফলন, বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি ইত্যাদি

যদি বর্ষে আগনে
রাজা যান মাগনে।

যদি বর্ষে পৌষে
কড়ি হয় তুষে।

যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।

যদি বর্ষে ফাল্গুনে
চিনা কাউন দ্বিগুণে।

মাঘ মাসে বর্ষে দেবা
রাজ্য ছেড়ে প্রজার সেবা।

জ্যৈষ্ঠে শুকনা আষাঢ়ে ধারা
শস্যের ভার না সহে ধরা।

পাঁচ রবি মাসে পায়
ঝরা কিংবা খরায় যায়।

চৈত্রমাসে পাঁচ শনি
ধরায় হয় হাহাকার ধ্বনি।

পূর্ণিমায় আমায় যে ধরে হাল
তার দুঃখ চিরকাল।

তার বলদের হয় বাত
নাহি থাকে ঘরে ভাত।

শুভক্ষণ দেখে করবে যাত্রা
পথে যেন না হয় অশুভ বার্তা।

কর গিয়ে আগে দিক নিরূপণ
পূর্বদিক হতে কর হাল চালন।

তাহলে তার সমস্ত আশা
হইবে সফল নাহিক সংশয়।

ষোল চাষে মুলা,
তার অর্ধেক তুলা;
তার অর্ধেক ধান,
বিনা চাষে পান।

খনার মতে বৃষ্টি গণনা : দিবাতে জল রাত্রিতে তারা। তাহাতেই দেখবে শুকোয়ধরা। পৌষে গরমী বৈশাখে জারা। প্রথম আষাঢ়ে ভরবে গাড়া। বলেন খনা শুনহ সকল। শ্রাবণ ভাদ্রে নাইকো জল। যদি উঠে পূর্বে কাড়। ভাঙ্গা ডোবা একাকার। চাঁদের সভায় মধ্যে তারা। বর্ষে বৃষ্টি মুষল ধারা। দূরের সভা নিকটে জল। নিকটে সভা রসাতল। পশ্চিমের ধনু নিত্য খড়া। নিকটের ধনু বর্ষে ধারা।

ক্ষৌর কর্মে নিষিদ্ধ বার : বৃহস্পতিবারে মানহানি, শুক্রবারে শুক্রহানি, রবিবারে ধনহানি, মঙ্গলবারে আয়ু-ক্ষয়, শনিবারে মানাদি সমালের নাশ হয়। কিন্তু সামবেদীয় মঙ্গলবারে, যজুর্বেদীয় শুক্রবারে ক্ষৌরকার্য্য বিহিত আছে। অশৌচান্তাদি কারণবশতঃ নিষিদ্ধ দিনেও ক্ষৌরকার্য্য করিবে। নাপিতের বাড়ী গিয়ে ক্ষৌরকার্য্য করাইতে নাই।

আরো কিছু:
ভরা হতে শূন্য ভালো যদি ভরতে যায় ,
আগে হতে পিছে ভালো যদি ডাকে মায় ।।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post