বাংলাদেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ

↬ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের প্রস্তাব বহুকালের। নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজনে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি একটি সর্বজনীন দাবি। বিচার বিভাগ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্যতম। গণতন্ত্রের কার্যক্রম বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কেননা, বিচার বিভাগ হচ্ছে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত ও শাসন বিভাগ কর্তৃক কার্যকর আইনের ব্যাখ্যাদাতা। তাছাড়া বিচার বিভাগ সংবিধানের ব্যাখ্যাদাতা এবং অভিভাবকও বটে। দেশের শান্তি ও ন্যায়নীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও অন্যান্য শক্তির প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচার বিভাগ কর্তৃক নির্ভয়ে এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করার স্বাধীনতাকে বোঝায়। অর্থাৎ কোনো বিচার বিভাগকে তখনই স্বাধীন বলা হবে, যখন তা হবে সকল প্রকার বাহ্যিক চাপ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত এবং রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ থেকে পুরোপুরি পৃথক। অন্যভাবে বলা যায়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে এমন একটি ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ; যথা: শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পৃথকভাবে নিজ নিজ ক্ষমতার চর্চা করবে এবং সকল বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষায় সচেষ্ট হবে, যেখানে বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে।

স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয়তা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিচার বিভাগ, বিশেষ করে আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতা একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদে বিচারব্যবস্থাকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। তাই দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক কর্মীরাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সুসংহত করতে নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে শাসক দল স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিজেদের নেতা-কর্মী, আত্মীয়স্বজন এবং যাদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তায় ক্ষমতা লাভ করেছে, তাদের যেকোনোভাবে সাহায্য করতে সচেষ্ট হন। ফলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ এবং অন্যান্য দুষ্কর্মের জন্ম হয়। ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ প্রথমেই তাদের নেতা-কর্মীদের জেল থেকে বের করে আনতে প্রয়াসী হন। ফলে একদল রাজনৈতিক কর্মী জেল থেকে বের হয় তো আরেক দল জেলখানায় প্রবেশ করে। এ সব সম্ভব হয় যেহেতু ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাববলয়ের মধ্যে অবস্থান করে। এ প্রভাববলয়ের বাইরে অবস্থান করাও অধস্তন আদালতের জন্য এক কঠিন কাজ। এজন্য প্রয়োজন স্বাধীন বিচার বিভাগ ।

প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য অপরিহার্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাই নাগরিক স্বাধীনতার সর্বোত্তম গ্যারান্টি। লর্ড ব্রাইসের ভাষায়,
কোনো দেশের সরকারের কৃতিত্ব পরিমাপ করার সর্বোত্তম মাপকাঠি হচ্ছে বিচার বিভাগের দক্ষতা ও যোগ্যতা।

অধ্যাপক লাস্কি বলেন,
রাষ্ট্র কীভাবে তার বিচারকার্য সম্পন্ন করছে, তা জানতে পারলেই রাষ্ট্রের নৈতিক চরিত্রের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ব্যক্তি স্বাধীনতার সংরক্ষণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে স্বাধীন বিচার বিভাগের বিকল্প নেই।


বিচার বিভাগ পৃথককরণের পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাদেশ : বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কথা বলা থাকলেও ভারত বা পাকিস্তানের সংবিধানে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কথা -বলা ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাকিস্তানে ১৯৭৩ সালে এবং ভারতে ১৯৭৪ সালে (অবশ্য কিন্তু কিছু প্রদেশে তারও আগে যেমন পশ্চিমবঙ্গে ১৯৯৭ সালে। বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে। এজন্য ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি (ব্রিটিশ প্রণীত) সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ সংশোধনকরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী কাজ ও বিচারসংক্রান্ত কাজ পৃথক করে ম্যাজিস্ট্রেটদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট- এ দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে এবং বিচার বিভাগের কাজ কেবল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।


পৃথকীকরণ : বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে: পূর্বে ১৯৮৭ সাল ও ১৯৯১ সালে দুবার বিচার বিভাগ কার্যবিধি (সংশোধন) বিল নামে একটি বিল আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তুত করলেও সে বিল আইনে পরিণত পথকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা অজানা কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৮৭ সালে ফৌজদারি করার লক্ষ্যে সংসদে উত্থাপিত হয়নি। সবশেষে ১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন বনাম বাংলাদেশ 

মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরবর্তী সময়ে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা ছিল অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার চারবার এবং জোট সরকার চারবার মোট আটবার সময় নেয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে থেকে।

২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দীন আহমদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করলে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক্করণ প্রক্রিয়া ১৯৯৯ সাল থেকে যেভাবে আটকে ছিল, তা ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে উন্মুক্ত করে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। উল্লেখ্য, ১/১১ এর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর দেশে সংস্কার ও নতুন ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার যে অঙ্গীকার করে, এরই প্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি ২০০৭ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ প্রণীত ও অনুমোদিত চারটি বিধিমালা জারি করেন। বিধি চারটি হচ্ছে:

১. বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন।
২. বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (পে কমিশন)।
৩. বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা এবং 
৪. বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান
এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলি) 

শেষোক্ত বিধি দুটি ১ জুলাই, ২০০৭ থেকে কার্যকর হয়। তাছাড়া ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ফৌজদারি কার্যবিধিতে সংশোধিত অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করে ম্যাজিস্ট্রেসিকে দুভাগে ভাগ করা হয়

এবং এই ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সুপ্রিমকোর্টেরফুল কোর্ট রেফারেন্সে আপীল ও

হাইকোর্টের বিচারপতিগণ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে পৃথকীকরণের লক্ষ্যে সংশোধিত সিআরপিসি ১ নভেম্বর, ২০০৭ থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এভাবেই নির্বাহী

