খুদে গল্প : হারানো সম্পর্ক

‘হারানো সম্পর্ক' বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

হারানো সম্পর্ক
ট্রেনের কামরায় হঠাৎ পা ছুঁয়ে সালাম করলেন এক গরিব বৃদ্ধ। ভড়কে গেলেন মাসুদ সাহেব। লোকটিকে কোথায় যেন দেখেছেন বলে মনে হলো। এলোমেলো দাড়ি গোফ আর ময়লা কাপড়ে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ যেতেই মাসুদ সাহেবের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে কোন এক রাতের কথা। যে রাতে কাল বৈশাখীর ঝড় লণ্ডভণ্ড করেছিল পুরো পাঁচদোনা গ্রাম। গ্রামের সকল কাঁচাবাড়ি উপড়ে ফেলেছিল সেই ঝড়। ঘুমন্ত মানুষগুলো অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল বাতাসের তাণ্ডবের কাছে। কারো ঘরের উপর বড় গাছ উপড়ে পড়েছিল। গাছের চাপায় পিষ্ট হয়ে মরেছে কতো যে মানুষ! শুধু কয়েকটি পাকা বাড়ি ছাড়া অধিকাংশ বাড়িঘর কালবৈশাখীর নিষ্ঠুর শিকার হয়। মাসুদ সাহেবের ঘরটি একতলা পাকা বিল্ডিং ছিল। সেই সুবাদে ঝড়ের ধ্বংসলীলা থেকে তিনি ও তার পরিবার রক্ষা পায়। তার বয়স তখন পনের বছর। কিন্তু এখনো তিনি সেই দুঃসহ স্মৃতি ভোলেননি। সে রাত কেটে সকাল হয়। বাইরে বের হয়ে যা দেখলেন তা রীতিমতো লোমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক। পাশের বাড়ির বিধবা সকিনা বেগম একটি বড় গাছের চাপায় মারা গেছে। তার আট বছরের শিশু সন্তানটির লাশ পড়ে আছে একটু দূরে। টিনে কেটে গেছে শিশুটির একটি পা। গ্রামের মানুষগুলোর আহাজারিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল। একটি খোলা মাঠে লাশগুলো সারিবদ্ধ রাখা হয়েছে। জীবিত যারা আছেন তারা স্বজনদের খুঁজতে জড়ো হয়েছে সে মাঠে। কেউ সন্তান হারিয়ে কেউবা স্ত্রী, বাবা-মা হারিয়ে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছে। কিছু লোককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সরকারী বেসরকারী উদ্ধারকর্মীরা আহত অবস্থায় অনেককে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।মাসুদ সাহেব পড়াশোনা শেষ করে এখন একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত আছেন। সেই ভয়াল ঝড়ে তার আপন চাচাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ধরে নিয়েছিলেন তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু আজ প্লাটফর্মের এই লোকটি তাকে বিস্মিত করেছে। খুব ভালো করে অবলোকন করেন তিনি লোকটিকে। লোকটির স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। বড় কোনো আঘাতে এমনটি হয়েছে হয়তো। অনেকটা পাগলই বলা যায়। কাকে কী বলছে বুঝতে পারছে না। দাড়ি গোঁফে একাকার হলেও মাসুদ সাহেব এখন ঠিকই ধরে ফেলেছেন ইনিই হলেন তার সেই হারিয়ে যাওয়া চাচা। বুকে টেনে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পাশের লোকগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছিল সে দৃশ্য।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post