'ভাই-বোন' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
ভাই-বোন
    রুনু টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে কী যেন একটা লিখছিল। পাশের খাটে ঘুমিয়ে আছে তার
    ছোট ভাই অন্তু। এতক্ষণ ধরে সে গল্প বলে বলে ভাইটিকে ঘুম পাড়িয়েছে। ও তো শুধু
    তার ভাই নয়, ওই ছোট্ট মুখটি রুনুর কলিজা। ওই মুখের এক টুকরো হাসি রুনুর সারা
    পৃথিবী আনন্দে ভরিয়ে তোলে। এতক্ষনে বোঝা গেল রুনু যা লিখছিল তা ওদের জীবনের
    গল্প। রুনু অন্তুর শুধু বড় বোন নয়, ওর মা'ও বটে। অন্তুর বয়স এই পাঁচ চলে, রুনুর
    ষোল। চার বছর আগে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে তাদের বাবা-মা যখন মারা যান তখন দায়িত্ব
    কাকে বলে রুনু বুঝত না। তবুও সে এক বছর বয়সী ভাইটিকে বুকে তুলে নিয়ে সব শোকে
    ভুলে ছিল। সেই থেকে এই চারটি বছর সে ভাইকে বুকে আগলে রেখেছে। ক্রমে ক্রমে
    কিশোরী মনে মায়ের রূপ উন্মোচিত হয়েছে। আজ সে পরিপূর্ণ স্নেহময়ী জননীর ভূমিকায়।
    এই ভাইয়ের জন্য সে জীবনের সব হাসি-আনন্দ, সাধ-আহ্লাদ ত্যাগ করেছে। নিজের অদম্য
    ইচ্ছায় শুধু পড়াশুনাটা টিকিয়ে রেখেছে। ভাইকে সময় দিতে গিয়ে সেই সময়টুকুও পায়
    না। তারপরও রুনু সুখী। তার ভাইকে সে মনের মতো গড়ে তুলবে। বাবা-মা'র স্বপ্নকে
    বাস্তবে রূপদান করবে। সে অবস্থাসম্পন্ন বাবা-মা'র সন্তান। তাই অনেকেই তাদের
    সহযোগিতার নাম করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। কিন্তু রুনু সেসব স্বার্থান্বেষী
    কঠোরহস্তে দমন করেছে। কিশোরী রুনুর ব্যক্তিত্বের কাছে সবাই পরাজিত হয়েছে। এমন
    সময় অন্তু ঘুমের মধ্য থেকে বলে উঠল, দিদি! রুনুর সমস্ত চিন্তার জাল ছিন্ন হয়ে
    যায় সেই ডাকে। ভাইয়ের মুখের কাছে গিয়ে বলে, কী ভাই! অস্ফুট স্বরে বলে, জল! রুনু
    তখন জল এনে ভাইকে খাইয়ে দেয়। ওড়না দিয়ে স্নেহের পরশে ভাইয়ের মুখটি মুছিয়ে দিয়ে
    তা মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। অপেক্ষা করে সেই প্রভাতের, যে প্রভাতের নতুন
    সূর্য তা ছোট ভাইটির জীবনে সাফল্যের আলোচ্ছাটায় ঝলমলিয়ে দেবে।