রচনা : আমার পরিচিত একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনচরিত

(অত্র জীবনীটি একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর হোসেন ভূঁঞার সাক্ষাৎকার থেকে প্রণীত হয়েছে। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একজন ছাত্র।)

সূচনা : আমার নাম সোহাগ। আমি সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি। আমি ১০ম শ্রেণির একজন ছাত্র। আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম মীর সোহেন ভূঁঞা। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন গেরিলা মান্ডার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন কমান্ডার আর এখন স্বাধীনদেশের একজন বিদ্যানুরাগী প্রধান শিক্ষক রূপে আমি তাঁকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। তিনি সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং ফেনীর উত্তর পূর্বাঞ্চলে নারী শিক্ষা বান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন।

নাম ও বংশ পরিচয় : আমার সাথে যে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পরিচয় রয়েছে তিনি হচ্ছেন মীর হোসেন ভূঁঞা, পিতা মৃত কালা মিয়া ভূঁঞা মাতা বেগম আছিয়া খাতুন। তিনি ১৯৪৮ইং সনে ফেনী সদর উপজেলাধীন কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত, মুসলিম, তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাড়ির নাম আসক ভূঁঞা বাড়ি। তিঁনি তাঁর বাড়ির সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিত মর্যাদাশালী ও উচ্চ মাপের সম্মানিত মানুষ।

শৈশবকাল ও প্রাথমিক শিক্ষা : জন্মের পর তিনি শৈশবকাল মাতৃকোলে আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাটিয়েছেন। বাড়ির পাশের সোনাপুর প্রাইমারি স্কুল। তখন স্কুলটি সরকারী হয়নি। গ্রামের মানুষের কাছে স্কুলটি নানা নামে পরিচিত ছিল। কেউ বলতে ননামিয়া পন্ডিতের স্কুল আর কেউ বলত কালিয়ার তল স্কুল। এ স্কুলে মীর হোসেন ভূঁঞা তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

