শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয় বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি করো। 
  শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয়
  ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের সম্মানিত
  সভাপতি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ, উপস্থিত অভিভাবকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থী
  বন্ধুরা – সবার প্রতি রইল আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
  আপনারা জানেন শিক্ষিত ব্যক্তি একটি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তার পাশাপাশি
  সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবন গঠনের জন্য সুশিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই,
  আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নানা পর্যায়ের নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো
  পর্যন্ত আমরা শিক্ষাব্যবস্থার পর্যাপ্ত উন্নতি সাধন করতে পারিনি। শিক্ষা
  মানবজীবনে কেন প্রয়োজন, সুশিক্ষার তাৎপর্য কী এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন এই
  মুহূর্তে কতখানি প্রাসঙ্গিক ইত্যাদি বিষয়ে এই মুহূর্তে বিস্তারিত আলোচনা করা
  নিষ্প্রয়োজন। সভায় আগত সকলেই এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল
  আছেন বলেই আমার বিশ্বাস।
সুধীবৃন্দ,
  আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। শিক্ষার একটি
  সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা হলো, ‘যা অর্জিত হলে মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত
  পরিবর্তন ঘটবে।’ অর্থাৎ মানুষ সত্যিকারের মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে
  উঠবে। অথচ আমাদের বর্তমান শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো কাঙ্ক্ষিত পেশায়
  নিজেকে নিয়োজিত করা। এটি মানবজীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও শিক্ষা
  গ্রহণের লক্ষ্য কেবল এতেই সীমাবদ্ধ থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
  আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কতখানি সহায়ক
  তা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার এই দুরবস্থার জন্য বেশ কিছু বিষয়
  দায়ী। শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ পঠন পাঠনের পক্ষে আদর্শ হয়ে উঠতে পারেনি।
  অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা উন্নত শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়। তাছাড়া জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে
  ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের যথেষ্ট ইতিবাচক মানসিকতার অভাবকেও এ অবস্থার জন্য
  দায়ী করা যায়।
  ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমাদের এই অবস্থা থেকে বের
  হয়ে আসতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলকে নিজ
  নিজ জায়গা থেকে তাদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে। আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমানে
  শিক্ষাব্যবস্থার অনেকখানি আধুনিকায়ন ঘটেছে, শিক্ষাপদ্ধতি সৃজনশীল রূপ লাভ করেছে।
  ফলে শিক্ষার সুফল লাভ করার প্রশস্ততর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের
  অবশ্যই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
  সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। পাঠ্যবইগুলো অত্যন্ত মনোযোগের সাথে
  পড়ার পাশাপাশি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে বই থেকে অর্জিত জ্ঞানের সংমিশ্রণ
  ঘটাতে হবে। বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় সংবলিত বই পড়ার
  অভ্যাস করতে হবে। মুখস্থবিদ্যার প্রতি ঝোক কমিয়ে বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
  সর্বোপরি পড়াশোনাকে উপভোগ করার চেষ্টা করতে হবে।
সম্মানিত সুধী,
  শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে
  হবে। শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়া যত ভালো হবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানলাভে
  আগ্রহ ততই বাড়বে। নতুন সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের ভালোভাবে জানতে হবে
  এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার যেন যথাযথ
  মূল্যায়ন হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আর এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত
  প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ প্রদানের
  দিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত সন্তানের পড়াশোনার খোজখবর রাখা এবং
  তাকে উৎসাহ প্রদানে সচেষ্ট হতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, পাঠক্রমের
  বাইরের বই নির্বাচন, বিজ্ঞানবিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে
  সন্তানকে সাহায্য করতে হবে।
  সব শেষে বলতে চাই, আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতির আওতায় শিক্ষার্থীদের উন্নত
  পদ্ধতিতে যেসব উন্নত সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী
  ও জীবনমুখী। কিন্তু শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে এই শিক্ষানীতিকে সর্বাত্মকরূপে
  কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সকলের সচেতন প্রয়াসেই শিক্ষার
  মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।