মার্চের দিনগুলি

প্রতিবেদন : সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদন

পত্রিকার সংবাদিক হিসেবে 'সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার' -শিরোনামে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।


সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার

সাকলাইন মোস্তাক : ঢাকা : বাংলা আমাদের প্রানের ভাষা। এ ভাষাই আমাদের অস্তিত্বকে-আমাদের ভাব ভাবনা চিন্তা চেতনাকে প্রকাশ করে। মানুষের অস্তিত্বের অভিজ্ঞান হচ্ছে মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানিদের হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলা ভাষাকে আমাদের পেতে হয়েছে, অথচ সে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে এখনো প্রচলন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশে উচ্চতর শ্রণিতে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীকে বিষয় সংশ্লিষ্ট বইপত্র কিংবা গবেষণামূলক প্রবন্ধ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিদেশি লেখকদের বই অথবা জার্নালের দ্বারস্ত হতে হয়। উচ্চতর পড়ালেখার ক্ষেত্রে বাংলা বই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের পন্ডিত অধ্যাপকবৃন্দের অনীহা অন্যতম প্রধান কারণ। তাছাড়া বিষয়টির সাথে আর্থিক সম্পর্কও জড়িত। তাই বিদেশি কোনো পত্রিকায় যখন দেখি আমাদের দেশের কোনো পন্ডিত গবেষকের লেখা প্রবন্ধে, তখন আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা বিস্ময়াভিভূতও হতে হয় আমাদের। তাঁরা কি পারেন না বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই লিখে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে। 

কেবল শহীদ দিবসে 'একুশে ফেব্রুয়ারি'তে এবং মাঝে মাঝে সেমিনার সিম্পোজিয়াম কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতিতে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে প্রচলনের দাবি দীর্ঘদিনের ধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে তিন দশকের বেশি সময়ের মধ্যেও 'একুশে'র তাৎপর্য ও মর্যাদাকে পুরোপুরি বাস্তবতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার ব্যবহাস সর্বাগ্রে নিশ্চত করতে হবে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নীতি চালু করা যায় নি এখনো। প্রশাসনিক কাজকর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের লক্ষমাত্রা অনেকাংশে পূরণ হবে। অফিস আদালতের কাজকর্মে বাংলা ভাষা চালুর সাংবিধানিক স্বীকৃতি পূর্ণরূপে কার্যকর করার জন্যে ১৯৮৭ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। এটি 'বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭' নামে পরিচিত। এ আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবেই'। একই সাথে (৩) উপধারায় আরো বলা হয়েছে-যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী আইন অমান্য করেন তাহা হইলে উক্ত কার্যের জন্য তিনি সরকারি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির অধীনে অসদাচরণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

এ আইন প্রণয়ন করেও আমাদের দেশে বাঙালির প্রাণের দাবি বাংলা ভাষার প্রচলন সর্বস্তরে করা সম্ভব হয় নি। অফিস-আদালতে সার্বিকভাবে বাংলা ভাষা প্রচলনের পথে বাধা অপসারিত হয় নি। তবে সরকার সচেষ্ট এবং আন্তরিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে এসব বাধা দূর করা সম্ভব। আমরা আশা করি, বাংলা ভাষাভাষী সকলের সদিচ্ছা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একদিন এ দেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটবে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post