খুদে গল্প : জানালার ওপাশে

‘জানালার ওপাশে’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

জানালার ওপাশে

সবাই যখন ক্লাসে নিজের রোল নম্বরটা কীভাবে এক হবে তা-ই নিয়ে ব্যস্ত তখন সাগর সিরিয়ালে সবার শেষে। আমি কখনোই তাকে বা তার পরিবারকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখিনি। হ্যাংলা-পাতলা আবার খুব বেশি লম্বাও নয় সাগর। বেখেয়ালি মনের এই ছেলেটিকেই বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই। পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে তার উদাসীনতা এতই বেশি যে, ময়লা জামার জন্য প্রায় দিনই স্কুলের পিটিতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো ওকে। হেডস্যার তো একদিন সবার কাছে মজা করে বলেই দিলেন স্কুলের একমাত্র ছেলে সাগর যাকে কানে ধরতে না দেখলে তার দিনটাই বিফলে যায়। তাই কোনো কোনো দিন পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে আসার পরও ওকে কান ধরে দাঁড়াতে হতো।

স্কুলে ওর একমাত্র বন্ধু হিসেবে প্রায়ই একটা কথা আমাকে শুনতে হয় সাগর আসলে করে কী? ও ঠিকমতো লেখাপড়া করে না, খেলাধুলা করে না, কখনো আমরা ওকে কোথাও আড্ডাও দিতে দেখিনি। তবে ও করেটা কী? আমি কিছুই বলিনি, বলছে বাংলাদেশের মিডিয়া জগৎ। টানাটানি শুরু হয়ে গেছে ওকে নিয়ে কে আগে প্রচার করবে সাগর নামক এই বিস্ময় বালকের সাক্ষাৎকার। সবেমাত্র দশম শ্রেণিতে ওঠা এই ছেলেটি করেছে এমন একট আবিষ্কার যা কিনা বদলে দেবে গোটা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার চেহারা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছেন তার কার্যালয়ে সাগর ও তার পরিবারকে।

বাংলাদেশের এক বিস্ময় বালক আবিষ্কার করল এমন এক গাড়ি, যা চলবে একদম তেল ছাড়া।হ্যাঁ, আমি বলছি আমার বন্ধু সাগরের কথা, যাকে আমরা সবাই দেখেছিলাম আমাদের দৃষ্টিতে, আমাদেরই গণ্ডির ভেতরে। সচরাচর দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে মনের ভেতরে যে ঘর তৈরি হয় ছোট থেকে, তার থেকে বাইরে আমরা খুব কমই যেতে পারি। আর তাই ঘরের বাইরে জানালার ওপাশে যে একটা বিশাল জগৎ আছে তা দেখলে শুধু অবাক হতে হয়। ঘরের ভেতর থেকে বাইরে তাকাতে জানলে দিনের আলোয় পৃথিবীর অনেক বিচিত্র চরিত্রকেই তুলে আনা যায় মনের আয়নায়। তবে জানালাটা খুলতে হবে, চোখ মেলতে হবে দিনের আলোয় যেভাবে সাগর ঘুরে বেড়াচ্ছে বিবর্ণতা নিয়ে আগামী দিনে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায়।

1 تعليقات

إرسال تعليق
أحدث أقدم