খুদে গল্প : সাফল্য

'সাফল্য' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।

সাফল্য

সুযোগ পেয়েও নীলা মেডিকেল কলেজে পড়েনি বলে মায়ের দুঃখ। খেলাধুলায় নীলার আগ্রহ, পাহাড় তাকে আকর্ষণ করে- তার সাফল্যে একদিন মায়ের দুঃখ ঘুচে যায়। কিন্তু মায়ের এই দুঃখ ঘোচানোর জন্য নীলাকে সহ্য করতে হয় অনেক কষ্ট। খুব ছোটবেলায় মারা যান নীলার বাবা। বাবার স্মৃতি তার পরিষ্কার মনে নেই। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা-ই নীলাকে বাবা ও মা দুজনের স্নেহ দিয়ে বড় করেন। বাবা মারা গেলেও বেশ একটা অর্থকষ্টে পড়তে হয় নি নীলার মা এবং নীলাকে। কারণ বাবা বেশ অর্থসম্পদ সঞ্চয় করেছিলেন। তাই মা সবসময় নীলাকে উৎসাহ দিতেন, 'তোমাকে ডাক্তার হতে হবে। অনেক মানুষের চিকিৎসা করবে তুমি।' নীলা খুব মনযোগ দিয়ে মায়ের কথা শুনত। পড়াশুনাও করতো সে কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। আর তা হলো খেলাধুলা। সে কারণেই পড়াশুনা শেষে একটু সময় পেলে নীলা ছুটে যেত পাহাড়ে। পাহাড়ের অকৃত্রিম সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করত। নীলার মনে হতো এই বুঝি স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। এভাবেই নীলা বেড়ে উঠে। লেখাপড়ার খুব মনোযোগী এবং নিষ্ঠাবান সে। সে কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নীলা পেয়েছে গোল্ডেন A+। নীলার মা ভারি খুশি। এবার তার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পালা। নীলা ডাক্তার হবে এই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। মায়ের ইচ্ছে মতো মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয় নীলা। ভর্তি হওয়ার সুযোগও পায়। নীলা মেডিকেলে ভর্তি হবে এমন সময় সে জানতে পারে এ এলাকায় পাহাড়ে ওঠার প্রতিযোগিতা হবে। গোঠা দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগির মধ্যে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। যে প্রথম হবে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বত জয়ের আসরে। খবরটি শুনে নীলা রোমাঞ্চিত হয়। মেডিকেলে ভর্তি না হয়ে নীলা শুরু করে পাহাড়ে উঠার প্র‍্যাক্টিস। নীলা নিয়ম করে প্রতিদিন এই প্র‍্যাকটিস করে। নীলার মা যখন শুনেছেন যে, নীলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়নি, তখন তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন। নীলাকে বারাবার নিষেদ করেছেন এসব পাগলামি না করার জন্য। কিন্তু নীলার একটাই প্রতিজ্ঞা। যে করেই হোক এই প্রতিযোগিতায় তাকে প্রথম হতেই হবে। এ প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে যেতে পারবে নেপালে। নির্দিষ্ট দিনে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। গোটা দেশ থেকে একশ প্রতিযোগী এসেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এ প্রতিযোগিতা সরাসরি সম্প্রচার করেছে। নীলা তার জানা ও শেখা কৌশল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে পাহাড়ের চূড়ার দিকে। লক্ষ্য তার একটাই যে করে হোক সবার আগে পৌঁছাতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। হঠাৎ নীলা কিছুটা আঘাত পেল। তার পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। তবুও থেমে থাকে না। এ অবস্থায় সবার আগে পৌঁছাতে হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। প্রথম হলো নীলা। গোটা দেশের মানুষ জানল নীলার নাম। নীলা এখন দেশের প্রতিনিধি হয়ে যাবে নেপালে। সারা বিশ্বে নাম হবে নীলার। নীলার এমন জয়ে তার মাও খুশি হয়। তিনি ভুলে গেলেন তার দুঃখ। আর নীলা এখন স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post