গণিত : সূচক : প্রাথমিক আলোচনা

সূচক
Exponent

সূচক গণিতে এক বিস্তৃত অধ্যায়। সূচকের সাথে লগারিদমের ভাল মিল আছে। তাই সূচক এবং লগারিদম পাশাপাশি সময়ে শিখলে অনেক সময় বেঁচে যাবেন৷ 


সূচক শব্দের অর্থ হলো শক্তি। n সংখ্যক a এর ক্রমিক গুণফল। 
$a^n$ এখানে, a কে ভিত্তি (base) বলা হয়। 
n কে a এর (ভিত্তির) সূচক বলা হয় বলা হয়৷ 
$a^n$ কে a এর n তম ঘাত বা শক্তি বা 'power' বলা হয়৷ 

অর্থাৎ, সূচকীকরণ হচ্ছে একটি গাণিতিক প্রক্রিয়া যাকে $a^n$ আকারে প্রকাশ করা হয় যেখানে a কে বলা হয় ভিত্তি (base) এবং n কে বলা হয় সূচক (exponent)।

যখন n একটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা, সূচকীকরণ প্রক্রিয়া তখন ভিত্তির পুনরাবৃত্ত গুণফল বোঝায় অর্থাৎ $a^n$  হচ্ছে ভিত্তি a কে n সংখ্যক বার গুণ করলে যে গুণফল পাওয়া যায় তার সমান।

সূচককে প্রকাশ করার নিয়ম :
Exponent

সূচককে সাধারণত ভিত্তির ডান পাশে উপরে শীর্ষে (superscript) হিসেবে দেখানো হয়। সেক্ষেত্রে, $a^n$ কে n তম সূচক/শক্তিতে উন্নীত a অথবা n এর সূচকে/শক্তিতে উন্নীত a অথবা a এর n তম সূচক/শক্তি অথবা 'a (to the power) n', অথবা সবচেয়ে সংক্ষেপে 'a to the n' হিসেবে পড়া হয়।

সূচকের সংক্ষেপে ইতিহাস :
গ্রীক গণিতবিদ ইউক্লিড (ইপোক্রেটিস অব কিওস) অনুসরণে power (শক্তি) শব্দটি কোন রেখার বর্গ (স্কয়ার) বোঝাতে প্রথম ব্যবহার করেন। এরপর আর্কিমিডিস সূচকের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র $\left(a^m\right)^n=a^{mn}$ প্রমাণসহ নির্ণয় করে যা ১০ ভিত্তিক গণনার সূচনা করে। অতঃপর নবম শতকে পারস্যের গণিতবিদ মুহাম্মাদ ইবনে মূসা আল-খারিজমি বর্গ বোঝাতে mal এবং ঘন বোঝাতে kahb শব্দের ব্যবহার শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে গাণিতিক চিহ্নলিপিতে যথাক্রমে m ও k হিসেবে আত্নপ্রকাশ প্রকাশ করতে থাকে। ১৬শ শতকের শেষ দিকে সূচকের জন্য রোমান সংখ্যা ব্যবহার করেন জোস্ট বার্গি। ১৭শ শতকের শুরুর দিকে সূচকীকরণের আধুনিক চিহ্নলিপির প্রথম রূপের সূচনা করেন রেনে দেকার্ত। তবে ১৫৪৪ সালে মাইকেল স্টিফেল সর্বপ্রথম "exponent"- শব্দের প্রবর্তন করেন। এবং স্যামুয়েল জিক ১৬৯৬ সালে indices শব্দটি চালু করেন।

নোট : (জেনে রাখুন) 
Square – বর্গ
Cube – ঘন
Zenzizenzic – চতুর্থ শক্তি
Sursolid – পঞ্চম
Zenzicube – ষষ্ঠ
Second sursolid – সপ্তম এবং 
Zenzizenzizenzic – অষ্টম

তবে (Biquadrate শব্দটিও চতুর্থ শক্তি) বোঝাতে এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়।

বিঃদ্রঃ গণিতবিদ আইজ্যাক নিউটন শুধুমাত্র দুই অপেক্ষা বৃহত্তর শক্তির ক্ষেত্রে সূচক ব্যবহার করতেন এবং তিনি বর্গকে পুনরাবৃত্ত গুণফল হিসেবেই উপস্থাপন করার পক্ষপাতী ছিলেন। 

