প্রতিবেদন : পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণ বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদন

কোনো একটি জাতীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসেবে পানীয় জলে আর্সেনিক সমস্যার ওপর ববস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদনে রচনা করো।


সিংগাইর থানার বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিক দূষণ


নিজস্ব সংবাদদাতা : মানিকগঞ্জ : বহুম সমস্যা আবর্তে জর্জরিত আমাদের এলাকায় আর্সেনিক এ বাংলাদেশ। জনসংখ্যা, দারিদ্র‍্য, বেকারত্ব ইত্যাদি সমস্যার পাশাপাশি সম্প্রতি আরও একটি সমস্যা প্রায় দুর্যোগ আকারে দেখা দিয়েছে, তা হলো আর্সেনিক দূষণ। আর্সেনিক জনস্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি উপাদান, যা মূলত পানিতে মিশে মানবদেহে প্রবেশ করে এবং পরিণামে সৃষ্টি হয় মারাত্মক ব্যাধির, যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। 

আর্সেনিক হচ্ছে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যার কোনী স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ নেই। এটি বিষক্রিয়ার দিক থেকে পারদের চেয়ে চার গুণ বেশি শক্তিশালী। অক্সাইড, সালফাইড ও আর্সেনেট ইত্যাদিরূপে প্রকৃতিতে যৌগ অবস্থায় থাকে। আর্সেনিক আক্রমণের মূল মাধ্যম হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। প্রাকৃতিক নিয়মেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন হাজার হাজার বছর ধরে হিমালয় ও উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিকযুক্ত নুড়ি পাথর নিচে পতিত হয়ে আর্সেনিক যৌগ স্তরের সৃষ্টি হয়েছে। অধিক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে উন্মুক্ত হয়ে গেছে আর্সেনিক যৌগ স্তর। আর এ কারণেই তা ভূগর্ভস্থ পানির সাথে উপরে উঠে আসছে। 

আমাদের দেশে আর্সেনিক সমস্যা উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। বিদেশি কিছু সংস্থার সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মমন্ত্রণালয়ের এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সম্প্রতি আর্সেনিক দূষণের ওপর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদ দিয়ে ব্যাপক জরিপ চালিয়েছে। এতে দেশের ৫৩টি জালায় নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের দূষণমাত্রা গ্রহণসীমার উপরে পাওয়া গেছে।

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার প্রতিটি গ্রামের অধিকাংশ নলকূপেই মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে। ইদানীং কিছু কিছু মানুষের শরীরে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এলাকার মানুষ পানি ভীতিতে দিনাতিপাত করছে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত হওয়ার কারণে আর্সেনিক দূষণ বুঝতে পারে না, তাই তারা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। আবার কেউ কেউ আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ না থাকায় দূষিত পানি পান করছে।

এমতাবস্থায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আরও ব্যাপক কর্মসূচিত মাধ্যমে অশিক্ষিত সাধারণ মানুষদের সচেতন করা প্রয়োজন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেকটি এলাকায় দূষণমুক্ত নলকূপের ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে এ অঞ্চলের কোনো মানুষকেই আর্সেনিকের মতো মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা করা যাবে না।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post