পরবর্তী শিক্ষাকাল : প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ফেনী পাইলট হাই স্কুলে ভর্তি হন। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে তার পিতৃবিয়োগ হয়। এরপর তিনি ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন করৈয়া বহুপার্শিক উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৬৪ সনে মেট্রিকুলেশান পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু বাড়ির কাছে ফেনী পলিটেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ফেনীতে স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসেন। ফেনীতে চলে আসার পর কারিগরি শিক্ষায় অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য নিরসনের জন্য কারিগরি ছাত্র আন্দোলনে যোগ দান করেন। সেদিনকার কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের মূল দাবি ছিল কারিগরি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানকে স্কুলের স্থলে কলেজ বা ইনিস্টিটিউশনের মর্যাদায় উন্নীতকরণ এবং যারা ডিপ্লোমা অর্জন করবে তাদেরকে কর্মস্থলে সুপারভাইজার পদবীকে ইঞ্জিনিয়ারের পদমর্যাদায় উন্নীত করতে হবে। এ সময়ে মীর হোসেন ভূঁঞা ফেনী পলিটেকনিক্যাল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সে সময়ে কারিগরী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করায় মীর হোসেন ভূঁঞা সহ আরো অনেককেই কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করে। তিনি তার উপর বহিষ্কারাদেশ থাকা কালীন সময়ে ফেনী কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা স্যার সলিমুল্লাহ্ কলেজ থেকে ১৯৭২ সনে বি.এ. পাস করেন। বি.এ. পাস এর পর তিনি ঢাকা জগন্নাথ কলেজে এম.এ. ক্লাসে ভর্তি হন। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শেষ করার ঠিক পূর্বেই মহসীন হলে একদিন হঠাৎ রাতের বেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নারায়নগঞ্জের কহিনুর সহ সাতজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নির্মমভাবে নিহত হন। এ ঘটনার ভয়ে আতঙ্কে মীর মোসেন ভূঁঞা জগন্নাথ কলেজ ত্যাগ করে ফেনী চলে আসেন। এরপর তারপক্ষে আর মাস্টার ডিগ্রি অর্জন সম্ভব হয়ে উঠেনি। তিনি কর্মজীবনে ১৯৮৪-৮৫ সনে ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষা বর্ষে ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক জীবন : মীর হোসেন ভূঁঞা ছাত্রজীবন থেকেই বামপন্থী রাজনৈতিক ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং ফেনীর বামপন্থী নেতা মাওলানা ওয়াজেদ উদ্দিনের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ১৯৬৪ সনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধি আন্দোলন, ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে শসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ফেনী শহর শাখা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে ফেনী স্টেশন রোডে বেছুমিয়ার চা দোকানে হামলার ঘটনায় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়লে তিনি ফেনী ছেড়ে ঢাকা চলে যান। ঢাকা গিয়ে এক আত্মীয় মামার সুপারিশে হাবিব ম্যাচ ইন্ডাট্রি নামে একটি কারখানায় সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। সে সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে তুমুল গণআন্দোলন চলছিল। মীর হোসেন ভূঁঞার নেতৃত্বে হাবিব ম্যাচ ইন্ডাট্রির শ্রমিক কর্মচারীরা এবং আরও অন্ততঃ দশ বারোটি ইন্ডাট্রির নেতা কর্মীরা হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী নিয়ে তৎকালীন বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা কটন মিল খুলে দেওয়ার দাবিতে লেবার অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করে এবং স্মারকলিপি প্রদান করে। মিছিল স্লোগান চলা অবস্থায় সারা ঢাকায় খবর এসে পৌঁছায় যে, পাকিস্তান সরকার ৫ মার্চ এর গণপরিষদের অধিবেসন স্থগিত করেন। এ খবর প্রচারিত হলে সারা ঢাকা শহর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্দ ঢাকাবাসীর হাজার হাজার খণ্ড মিছিলের ভেতর সে দিনকার শ্রমিক কর্মচারীর মিছিল একাকার হয়ে যায়। তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ তৎকালীন রেসর্কোস ময়দানে নিজে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন এবং মিছিল শ্লোগান সহ রেসর্কোসের জনসভাকে সফল করতে আত্মনিয়োগ করেন। তারপর থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তৎকালীন বঙ্গভবন, বায়তুল মোকারম, প্রেসক্লাব এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাজপথ মিছিল স্লোগানে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু মায়ের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ২৪ মার্চ তিনি ফেনী আগমন করেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তান বাহিনী ঘুমন্ত ঢাকা বাসীকে হামলা চালালে পাশাপাশি একই দিন পাকিস্তান বাহিনীর কতিপয় সামরিক অফিসার ফেনীর তৎকালীন সি.ও. অফিস কার্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। তখনকার ফেনীর রাজনীতির কর্ণধার খাজা আহম্মদের নেতৃত্বে সমগ্র ফেনীবাসীকে নিয়ে সি.ও. অফিস ঘেরাও করা হয়। সি.ও. অফিস ঘেরাও আন্দোলনে মীর হোসেন ভূঁঞাও স্বক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে ফেনীবাসির ঘেরাও এর মুখে হানাদার হানিহীকে হত্যা করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তিনি ১৯৭৩ সালে ন্যাপের প্রার্থী হেসেবে ফেনী দুই আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ভারতগমন : মীর হোসেন ভূঁঞা ২০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারত গমন করেন। তিঁনি ভারতের চৌতাখোলা, একিনপুর ফেনীর আওয়ামীলীগ নেতা খাজা আহাম্মদের নেতৃত্বে মাটি কেটে জায়গা সমান করে ইউথ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন। আমাদের দেশের ভেতরে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কিছু যুবককে একত্র করে গ্রেনেড ট্রেনিং দিয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু যুদ্ধ প্রশিক্ষণের অভাব ও ব্যবস্থা পলপ্রশু হয়নি। মীর হোসেন ভূঁঞা বামপন্থী সংঘটনের লোক হলেও তিঁনি চৌতাখোলা ক্যাম্পে ষড়যন্ত্রের শিকার হন। তার বাড়ি ফেনী শহরের অদূরে সোনাপুর গ্রামে হওয়ায় ষড়যন্ত্র হয়েছিল জোরেসোরে। কারণ তখনকার ফেনীর এম.পি. পার্লামেন্ট সেক্রেটারী এমনকি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পর্যন্ত সকলেই ছিলেন মুসলিম লীগের। এজন্য চৌতাখোলায়ও ভারতের সামরিক বাহিনীর একজন অফিসারের নেতৃত্বে মীর হোসেন ভূঁঞার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করতঃ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেহেতু ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা খাজা আহাম্মদ সাহেব তাকে জানতেন চিনতেন এবং সমীহ করতেন। ফলে খাজা আহাম্মদ সাহেবের হস্তক্ষেপে মীর হোসেন ভূঁঞা অভিযোগ থেকে অব্বাহতি লাভ করেন। এরপর মীর সোসেন ভূঁঞা একিনপুর থেকে রাজনগর হয়ে ভারতের আগরতলায় পৌঁছান। সেখানে ক্রেপট হোস্টেলে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির অফিস ছিল। সেখান থেকে বাম পন্থী নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত ক্রমে দশ জনের গ্রুপ গঠন করে স্থানীয় বোর্দ্দোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। দশ জনের গ্রুপ লীডার হিসেবে মীর হোসেন ভূঁঞাও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দশ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সকল গ্রুপকে রেড-ক্রসের একটি বিমানে করে আসাম ঘাটিতে নেয়া হয়। সেখান থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে সকলকে গেরিলা ট্রেনিং সেন্টারে নেয়া হয়। চারশত জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রায় দেড়মাস ব্যাপী ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোশকতায় গেরিলা প্রমিক্ষণ দেয়া হয়। এ প্রশিক্ষণের পরও শুধুমাত্র গ্রুপ লীডারদেরকে ভারতের তেজপুরে নিয়ে একটি উচ্চ গেরিলা প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। মীর হোসেন ভূঁঞা সে প্রশিক্ষণেও অংশগ্রহণ করেন। এরপর মীর হোসেন ভূঁঞা ও তার সহযোদ্ধাদেরকে আগরতলা বাইকুরা বি.এস.এফ. ক্যাম্পর পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করে দেয়া হয়। এ ক্যাম্পেই ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা নেতৃত্ব সাব্যস্ত হয়। মীর হোসেন ভূঁঞা সর্বসম্মতিক্রমে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর তৎকালীন ফেনী মহকুমার কমান্ডার নির্বাচিত হন।

