ভাবসম্প্রসারণ : আলস্য এক ভয়াবহ ব্যাধি

আলস্য এক ভয়াবহ ব্যাধি

মূলভাব : অলসতায় যাকে পেয়ে বসেছে, সে কখনও সৃষ্টিশীল কিছু করতে পারে না। তার জীবন রোগগ্রস্ত, অকর্মণ্য, স্থবির এবং সে হয় সমাজে ঘৃণিত। সমাজে যে অকর্মক, সে কাজ না করতে করতে ভীষণ আলসে হয়ে পড়েছে। অভ্যাসগতভাবে সে মারাত্মক রোগাগ্রস্ত প্রায়। এমন অলসতা সাধারণত সমাজের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিও বয়ে আনে।

সম্প্রসারিত-ভাব : অলসতা আমাদের সমাজ ও দেশের জন্য মারাত্মক এক রোগ। যাকে অলসতায় পেয়ে বসেছে সে কখনও মননশীল কিছু করতে পারে না। মানুষের কাছে সে সর্বদা ঘৃণিত ও ধিকৃত। জীবন সম্পর্কে আলসে মানুষের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তারা কেবলই ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। অবশেষে ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়ে মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। কোন কূল কিনার না পেয়ে জীবন পরিশেষে সাঙ্গ হয়ে যায়। এমন আলস্য রোগ সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায়স্বরুপ। এতে অবনতি ছাড়া কোন কিছু পাওয়া যায় না। যারা আলস্যকে জীবনে পুষে রাখে, তারা সারা জীবন তুষের আগুণের মত জ্বলতে থাকে। কোন দিকনির্দেশনা জীবনে আসে না। লক্ষ্যহীন জীবনে পরিণত হয় তাদের জীবন। বিশেষ করে একজনের অলসতার কারণে আরও অনেকে এ রোগে সংক্রমিত হতে পারে।

তাই আমাদের জাতীয় জীবনে এ রোগ মারাত্মক ক্ষতি করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সকল ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ রোগ থেকে সংযত হওয়া দরকার। অলসতা মানুষের জীবনে শান্তি আনতে পারে না। সারাজীবন শুধু অশান্তির বীজ বপন করে। আলস্য এক অভিশপ্ত রোগ।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো



ভাব-সম্প্রসারণ : অলসতা আমাদের জীবনে এক মারাত্মক ব্যাধি। দৈহিক রোগ আমাদের জীবনকে পঙ্গু করে ফেলে, তেমনি অলসতাও আমাদেরকে শ্রম বিমুখ করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অলস ব্যক্তি জীবনে কখনও উন্নতি করতে পারেনা। জীবনে উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত।

আলস্য বলতে শ্রমবিমুখতা বা কাজ করার ইচ্ছা না থাকা কিংবা কাজে ফাঁকি দেয়াকে বুঝায়। আলস্য সব উদ্যমকে হত্যা করে, মানুষকে করে পঙ্গু। আলস্য যে কোনো ব্যাধির মতোই সংক্রামক ও ধ্বংসকারী। অলস ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় না; সে হয় নিষ্কর্মা। কথায় বলে, ‘আলস্য দোষের আকর’। অলসতা মানুষের দেহ ও মনে জড়তা আনে। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেরূপ অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেনা, তেমনি অলস ব্যক্তিও অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। সমাজে এদেরকে পরগাছার মতো অপরের দয়ার ওপর বেঁচে থাকতে হয়। দেশ ও জাতির কোনো মঙ্গল সাধন তো তারা করতেই পারে না বরং তারা অক্ষম ও পঙ্গু হয়ে পড়ে এবং দেশ ও জাতির বোঝা হয়ে এক দুঃখময় জীবনযাপন করে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের আস্তানা’। অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তিরাই সমাজে সকল অনাচার ও কুকর্মের উদ্ভাবক। ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যেমন সমাজের রোগ বিস্তারে সহায়তা করে, তেমনি অলস ও অকর্মণ্য লোক নানা কুচিন্তা ও কুকাজ দ্বারা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও অশান্তি ডেকে আনে। অলস লোকের সংস্পর্শে এসে কোন কর্মঠ ব্যক্তিও অলস হয়ে যেতে পারে। তবে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হয়। কিন্তু বিশ্রাম আর আলস্য এক নয়। বিশ্রাম কাজেরই একটি অঙ্গ। শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বিশ্রাম অপরিহার্য। তবে বিশ্রাম যদি নির্দিষ্ট সময় করে না নেয়া হয়, অর্থাৎ কাজ ফেলে রেখে বিশ্রাম নেয়া হয়, তবে তা অবশ্যেই আলস্যের নামান্তর। আর এ আলস্য অন্য সব কঠিন রোগের মতোই ভয়ানক ও মারাত্মক।

আমাদের উচিত সবসময় অলসতা পরিহার করে কঠোর শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post