খুদে গল্প : প্রথা

'প্রথা' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

প্রথা

বিয়ের ছয় মাস পরই লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরতে হলো তানিয়াকে। সে ছিল তার বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা একজন কৃষক। অন্যের জমিতে চাষ করে কোনো রকম সংসার চালাতেন তিনি। মেয়ে তানিয়ার বয়স সতেরো পূর্ণ হলো। গরিব ঘরের মেয়ে হলেও তার রূপ লাবণ্যের এতটুকুও ঘাটতি নেই। মেয়ের রূপের বদৌলতে তানিয়ার বাবা পাড়ার যুবক ছেলেদের ভালোই সম্মান পান। চায়ের দোকানে বসলে অন্যজন দাম মেটায়। হাঁটতে চলতে সালামেরও অভাব হয় না।

তানিয়া সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এরপর অর্থসংকটে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এখন সে মায়ের সাথে ঘরের কাজে সাহায্য করে। বাবা-মায়ের আশা ভালো ঘর দেখে তাকে বিয়ে দেবে। ইতোমধ্যে তেমন একটি প্রস্তাব এসে গেল। হাওলাদার বাড়ির মেঝ মিয়ার বড় ছেলের প্রস্তাব গ্রামের প্রভাব প্রতিপত্তি ও অর্থসম্পদে এ পরিবার অনন্য। ছেলেটির নাম আজমত। সাত বছর কুয়েতে ছিল। ভালো টাকা পয়সা রোজগার করে দেশে ফিরেছে। লেখাপড়া তেমন করেনি। দেখতে মোটাসোটা, গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ এবং খাটো। বয়সে তানিয়ার চেয়ে একুশ বছরের বড়। যাহোক, অর্থকড়ি আর প্রতিপত্তি বিচারে এটাই ভালো ঘর বলে বিবেচিত হলো। মহা ধুমধামে বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলো। কনে পক্ষ তেমন কিছু দিতে পারল না। শ্বশুর বাড়িতে তানিয়ার প্রথম পদার্পণ স্বপ্নভরা চোখে। কিভাবে সংসার সাজাবে তার একটি ছক সে মনে মনে ইতোমধ্যে এঁকে ফেলেছে। আনমনে বসে শুধু ভাবে সামনের দিনগুলোর পথচলা কেমন হবে। এমন সময় তার কানে স্পর্শ করে কিছু কথা। কেউ একজন ভেতরে বলছে, 'গরিবের মেয়ে বলে কিছু আবদার করিনি।' 'গরিবের মেয়ে' এবং 'আবদার' শব্দ দুটি এতোক্ষণের স্বপ্নগুলো নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। দেখতে দেখতে দুই মাস অতিবাহিত হলো। তানিয়া স্বামীর পরিবারে সুখ স্বাচ্ছন্দেই কাটাতে থাকে। পরিবারের সকল কাজ একা সেই সামলে নেয়। কিন্তু ঐ যে প্রথম দিনের দুটি শব্দ তার ভেতরে শক্ত করে বাসা বাঁধে। সুখের মাঝেও কি যেন এক শূন্যতা অনুভব করে সে। গরিবের মেয়ে বলে নিজেকে অসহায় ভাবে। একা একা ঘরের এক কোণে বসে অশ্রু বিসর্জন করে। কিন্তু এ পরিবারের একটি প্রাণিও তা অনুভব করতে পারেনি। তার গা সামান্য গরম অনুভূত হয়। এ কথা সে কাউকে বলে না। একদিন বাড়ির উঠানে গৃহস্থালির কাজ চলছিল। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যায় তানিয়া। সকলে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে আসে। মাথায় পানি আর তেল মিশিয়ে দেয়া হয়। জ্ঞান ফেরে তানিয়ার। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বিড় বিড় করে বলে, 'আমি গরিবের মেয়ে আমি গরিবের মেয়ে। কবিরাজ এসে কোনো রোগ ধরতে পারে না। দশ দিন বিছানায় পড়ে থাকে সে। স্বামীকে পাশে ডেকে বলে, 'আমি গরিবের মেয়ে নই, আমার বাবার কাছে অনেক ভালোবাসা আছে। স্নেহ ভালোবাসায় তিনি অনেক ধনী। তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। নিস্তেজ সূর্যের সাথে নিথর হয়ে যায় তানিয়ার দেহ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post