রচনা : নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য

↬ সুনাগরিকের ভূমিকা

↬ দেশ গঠনে নাগরিকের কর্তব্য

↬ সুনাগরিক


ভূমিকা : নাগরিক শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে। নাগরিক শব্দের আভিধানিক অর্থ নগরের অধিবাসী হলেও এর প্রায়োগিক অর্থ ভিন্ন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় নাগরিক তাদেরই বলে, যারা রাষ্ট্রের বিবিধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের অধিকারী হয়। অর্থাৎ যারা রাষ্ট্র পদত্ত সকল অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তারাই নাগরিক। নাগরিকের মর্যাদাকে নাগরিকতা বলে। নাগরিক যদি যথাযথভাবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তাহলে তার নাগরিকতার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নাগরিক হল সেই ব্যক্তি যে স্থায়ীভাবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তাহলে তার নাগরিকতার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নাগরিক হল সেই ব্যক্তি যে স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রে বাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে, রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। নাগরিক অধিকার সভ্য দেশের সামাজিক মানুষের বাঞ্ছিত সম্পদ। এ অধিকার লাভ না করতে পারলে জীবন বিড়ম্বিত হয়। 

সুনাগরিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সুনাগরিকের প্রয়োজন। সুনাগরিককে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশসহ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সচেষ্ট থাকতে হয়। রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব, স্থিতি, সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য ও সুনাম সমষ্টিগত স্বার্থের প্রতি নাগরিককে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হয়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে দেশপ্রেমের অনুভূতিপরায়ণ নৈতিক ও দায়িত্ববান সুনাগরিকের প্রয়োজন। 

নাগরিক অধিকার : অধিকার বলতে সাধারণভাবে ইচ্ছামতো কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। কিন্তু যথেচ্ছাচার অধিকার হতে পারে না। কারণ, তাহলে কেউ কাউকে খুন করলে সেটি তার অধিকার হয়ে যায়। পৌরনীতিতে অধিকার বলতে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতগুলো সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায়, যা ছাড়া ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না। অধ্যাপক লাস্কি বলেন, অধিকার হল সমাজ জীবনের সে সকল অবস্থা (সুযোগসুবিধা) যা ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। অধিকার সমাজ থেকে সৃষ্ট সমাজকল্যাণের মধ্যে অধিকারের তাৎপর্য নিহিত। অধিকারকে প্রথমত দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
(ক) নৈতিক অধিকার,
(খ) আইনগত অধিকার।

আইনগত অধিকারকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
(১) সামাজিক অধিকার,
(২) রাজনৈতিক অধিকার এবং
(৩) অর্থনৈতিক অধিকার। 

(১) সামাজিক অধিকার : সামাজিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে :
(ক) জীবনধারণের অধিকার,
(খ) চলাফেরার অধিকার,
(গ) সম্পত্তি ভোগের অধিকার,
(ঘ) চুক্তি করার অধিকার,
(ঙ) মতামত প্রকাশের অধিকার,
(চ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অধিকার,
(ছ) সভা-সমিতির অধিকার,
(জ) ধর্মীয় অধিকার,
(ঝ) আইনের চোখে সমান অধিকার,
(ঞ) পরিবার গঠনের অধিকার,
(ট) ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার,
(ঠ) খ্যাতি লাভের অধিকার। 

উপর্যুক্ত সামাজিক অধিকারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে সকলের জন্য অধিকার ভোগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নাগরিক জীবন উন্নত ও বিকশিত হয়। 

(২) রাজনৈতিক অধিকার : রাজনৈতিক অধিকারের মাধ্যমে মানুষ রাষ্ট্রের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। রাজনৈতিক অধিকার যত বিস্তৃত হয় রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের মাত্রা তত বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্র ও সরকার যে সকল অধিকার সংরক্ষণ করে তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। নিচে রাজনৈতিক অধিকারগুলো উপস্থাপন করা হয়: 
(ক) স্থায়ীভাবে বসবাস করার অধিকার,
(খ) নির্বাচনের অধিকার,
(গ) সরকারি চাকরি লাভের অধিকার,
(ঘ) আবেদন করার অধিকার,
(ঙ) বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভের অধিকার,
(চ) সরকারের সমালোচনা করার অধিকার। 

(৩) অর্থনৈতিক অধিকার : জীবনধারণ ও জীবনকে উন্নত এবং অগ্রসর করে নেয়ার জন্য রাষ্ট্র যেসব আর্থসামাজিক অধিকার প্রদান করে তাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। নিচে অর্থনৈতিক অধিকারগুলো উপস্থান করা হল :
(ক) কর্মের অধিকার,
(খ) ন্যায্য মজুরির অধিকার,
(গ) অবকাশ লাভের অধিকার,
(ঘ) শ্রমিকসংঘ গঠনের অধিকার।

