রচনা : ডাকটিকিট সংগ্রহ

ভূমিকা : মানুষের জীবনকে উপভোগ্য ও আনন্দমুখর করে তোলার জন্য নানা রকম শখ থাকে। ডাকটিকিট সংগ্রহ একটি উত্তম শখ। ডাকটিকিটের মধ্যে আছে রং-বেরঙের সমাহার, আছে ইতিহাস ঐতিহ্য। ডাকটিকিটে ফুটে ওঠে কোন দেশের ভৌগোলিক পরিচয়। তাই বহুমুখী বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে মানুষ ডাকটিকিট সংগ্রহকে শখে রাজা হিসেবে বিবেচনা করে। বিশেষত শিশু-কিশোরদের কাছে ডাকটিকিট এক অফুরন্ত আনন্দের উৎস। অবসর সময়কে কাজে লাগানোর চমৎকার মাধ্যম এটি।

ইতিহাস : ডাকটিকিটের প্রচলন হয়েছে ১৮৪০ সালে বিলাতে। আগাম ডাক মাসুল দেওয়ার জন্য ছোট ছোট কাগজ ছাপিয়ে চিঠির খামে ব্যবহার করার রীতি প্রবর্তন করেন রোলাল্ড হিল নামক এক ইংরেজ। মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ছবি ছিল সেই ডাকটিকিটে। ডাকটিকিটের সুবিধা বিবেচনা করে অচিরেই পৃথিবীর বহুদেশ এর প্রচলন করে। আর এই সুবিধার জন্য বিশ্ব জুড়ে ডাকটিকিট সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

ডাকটিকিটে থাকে নানা ছবি। প্রথমদিকে শুধু দেশের রাজা রাণী বা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি থাকত। পরে দেশের সম্পদ, প্রাকৃতিক দৃশ্য, পশুপাখি, দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তি, জাতীয় ঘটনার ছবি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশিত হতে থাকে। প্রত্যেক দেশের আলাদা আলাদা টিকিট থাকায় তা বৈচিত্র্যে ও সৌন্দর্যে মানুষকে মুগ্ধ করে। ফলে সেসব সংগ্রহ করার শখ মানুষের মধ্যে দেখা দেয়।

ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু হয় তার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে। বেলজিয়ামের একজন শিক্ষক ভূগোল শিক্ষা দেবার জন্য ছাত্রদের মানচিত্রে বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিট লাগাতে দিতেন। মনে করা হয়, তথন থেকেই সংগ্রহের রীতি শুরু হয়েছে। শখ হিসেবে একে গ্রহণ করা ব্যয়সাপেক্ষ নয় বলে এর ব্যাপক সমাদরও দেখা যায়। ডাকটিকিটের মধ্যে যে শিক্ষণীয় দিক আছে তার আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন দেশের টিকিট থেকে সেসব দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যায়। প্রত্যেক টিকিটে নিজ নিজ দেশের মুদ্রার নামে টিকিটের দাম লেখা থাকে। এ থেকে পৃথিবীর নানা দেশের মুদ্রার নাম ও মান সম্পর্কে জানা সম্ভবপর হয়।

বৈশিষ্ট্য : ডাকটিকিটে থাকে নানারকম ছবির বিচিত্র সমাবেশ। সেসব দেখলে তা থেকে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। সমসাময়িক কোন বিশেষ ঘটনা অথবা অতীতের কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা স্মরণ রাখার জন্য ডাকটিকিটে সেসবের চিত্ররূপ ছাপানো হয়। সেসব ছবি থেকে জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়া দেশের সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য টিকিটে ছাপানো হয়। এ থেকে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা করা চলে। আবার যেসব টিকিটে পশু-পাখির ছবি ছাপানো থাকে তা থেকেও মানুষ জাতীয় ঘটনার প্রতিফলনও ডাকটিকিটে দেখা যায়। এসব বহু ধরনের বৈষিষ্ট্যের জন্যই ডাকটিকিট সংগ্রহ শখ হিসেবে এত জনপ্রিয়।

উপকার : ডাকটিকিট সংগ্রহের আর একটি মূল্যবান দিক আছে। অনেক সময় দুর্লভ ডাকটিকিট খুব বেশি দামে বিক্রয় হয়। নানা কারণে কোন কোন ডাকটিকিট খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তখন তা কেনার জন্য রীতিমত প্রতিযোগীতার শুরু হয়ে যায়। ফলে দামও বাড়ে। ব্রিটিশ গায়ানার ১৮৪৬ সালে মুদ্রিত এক সেন্ট দামের লালরঙা আটকোণা ডাকটিকিটখানি এখন বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান টিকিট বলে বিবেচিত। মাঝে মাঝে এ ধরনের মূল্যবান ও দুর্লভ ডাকটিকিট নিলামে বিক্রয় হয়ে থাকে। এভাবে ডাকটিকিট সংগ্রহকরা উপকৃত হয়।

উপসংহার : ডাকটিকিট সংগ্রহ একটি নির্মল আনন্দদায়ক শখ। অবসর বিনোদনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভের যে সুযোগ এখানে রয়েছে, তা মানুষকে বরাবর আকর্ষণ করছে। বিশেষত তরুণদের জীবন গঠনে অনুসন্ধিৎসা দৃষ্টিতে, জ্ঞানের সাধনায় ডাকটিকিট নির্মল অবদান রাখছে। ছাপাখানার উৎকর্ষের প্রেক্ষিতে আজকাল আশ্চর্য সুন্দর ডাকটিকিটের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। শখ মেটানো আর তথ্য পরিবেশনে সেসব ডাকটিকিট বরাবর গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বৈচিত্র্যের জন্যও ডাকটিকিট সমাদৃত। আমাদের দেশে ডাকটিকিট সংগ্রহের কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ডাক বিভাগ থেকে আকর্ষণীয় ডাকটিকিট প্রকাশ ও বিক্রয় করা হয়। দোকান থেকে সংগ্রহের জন্য ডাকটিকিট কেনা যায়। এসব ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে এবং তার সুফল জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত করতে হবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post