ভাবসম্প্রসারণ : মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে / মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।

সুন্দর প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালবাসা যেমন চিরন্তন তেমনি মানুষের প্রতি মানুষের আকর্ষণও অপরিসীম। তাই মরণশীল মানুষ প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্যময় মানবজীবন থেকে বিদায় নিতে চায় না। জগতে অনন্তকাল ধরে জীবন উপভোগের আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন।

প্রকৃতির অপূর্ব রূপবৈচিত্র্যের সঙ্গে মানুষের জীবনের রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য মেলবন্ধন। প্রতিটি মানুষ জন্ম নেয় প্রকৃতির কোলে। আর প্রকৃতির অপার সম্পদ ব্যবহার করেই সে জীবন ধারণ করে। মাটির পৃথিবীর আলো- বাতাস-জলে সে পায় অমৃতের স্বাদ। অন্যদিকে পৃথিবীতে মানুষ নিঃসঙ্গ বা একাকী বাঁচতে পারে না। চারপাশের মানুষের স্নেহ-মমতা ও প্রীতির ডোরে সার্থক ও ধন্য হয় তার জীবন। তাই প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা চিরন্তর। পার্থিব জীবনে প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে থেকে মানুষ এত আনন্দিত ও এত মুগ্ধ যে স্বর্গের আকর্ষণ তার কাছে তুচ্ছ। তাই সে পৃথিবীকে ছাড়তে চায় না, মৃত্যুকে বরণ করতে চায় না। কিন্তু মানুষ জানে, তাকে একসময় না একসময় মৃত্যুকে বরণ করতে হবে। ছেড়ে যেতে হবে এই সুন্দর পৃথিবীকে, ছেড়ে যেতে হবে প্রিয় মানুষগুলোকে। এই হারানোর বেদনা এত গভীর যে তার ফলে সুন্দর পৃথিবী ও প্রিয় মানুষগুলোর জন্যে তার মমতা ও ভালবাসা হয়ে ওঠে আরও প্রবল।

বস্তুত, সুন্দর পৃথিবী ও প্রীতিপূর্ণ মানুষের সাহচর্যের মধ্যে মানুষ পায় অমৃত সুখ ও অনাবিল আনন্দ। তাই প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি তার অসীম মমতা। এই মমতা বন্ধন ছিন্ন করা মানুষের জন্যে সত্যিই কঠিন।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


এ ধুলার ধরণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা অকৃত্রিম। তাই মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায় না। বরং এর আনন্দের মধ্যে জীবনের সার্থকতার সন্ধান করে মানুষ।

মায়াবিনী কুহকিনী পৃথিবী মানুষকে তার মায়াজালে এমনভাবে আবদ্ধ রাখে যে, এই পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ছেড়ে সে যেতে চায় না- চিরজীবন তার কোলে মাথা রেখে বেঁচে থাকার মিনতি জানায়। এ অমরত্বের প্রার্থনা মানুষের চিরন্তন। মধুময় পৃথিবীর ধুলিকণা গায়ে মেখে মানুষ অমৃতের স্বাদ লাভ করে বলেই, তার কাছে পৃথিবী এত সুন্দর । পৃথিবী মানবের এ অপূর্ব লীলাক্ষেত্র। মানুষ পৃথিবীতে এসে চারদিকে জীবনের যে আনন্দময় প্রকাশ দেখে এবং প্রকৃতির মধ্যে যে অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করে তা ছেড়ে মানুষ স্বর্গেও যেতে চায় না। স্নেহ-প্রেম ভালোবাসাপূর্ণ এই জগৎসংসারের মায়াময় পরিবেশ ছেড়ে চিরদিনের জন্যে চলে যেতে হবে বলেই এর প্রতি মানুষের ভালবাসাও প্রবলতর। বিধাতার আনন্দের ফল এই পৃথিবী। এর সৌন্দর্য ও মায়া জীবনকে এত বেশি আকর্ষণ করে এবং হৃদয়কে এত বেশি অভিভূত করে যে, সবসময়ই মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় এর প্রতি মমত্ববোধের অকৃত্রিম উচ্চারণ।

মানুষ মরণশীল বলে একসময় এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করতে হয়। জীবনের এই পরিণতিকে অগ্রাহ্য করা কারও পক্ষে সম্বব নয়। অবশ্যম্ভাবী এই পরিণাম জেনেও মানষ এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে, তার রূপে মুগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চায়।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : এ ধুলির ধরার প্রতি মানুষের ভালোবাসা অকৃত্রিম। তাই মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায় না।

ভাব-সম্প্রসারণ : এই সুন্দর ভুবনকে বিধাতা মানুষের আনন্দ উপভোগের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এখানে মানুষ তার জীবনের প্রীতি ভালোবাসা সৌন্দর্যবোধ নিয়ে বাস করে। এখানে মানুষের হৃদয়ের স্নেহ-ভালোবাসার আশ্রয় খোঁজে। মানুষ এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র জন্মগ্রহণ ও মৃত্যু বরণ করে জীবন সমাপ্ত করতে চায় না। যতদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, ততদিন বিধাতার সুন্দর দানের মহিমাকে জীবন দিয়ে উপলব্ধি করবে, এটাই মানুষের কাম্য। মানুষ এই জগতে মানুষের জীবনের আশ্রয় খোঁজে, মানুষের জীবনের মধ্যে নিজেকে ধরে রাখতে চায়। এই সৃষ্টির মধ্যে যে মাধুর্য ও সৌন্দর্য আছে তাকে উপেক্ষা করে কেবল কঠোর কৃচ্ছসাধন করে মৃত্যুর অপর পারে গিয়ে আনন্দ লাভ কোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাম্য নয়। মানুষের মধ্যে থেকে মানবের সেবা করে মানবজীবন মহিমার সঙ্গীত রচনা করে মরলোকের অমরত্ব দানই এখানে কবির লক্ষ্য। মৃত্যু নয়, মরলোকের পুত পবিত্র আনন্দোপলব্ধিই সকলের কাম্য হওয়া উচিত।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post