মার্চের দিনগুলি

রচনা : আমি কেন আদর্শবাদী হতে চাই

সূচনা : মানুষ এই বিশ্বসংসারে আগমন করে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে একটা আদর্শ জীবনের দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। বিচিত্র কর্মকাণ্ডে জীবনকে যদি মুখরিত করে তোলা যায় তবে জীবন-যাপনের সার্থকতা প্রমাণিত হয়। আর আত্মকার্যে মগ্ন হয়ে দিনাতিপাত করলে তাতে হয়ত নিজের কল্যাণ হয়. কিন্তু ‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও’—বলে যে মহান বাণী কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল—তার কোন সার্থকতা প্রমাণিত হয় না। পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে – পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করার মহৎ সাধনা হবে সকল মানুষের মানবজীবনের এ মহান লক্ষ্যে উপনীত হয়ে জীবনকে সার্থক করার জন্য আমাকে আদর্শবাদী হতে হবে প ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য এক আদর্শ জগতের সাধনা করতে হবে আমাকে।

আদর্শবাদ কি : জীবনকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটানো আবশ্যক। সংসারের প্রতিদিনকার ধরাছোঁয়ার মধ্যে যে আবিলতা তা থেকে মনকে এক স্বতন্ত্রলোকে উন্নীত করতে হবে—যেখানে সত্য, ন্যায়, মহত্ত্ব প্রভৃতি গুণের অধিষ্ঠান। চারদিকের সংকীর্ণতা থেকে মনকে মুক্ত করতে হবে এবং এক অনুসরণীয় আদর্শলোকে নিজেকে স্থাপন করতে হবে। যেখানে কোন মিথ্যা নেই, নেই কোন অন্যায় অনাচার, যেখানে কুসংস্কার মাথা তুলে দাঁড়ায় না—সেটাই আদর্শলোক। তার অনুসরণ আদর্শবাদ। জীবনের পবিত্রতম স্থানটিই হল আদর্শবাদের আশ্রয়। দৈনন্দিন জীবনের কলুষতা থেকে নিজেকে সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে সে পবিত্র পরিবেশে। এই আদর্শবাদিতাই সুন্দর ও আদর্শ জীবন গঠনের মূল চাবিকাঠি।

আদর্শবাদিতার গুরুত্ব : জীবনকে সুন্দর ও সফল করার জন্য আদর্শবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের চারপাশের জীবনের দিকে তাকালে এ জীবনের আবিলতা সম্পর্কে সহজেই ধারণা করা যায়। একটা সর্বগ্রাসী অবস্থা আমাদের বর্তমান জীবনকে যেন বিষাক্ত করে তুলছে। আমাদের তরুণেরা আজ দিকভ্রান্ত; অনাগত ভবিষ্যৎ তাদের কাছে অর্থহীন হয়ে উঠছে বলে এ অস্বস্তিকর অবস্থা। এ অবস্থা থেকে যদি রেহাই পাওয়া না যায় তবে দেশ ও জাতির কোন ভবিষ্যৎ নেই। এই অবস্থা আমাকে প্রবলভাবে পীড়া দেয়, আমাকে উদ্ভ্রান্ত করে, আমাকে নৈরাশ্যের অতলান্ত অন্ধকারে ঠেলে দেয়। স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আমি এ পরিস্থিতির শিকার হতে চাই না। আমি জীবনের মর্যাদা উপলব্ধি করি এবং সে কারণেই আমি আজকের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতে চাই না। জীবনকে যদি ব্যতিক্রমধর্মী করতে না পারি তবে সে জীবনের কোন মূল্য নেই।

কর্তব্য : আমার কর্তব্য হবে চারদিকের আবিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আদর্শ জীবন গড়ে তোলা। সবাই ভুল করে যা করে আমি তা করব না— এটাই আমার সাধনা। এতে আমার জাগতিক স্বার্থের হানি ঘটবে। কিন্তু পরিণামে লাভ করব সীমাহীন মানসিক শান্তি। সবাই যেখানে বিবেক বিসর্জন দিয়েছে সেখানে আমি সদাজাগ্রত রাখব আমার বিবেক। আমার জীবনের সাধনা হবে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এর জন্য আদর্শ মানুষের মহৎ জীবন আমার কাছে হবে অনুসরণযোগ্য।

উপসংহার : আদর্শবাদ মানবজীবনকে দৈনন্দিন কলুষতা থেকে মহৎলোকে পৌছায় বলে তা আমার কাছে বরণীয়। একটি সুন্দর আদর্শ জীবনের আস্বাদ লাভের জন্যই আমার এ সাধনা। আমার এ প্রচেষ্টা আমার চারপাশকে প্রভাবিত করে এক অনাবিল পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post