যুদ্ধ ক্ষেত্রের স্থান সমূহ : মীর হোসেন ভূঁঞা ফেনীর বিখ্যাত বিলোনিয়ার যুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তখন তার কোনো অস্ত্র প্রমিক্ষণ ছিলনা। বিখ্যাত বিলোনিয়া যুদ্ধে কমান্ডার ছিলেন জাফর ইমাম বীর বিক্রম। তারই নেতৃত্বে মীর হোসেন ভূঁঞা বিলোনিয়া যুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। মীর হোসেন ভূঁঞা ফেনী-কুমিল্লা সীমান্তে বেতিয়ারা নামক স্থানে ভিন্ন একটি গেরিলা বাহিনীকে তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে দেশের অন্য অঞ্চলে প্রেরণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করার প্রাক্কালে বেতিয়ারা নামক স্থানে গ্রুপের সকল মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর আক্রমনে শহীদ হন। বেতিয়ারা যুদ্ধেও মীর হোসেন ভূঁঞা সহায়ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও মীর হোসেন ভূঁঞার যুদ্ধ ক্ষেত্রের এলাকা ছিল ফেনীর পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তের তাল মোহাম্মদের হাট, কোম্পানিগঞ্জ, দরবেশের হাট, সোনাইমুড়ি, জমিদার হাট, রামগঞ্জ ও চাটখিল। সম্মুখ যুদ্ধে গেরিলাদের অংশগ্রহণের নিয়ম প্রচলিত ছিলনা। সে জন্য সম্মুখ যুদ্ধে কিংবা খণ্ডযুদ্ধে গেরিলারা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতেন। শত্রুর অস্ত্র ও রসদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াই ছিল গেরিলা বাহিনীর নিয়ম। সেজন্যই মীর হোসেন ভূঁঞা নেতৃত্বে ফেনীর অনেক জায়গায় গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল।

সমাজ সেবা ও জনকল্যাণ : যুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধাহত বা ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের কল্যাণার্থে “এসো দেশ গড়ি” শ্লোগানের ব্যাজ ধারণ করে জনসেবায় আত্ম নিয়োগ করেন। তিঁনি নিজ গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে বিশেষভাবে নারী শিক্ষা প্রসারে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও তিনি অনেক জনহিতকর কর্ম ও সামাজিক সংগঠনের সাথে অদ্যাবধি নিয়োজিত আছেন। তিঁনি সোনাপুরের অদূরে ফকির হাট পোস্ট অফিস স্থাপন, মাতৃ কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সাধন, এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ আনয়ন এমনকি ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী মহোদয়ের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনায় সোনাপুর গ্রামে গ্যাস সংযোগের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিঁনি ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি, ফেনী জেলা স্কাউটস এর কমিশনার ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সংগঠনগুলোর প্রভুত উন্নতি সাধন করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর তিঁনি সাপ্তাহিক আমার জন্মভূমি নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। অদ্যবধি তিঁনি ফেনী ডায়বেটিস হাসপাতালের সহ-সভাপতি এবং ফেনীর সদর উপজেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। পারিবারিক ভাবে মীর হোসেন ভূঁঞা যথেষ্ট ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন। সে জন্য দেশ স্বাধীনের পর বৃক্ষ রোপন, হাঁস-মুরগির খামার ভিত্তিক লালন পালন, উন্নত জাতের ধান বীজ উৎপাদন, মৎস চাষ, স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী কাঁচামাল যথা – বাঁশ, বেত, কাঠ টেকসই সংরক্ষণের প্রকল্প চালু ও প্রদর্শনের ব্যবস্থাকরণ ও দেশ স্বাধীনের পর এলাকার কৃষকদের ইরি ধান চাষ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোমড়া ছড়া খাল কেটে কালিদাস পাহালিয়া কালের সাথে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকায় যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

উপসংহার : মীর হোসেন ভূঁঞা ছিলেন একাধারে রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, শিক্ষক নেতা, সমাজ ও মানব উন্নয়নের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আমি দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া উঁনার বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এ ধরনের একজন দেশ মাতৃকার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক ও মানব সম্পদ উন্নয়নে আত্মনিয়োগকারী একজন মহান মানুষের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারীকে আমার প্রধান শিক্ষক হিসাবে পেয়ে গর্বিত।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post