ভাবসম্প্রসারণ : বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা / বিপদে আমি না যেন করি ভয়! / দুঃখতাপে ব্যথিত চিত্তে নাইবা দিলে সান্ত্বনা / দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।

বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়! 
দুঃখতাপে ব্যথিত চিত্তে নাইবা দিলে সান্ত্বনা
দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।

মূলভাব : মানুষের জীবনে দুঃখ, জরা, দৈন্য, বিপদ থাকবেই তার জন্য ভয় পেলে চলবে না। বিপদকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে জয় করতে হবে। কবির প্রার্থনা এ জন্য যেন তার মধ্যে দৃঢ় মনোবল থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব : সংসারে দুঃখ আছে, দৈন্য আছে, জীবনে চলার পথে অজস্র বিপদের ঝুঁকি আছে। প্রতি পদক্ষেপে মানুষকে বিপদ অতিক্রম করতে হয়। আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন ও দুঃখ-যন্ত্রণায় সান্ত্বনা দিবেন তা আমরা প্রার্থনা করি না। আমরা প্রার্থনা করি যে, আমাদের দেহে ও মনে এতখানি শক্তি জেগে উঠুক যে আমরা যেন বিপদকে নির্ভয়ে অতিক্রম করতে পারি এবং আপনার শৌর্যের দ্বারা দুঃখকে জয় করে তুলতে পারি। জীবন সংগ্রামে মানুষ যদি নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পলায়নমুখী হয়, তাহলে মানবজীবনের কোনো অর্থই হয় না। বিপদ থেকে দূরে থেকে নির্বিঘ্নে নিরাপদে জীবন কাটানোর মধ্যে কোনো গৌরব নেই; বরং দুঃখকে মোকাবিলা করে, সমস্ত দুঃখকে মাথা পেতে গ্রহণ করে সুখের জন্য যারা জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তারাই সত্যিকার মানুষ। বিপদের দিনে দুঃখে ভেঙে পড়ে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কবি প্রার্থনা জানাননি; বরং তিনি যেন বিপদে কাতর বা অস্থির হয়ে না পড়েন এ প্রার্থনা জানিয়েছেন। দুঃখকে জয় করতে পারাই জীবনের সার্থকতা। আল্লাহ যে মুহূর্তে দুঃখ সৃষ্টি করেছেন, সেই মুহূর্তেই মানুষকে সেই দুঃখ জয় করার সামর্থ্য দান করেছেন। নইলে দুঃখ নিতান্তই অন্যায় ও অসংগত হয়ে দাঁড়াত। সুখের আশায় প্রতিনিয়ত মানুষকে দুঃখের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়, এটিই জীবন। দুঃখকে জয় করে সুখের নাগাল পাওয়ার মধ্যে আনন্দ অন্যরকম। সেই আনন্দ পাওয়ার প্রত্যাশায় মানুষকে সংগ্রাম করতে হবে। দুঃখের সঙ্গে আলিঙ্গন করা মোটেই উচিত নয়। দুঃখ বা বিপদের সময় তাই স্রষ্টার সান্ত্বনা বাক্য কামনা না করে বরং প্রার্থনা করা উচিত আত্মশক্তির। যে আত্মশক্তির দ্বারা সমস্ত দুঃখ দুর্দশা, ব্যথা-বেদনাকে সাহসিকতা দিয়ে সহ্য করা যায়। আর এই আত্মশক্তিই মানুষকে দিতে পারে সঠিক পথনির্দেশনা। দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়েই আমাদেরকে পৌঁছতে হবে সুখের স্বর্ণদ্বীপে।

মন্তব্য : বিপদকে ভয় না পেয়ে বরং বিপদকে মোকাবিলা করেই ছিনিয়ে আনতে হবে সুখ। বিপদে যারা ভয় পায় তারা কখনো সুখের নাগাল পায় না।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন ও দুঃখ-যন্ত্রণায় সান্ত্বনা দিবেন, তা আমরা প্রার্থনা করি না। আমরা প্রার্থনা করি যে, আমাদের দেহে ও মনে এতখানি শক্তি জেগে উঠুক যাতে আমরা বিপদকে নির্ভয়ে অতিক্রম করতে পারি এবং আপনার শৌর্যের দ্বারা দুঃখকে জয় করে তুলতে পারি।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সংসারে জীবন সংগ্রামে আপনার অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে ভুলবে, কারও নিকট সাহায্যের প্রত্যাশা করে আপনার গৌরব ক্ষুন্ন করবে না, দীনতার দ্বারা মনুষ্যত্বকে খর্ব করবে না। আল্লাহ্ জগতে যে মুহূর্তে দুঃখ সৃষ্টি করেছেন, সে মুহূর্তেই মানুষকে সেই দুঃখ জয় করার সামর্থ্য দান করেছেন। নইলে দুঃখ নিতান্ত অন্যায় ও অসঙ্গত হয়ে দাড়াত। এই যে দুঃখের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়, এটাই জীবন। এই সংগ্রাম থেকে অব্যাহতিই মৃত্যু। বীর্যবান ব্যক্তি এই মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করবে না, সে যুদ্ধক্ষেত্রের রণোন্মাদনায় মহোৎসব করতে থাকবে। এই উৎসবের ভিতর যে একটা আনন্দ আছে তা তারই নিজস্ব, তা ভীরু বা কাপরুষের জন্য নয়। এ আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। তারপর যুদ্ধ জয়ের অপরিসীম উল্লাস যেদিন সেই বিজয়ীর দেহ-মনে শিহরণ জাগিয়ে তুলবে সেদিন তার সকল ক্লান্তিরই অবসান ঘটবে। একটা নব জীবনের আনন্দধারায় দান করে সে ধন্য হবে। দুঃখের আপাত ভীষণ মূর্তি দেখে সে এই অনুভূতি আনন্দের আশোকে বিসর্জন দিবে কেন?

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post