নাগরিক কর্তব্য : নাগরিকের যেমন অধিকার আছে তেমনি কর্তব্যও রয়েছে। আইনের দ্বারা স্বীকৃত অধিকার ভোগ করতে গিয়ে যে সব দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে নাগরিক কর্তব্য বলে। কর্তব্য বলতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য কোনকিছু করাকে বোঝায়। একজন নাগরিকের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সংহতি রক্ষা করার জন্য কর্তব্য পালন করা। কর্তব্য প্রধানত দু প্রকার। যথা :
(ক) নৈতিক এবং
(খ) আইনগত।

মানুষ আগ্রহভরে ও নৈতিকতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে দায়িত্ব পালন করে তাকে নৈতিক কর্তব্য বলে। আর আইনের দ্বারা আরোপিত বিধি নিষেধের মাধ্যমে যেসব কাজ করা বা না করা হয় তাকে আইনগত কর্তব্য বলে। আর অধিকার ভোগ করতে হলে এসব কর্তব্য পালন করতে হয়। কর্তব্যগুলো নিম্নরূপ: 
(ক) রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা,
(খ) আইন মান্য করা,
(গ) সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা,
(ঘ) নিয়মিতভাবে কর প্রদান করা,
(ঙ) রাষ্ট্রের সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা,
(চ) সন্তানদের সুশিক্ষিত করা,
(ছ) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করা। 

বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য : বাংলাদেশে একটি উত্তম সংবিধান রয়েছে। এ সংবিধানে দেশের নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যের পরিসীমা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭-ক অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নাগরিকের অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে। অপরদিকে, সংবিধানের ২০ ও ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে নাগরিক কর্তব্যের সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রতিটি নাগরিক নিজ নিজ অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবে, এটাই সঙ্গত। 

বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারসমূহ ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিধিবদ্ধ হয়েছে এবং এসবের প্রয়োগ উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই অধিকারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : আইনের চোখে সবাই সমান; ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ অথবা জন্মস্থান নিয়ে কোনো বৈষম্য সৃষ্টি না করা; রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে জনজীবনে নর-নারীর সমানাধিকার; রাষ্ট্রের চাকরিতে সমান সুযোগ; আইনের সংরক্ষণের অধিকার; ব্যক্তিজীবন ও স্বাধীনতার অধিকার; বেআইনি গ্রেপ্তার ও আটকে রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা; চলাফেরায় স্বাধীনতা; ধর্মের স্বাধীনতা; সম্পত্তির অধিকার এবং যোগাযোগের গোপনীয়তা। বর্তমানে আমাদের দেশের অগণিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। এসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেশের কর্ণধারদের হাতে ন্যস্ত থাকলেও জনগণ তা থেকে মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। নাগরিকরা যদি তাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়, তবে দেশ শৃঙ্খলার মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। দেশের স্বার্থের পরিপন্থি চোরাচালান, কালোবাজারি ও দুর্নীতিপরায়ণতা রোধ করার দায়িত্ব নাগরিকদেরই পালন করতে হবে। 

সুনাগরিক হওয়ার উপায়, রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধি : রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সুনাগরিকের অবশ্যই কর্তব্য রয়েছে। আগে আমাদের মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। তাহলেই আমরা সুনাগরিক হতে পারব। সুনাগরিক হতে হলে নিজে উপযুক্ত শিক্ষালাভ করে স্বীয় বিদ্যাবুদ্ধির উৎকর্ষ সাধন ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে। সঙ্কীর্ণ দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্রের কল্যাণসাধন করতে হবে। আপন কর্তব্যকর্মে নাগরিককে উদাসীন থাকলে চলবে না। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মনোভাবও থাকবে, বিশ্বের যে কোনো দেশের নাগরিকের। এতে করে রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বেরও কল্যাণ সাধিত হবে। সুনাগরিকের গুণাবলি হল :
(ক) বুদ্ধি,
(খ) আত্মসংযম,
(গ) বিবেক।

আর নাগরিকতার অন্তরায়গুলো হল :
(ক) নির্লিপ্ততা,
(খ) ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা,
(গ) দলীয় মনোভাব,
(গ) ধর্মান্ধতা,
(ঘ)দাম্ভিকতা। 

এসব বিষয় বিবেচনা করে সুনাগরিক হওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ন্যায়-অন্যায় বিচার করার মতো বুদ্ধি তার থাকতে হবে। সুনাগরিককে অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তাকে সুশিক্ষিত, স্বশিক্ষিত এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সুনাগরিককে সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে উদার ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন হতে হবে। রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হবে, নৈতিকতাবোধে উজ্জীবিত হতে হবে। 

উপসংহার : স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রকে উন্নত করে গড়ে তোলার দায়িত্বভার বর্তমানে আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। তাই নাগরিক হিসেবে আমাদের সম্মুখে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, সে বিষয়ে আমাদেরকে সদা সচেতন থাকতে হবে। দেশের অশিক্ষা ও কুশিক্ষা দূরীকরণে, দুঃখ-দারিদ্র্য লাঘবকল্পে প্রত্যেক নাগরিককেই যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে যারা অনীহা প্রকাশ করে, তারা যথার্থ নাগরিক নয়; বরং বলা যায়, তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।