বিভাগ থেকে স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়, যা বাংলাদেশে আইনের শাসন

প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সুবিধা : বিচার বিভাগ পৃথক্করণের ফলে যেসব সুবিধা পাওয়া যেতে পারে সেগুলো হলো :

১. বর্তমানে নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ায় এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়।

২. বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে চলে এলে বিধিবিধান অনুযায়ী বিচারককে সময়ানুযায়ী কোর্টে বসতে হবে এবং তার কাজের জবাবদিহি করতে হবে বিধায় মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে।

৩. বর্তমানে সমন বা ওয়ারেন্ট মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অকার্যকর অবস্থায় থানায় পড়ে থাকে অথচ আসামি দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। পৃথককৃত বিচারব্যবস্থায় পুলিশ কোর্টের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। ফলে এ সমস্যার অনেকখানি সুরাহা হবে।

৪. পৃথককৃত বিচারব্যবস্থায় বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের পূর্ণকালীন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করতে হবে। সে অবস্থায় মূল দায়িত্ব অবহেলা করে বিবিধ দায়িত্ব পালনের কোনো অবকাশ থাকবে না। এতে জনসাধারণ বিশেষভাবে উপকৃত হবে।

৫. পৃথককৃত বিচারব্যবস্থায় বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, ছুটি, অবসর গ্রহণ— সবকিছুই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে মাননীয় বিচারকদের সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। তাছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রেও বর্তমানের মতো কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ফলে মানুষ সঠিক ও দ্রুত বিচার পাওয়ার আশা করতে পারে।

৬. পৃথককৃত বিচারব্যবস্থায় জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেবল আইন বিষয়ে অভিজ্ঞদের বা আইনের জ্ঞানসম্পন্নদের নিয়োগ করা হবে। ফলে ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।

১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায় : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রদান এবং তা রক্ষা করা অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। কারণ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও আরো অনেক ফ্যাক্টর বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে জড়িত। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো :

২. বিচারকদের নিয়োগ : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কর্মদক্ষতা বিচারকদের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। তাই বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া যোগ্য ও মেধাবী লোক নির্বাচন করতে হবে।

৩. বিচারকদের পদোন্নতি : বিচারকগণ যাতে সঠিক সময়ে পদোন্নতি পেতে পারেন এবং যোগ্য লোক যাতে পদোন্নতি পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সঠিক মূল্যায়ন মানুষের কর্মস্পৃহা ও দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করে। আর পদোন্নতি হচ্ছে কারো কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের অন্যতম উপায়।

৪. উপযুক্ত বেতন-ভাতা : নিজেকেসহ পরিবারের যথাযথ ভরণপোষণ মানুষের মৌলিক অধিকার। একটু সম্মান ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবিকা উপার্জনের জন্যই মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়। তাই বিচারকগণ যাতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারেন, সেজন্য যথাযথ বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য পৃথক বেতন স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. কার্যমেয়াদ : বিচারকদের কার্যকালের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে যাতে তারা নিরাপত্তা বোধ করতে পারেন। কার্যকালের স্থায়িত্ব বা নিশ্চয়তা বিচারকদের নির্ভীকভাবে ও নিঃসংশয় চিত্তে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করবে। বিচারকদের সামাজিক মর্যাদা সামাজিক মর্যাদা বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সমাজে বিচারকদের অবস্থান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬. বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য : বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। 

৭. বিচারকদের প্রশিক্ষণ : বিচারকদের উৎকর্ষ ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. বিচারকদের নিরাপত্তা বিচারকদের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ নিরাপত্তার অভাবে অনেক সময় বিচারকগণ ন্যায্য রায় প্রদানে ব্যর্থ হন।

৯. আদালত ভবনের নিরাপত্তা : আদালত ভবনকে সুরক্ষিত করতে হবে, যাতে সেখানে কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তা বজায় থাকে। এতে বিচারকগণ স্বস্তির সাথে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। এজন্য তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হবে না।

১০. বিচারকদের নিঃস্বার্থতা : বিচারক হবেন নিঃস্বার্থ এবং যেকোনো প্রকার ব্যক্তি বা শ্রেণিস্বার্থের ঊর্ধ্বে। এতে তাদের রায়ের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। 

১১. আইন বিষয়ে দক্ষতা : বিচারকগণ আইন বিষয়ে যত দক্ষ হবেন, বিচারকার্যে তত বেশি কর্তৃত্ব
করতে পারবেন। পেশাগত বিষয়ে বিচারকের কর্তৃত্ব বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।

১২. সুশিক্ষিত ও দক্ষ আইনজীবী : আইনজীবীগণ মামলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা আইন বিষয়ে যত বেশি সুশিক্ষিত ও দক্ষ হবেন, বিচারকদের জন্য সঠিক রায় প্রদানে তা তত বেশি সহায়ক হবে। তাছাড়া বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ হ্রাস পাবে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সহায়ক হবে।

সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং গণতন্ত্রকে সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একান্ত প্রয়োজন। তাই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে ফেলতে হবে। আবার বিচার বিভাগকে পৃথক করার পর এর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দায়িত্ব সরকার, বিচারক, জনগণ— সকলের। সরকারকে যেমন এ কাজে বিচার বিভাগকে সাহায্য করতে হবে, তেমনি বিচারকদেরও হতে হবে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও দৃঢ় চারিত্রিক মনোবলসম্পন্ন। অন্যদিকে জনগণকে স্বাধীন বিচার বিভাগের উপযোগিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। এসবের। সমন্বয় না ঘটলে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন ও তা সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বস্তুতপক্ষে, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংরক্ষণ, নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post