সূচকের ব্যবহার 
সূচকীকরণ প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় যেমন: অর্থনীতি, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান। এছাড়া বাস্তবিকক্ষেত্রে এর ব্যবহার যৌগিক মুনাফা, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি, রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিবিদ্যা তরঙ্গের আচরণ এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির মতো শাখাগুলোতে রয়েছে।

মনে রাখুন,
সূচক

প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি 
এই মূলত সূত্র নির্ভর আর তাই সূত্রগুলো ভালোভাবে বুঝলে এই অধ্যায়ের যে কোন প্রশ্ন সহজে সমাধান করা যাবে। 

1. $a^n=a \times a \times a \times a \times a \times a$.... (n সংখ্যক a-এর ধারাবাহিক গুণফল)

2. $\left(a^m\right)^n=a^{mn}$ (কোন সংখ্যার উপর দুইবার বা তার থেকে বেশি পাওয়ার থাকলে পাওয়ারগুলো গুণ হয়ে একটি পাাওয়ার হয়।) 

3. $a^m.a^n=a^{m+n}$

4. $a^m \div a^n=\frac{a^m}{a^n}=a^{m-n}$

Note : ভিত্তি একই হলে এবং গুণ থাকলে পাওয়ার গুলো যোগ করতে হয়, আবার ভাগ থাকলে পাওয়ার গুলো বিয়োগ করতে হয়৷ 

5. $a^0=1$ [Note : কোন সংখ্যার উপর পাওয়ার 0 থাকলে তার মান 1 হয়। যেখানে a ≠ 0 ]

6. $\sqrt a=a^\frac12$

7. $\sqrt[3]a=a^\frac13$

8. $\sqrt[q]a=a^\frac1q$

9. $\sqrt[3]a=a^\frac23$

Note : কোনো পাওয়ার যুক্ত সংখ্যা = 1 দেওয়া থাকলে ডানের 1 এর পরিবর্তে ঐ সংখ্যার উপর পাওয়ার 0 লেখা যায়। কারণ, পাওয়ার 0 থাকলে তার মান 1 হয়। 

10. $a^{-n}=\frac1{a^n}$ অর্থাৎ $a^{-2}=\frac1{a^2}$

Note : কোন পাওয়ার মাইনাস থাকলে তা ভগ্নাংশ আকারে লিখতে হয় এবং মাইনাস তুলে লব 1 এর নিচে পুরো সংখ্যাটি পাওয়ার সহ লিখতে হয়। 

11. $\left(ab\right)^m=a^m.b^m$

12. $\left(\frac ab\right)^m=\frac{a^m}{b^m}$

13. $\left(\frac ab\right)^{-m}=\left(\frac ba\right)^m=\frac{b^m}{a^m}$

Note : কোন ভগ্নাংশের উপরের পাওয়ারটি মাইনাস হলে ঐ ভগ্নাংশটি উল্টে যায় অর্থাৎ হরের জায়গায় লব আর লবের জায়গায় হর বসে।

14. $a^x=a^y$ হলে $x=y$

Note : দু পাশের ভিত্তি মিলে গেলে দুটো ভিত্তিই তুলে দিতে হয়। 

15. $a^x=b^x$ হলে $a=b$

Note : দু পাশের পাওয়ার (power) ভিত্তি মিলে গেলে দুটো পাওয়ার (power) তুলে দিতে হয়। 

14 এবং 15 নম্বর সূত্র থেকে চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন বেশি এসে থাকে। আর তাই এই দুটো সূত্র ভালোভাবে আয়ত্তে রাখুন।

এই অধ্যায়ের অংক দ্রুত করতে হলে আপনাকে কিছু গাণিতিক মান মুখস্থ রাখতে হবে। 

$2^2=4$
$2^3=8$
$2^4=16$
$2^5=32$
$2^6=64$
$2^7=128$
$2^8=256$
$3^2=9$
$3^3=27$
$3^4=81$
$3^5=243$
$4^2=16$
$4^3=64$
$4^4=256$
$4^5=1024$
$5^2=25$
$5^3=125$
$5^4=625$
$6^2=36$
$6^3=216$
$6^4=1296$

সূচক সম্পর্কিত উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালো করে পড়ার পর সূচকের গাণিতিক সমস্যাবলি নিয়ে আমাদের পরবর্তী পোস্টটি পড়ুন। 
Azibul Hasan
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post