খুদে গল্প : বন্ধু

'বন্ধু' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।

বন্ধু

সাততলার ফ্ল্যাটে একদিন আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমরা মানে আমি, রিফাত, সজল, সরোয়ার, বিপ্লব ও পার্থ। আমরা এই ছয় বন্ধু মিলে এই ফ্ল্যাটটি কিনেছি। আমরা সবাই একসঙ্গে পড়তাম। ঢাকায় যখন আমরা উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে আসি তখন একই কলেজে আমরা ভর্তি হই। সেই থেকেই আমাদের পরিচয় এবং পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধুত্ব। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ মেডিকেলে, কেউ বুয়েটে ভর্তি হই। তারপর কম বেশি সবাই প্রতিষ্ঠিত হই। চাকরি পাওয়ার পর আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। চাকরি ও ব্যবসায়ের কারণে কেউ ঢাকায়, কেউ দিনাজপুরে আর কেউ খুলনায়। হঠাৎ আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা এলো। আমার পরিকল্পনার কথা প্রথম জানালাম রিফাতকে। রিফাতকে বললাম দোস্ত, আমরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় থাকি। সবার সঙ্গে সবার দেখাও তেমন হয় না। আমরা বন্ধুরা মিলে যদি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনি, কেমন হয়? রিফাত এ প্রস্তাবে সানন্দে রাজি। এরপর ক্রমে অন্য বন্ধুরাও ফোন করতে লাগল। প্রস্তাবটি সবার পছন্দ হয়েছে। সেই প্রস্তাব অনুসারে একদিন আমরা সবাই ঢাকায় একত্রিত হয় এবং গুলশানে তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট কিনি। ফ্ল্যাটের দাম আমরা সবাই সমান ভাবেই দিই। তারপর নিজেদের জন্য একটা রুম রেখে বাকি দুটো রুম ভাড়া দেয়। সেই ভাড়ার টাকা আমরা জমা রাখি বিশেষ কোন কাজে লাগাব বলে। গুলশানের সেই ফ্ল্যাটটিতে আমরা সেদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেদিনের আড্ডায় রিফাত দিনাজপুর থেকে এনেছে লিচু, সজন খুলনা থেকে এনেছে নারিকেল, এমনিভাবে প্রত্যেকে নিজ নিজ জেলা থেকে বিখ্যাত খাবারগুলো এনেছে। আমরা সবাই মিলে সেগুলোই খাচ্ছি আর গল্প করছি। প্বার্থ হঠাৎ বলে উঠল, 'আচ্ছা, তোরা সুমনের কোন খবর জানিস?' আমরা সবাই বললাম, না তো। সুমন আমাদের সবার মাঝে মেধাবী ছিল। সুমনের সঙ্গে আমাদের সবার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অনেকদিন থেকে ওর কোনো খোঁজ আমরা পাইনি। এরপর সুমনের কথা বাদ দিয়ে আমরা নানান বিষয় নিয়ে কথা বললাম। আমাদের জমানো টাকা প্রায় ছয় সাত লাখ টাকা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা চিন্তাভাবনা চলছে। এমন সময় সারোয়ার 'ইউরেকা', 'ইউরেকা' বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। সবাই বলল, কী হয়েছে? সারোয়ার বলল সুমনকে পেয়েছি। কোথায়? সারোয়ার বলল, ফেসবুকে। এই দেখ ছবি। আমরা দেখি ফারিয়া নামে একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। নিচে লেখা রয়েছে, 'সুমন হোসেন আমার বাবা। অর্থাভাবে মৃতপ্রায়।' এরপর সবাই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কী হলো সুমনের? ফেসবুকের মাধ্যমেই যোগাযোগ হলো ফারিয়ার সঙ্গে। ফারিয়া সুমনের একমাত্র মেয়ে। পড়াশুনা করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু অসুস্থ পিতার অর্থাভাব ও দারিদ্র্যের কারণে তার পড়াশুনা প্রায় বন্ধ। আমরা সবাই একদিন গেলাম সুমনকে দেখতে। আমরা দেখলাম একেবারে রুগ্ন শীর্ণ প্রায় সুমন। জানলাম সুমনের ক্যান্সার হয়েছে। সুমন একসময় প্রচুর ধূমপান করতো। সে জানালো, বন্ধু আমার অসুখ ভালো হবে না। মৃত্যু আমার নিশ্চিত। কিন্তু কষ্ট হয় মেয়েটার জন্য। আমার চিকিৎসা করাতে ওরা প্রায় নিঃস্ব। এর কিছুদিন পরই সুমন মারা যায়। আমি ও আমার বন্ধুরা একদিন গেলাম সুমনের বাড়িতে। সুমনে স্ত্রী হাতে আমাদের সাততলার সেই ফ্ল্যাটের চাবি ও জমানো টাকা দিয়ে বললাম, আজ থেকে এ টাকা ও ফ্ল্যাট আপনার ও আপনার মেয়ের।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post