একই রচনা অন্য বই থেকে সংগ্রহ করে আবার দেয়া হলো


ভূমিকা : ’নাগরিক’ কথাটির অর্থ অতি ব্যাপক। সাধারণভাবে নাগরিক বলতে কোনো নগরের অধিবাসীকে বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে বৃহত্তর অর্থে কোনো রাষ্ট্রের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। গ্রিসের ক্ষুদ্র নগর তথা রাষ্ট্রের অধিবাসী সে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রথম যে স্বীকৃতি লাভ করেছিল তা বহুকালের বিচিত্র পরিবর্তন ও বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে বৃহত্তর অর্থের পরিধিতে পৌঁছেছে। তাই আজকের দিনে নাগরিক বিশেষ কোনো নগরের অধিবাসী নয়, শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ যে যেখানেই থাকুক না কেন সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেসে পরিচিত।

নাগরিক : নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি বা উপায় আছে। দেশে দেশে তা ভিন্নধর্মী। তবে দেশে দেশে নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন রূপ থাকলেও সাধারণভাবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। পাশাপাশি দেশ নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে থাকে। নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি আমাদের যেসব দায়িত্ব থাকে সেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা নাগরিকের প্রয়োজনীয় কর্তব্য সম্পাদন করে থাকি। তাই নাগরিক কথাটির সঙ্গে কর্তব্য ও দায়িত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।

নাগরিক অধিকার : প্রতিটি রাষ্ট্রের নাগরিকেরই সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার থাকে। তাছাড়া কতগুলো মৌলিক অধিকারও নাগরিকরা ভোগ করে থাকে। যেমন- বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসা লাভের অধিকার, বাসস্থানের অধিকার ও ধর্ম পালনের অধিকার। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য এসব অধিকার রক্ষার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে, নাগরিকেরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা না হলে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে।

কর্তব্য : একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের কর্তব্য অপরিসীম। জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতি নাগরিকদের কর্তব্য পালনের মধ্যে নিহিত। নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি নাগরিকদের কর্তব্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে সবার বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশের সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের সুখশান্তির নিশ্চয়তা বিধানে নাগরিকদের যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। দেশের সার্বিক কল্যাণে সব শ্রেণির নাগরিকের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে এবং এতেই দেশের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।

রাষ্ট্রীয় কর্তব্য : নাগরিককে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে বিশেষ কতকগুলো কর্তব্য সম্পাদন করতে হয়। নাগরিককে অবশ্যই দেশের আইন কানুন মেনে চলতে হবে। নাগরিককে সরকার নির্ধারিত কর নিয়মিত প্রদান করতে হবে।

তাছাড়া নাগরিককে সরকারি প্রয়োজনীয় কাজকর্মে অংশগ্রহণ, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিধানে কাজ করা, দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নাগরিকরা এভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করলে দেশ সুখী ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।

কোনো দেশের নাগরিক হিসেবে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেশবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই পালন করতে অভ্যস্ত। স্বাধীন দেশের ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব ও কর্তব্য ভিন্ন প্রকৃতির এবং তা জাতীয় জীবনের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাধীন দেশের সমস্যার অন্ত থাকে না এবং তা তার নাগরিকদের সমাধান করতে হয়। সেজন্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের বেশি পরিমাণে কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার প্রয়োজন আছে। পরাধীন দেশে শাসকের হাতেই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। কিন্তু স্বাধীন দেশে যেখানে শাসক ও জনগণই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে সেখানে নাগরিকদের অধিকতর কর্তব্যসচেতন হতে হয়।

উপসংহার : আমাদের দেশে বর্তমানে অগণিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেশের পরিচালকমণ্ডলীর হাতে ন্যস্ত থাকলেও জনগণ তা থেকে মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। তাই নাগরিকদেরকে দেশ গঠনমূলক পরিকল্পনা দান করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নিজ নিজ কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশের উন্নতির জন্য শান্তি-শৃঙ্খলার প্রয়োজন। নাগরিকরা যদি কর্তব্যসচেতন হয় তবে দেশ শৃঙ্খলার মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন, সরকারি আদেশ-নিষেধ অনুসরণ ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করলে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। অনেক স্বার্থপর ব্যক্তি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনাচারের আশ্রয় নেয়, নাগরিকগণকে তা রোধ করতে হবে। চোরাচালান, কালোবাজারি, দুর্নীতি রোধকল্পে নাগরিকদের কাজ করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ দুটি মৌলিক কাজে নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা উচিত, দেশ সরকারের নয়, জনগণের। দেশের কল্যাণের দায়িত্ব সম্পর্কে নাগরিকরা কর্তব্যপরায়ণ না হলে শুধু সরকারের পক্ষে দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধন করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post