প্রতিবেদন : রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্টানের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।


৮ই মে, ২০১৯

বরাবর
প্রধান শিক্ষক 
জয়পুরহাট সরকারি স্কুল
জয়পুরহাট।

বিষয় : রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবেদন।

জনাব,
সম্প্রতি জয়পুরহাট সরকারি স্কুলে রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান সম্পর্কে আদিষ্ট (আদেশ নম্বর: জ/স/র/জ/২০১৯/০৫) হয়ে নিম্নলিখিত প্রতিবেদন পেশ করছি।

রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উদযাপন

গত ৭ই মে ২০১৯ (২৫শে বৈশাখ, ১৪২৬) ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪ তম জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথের এ জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ এলাকার রবীন্দ্রপ্রেমী জনগণ জয়পুরহাট সরকারি স্কুল প্রাঙ্গনে সেমিনার, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. করুণাময় গোস্বামী। 

প্রধান অতিথি তাঁর ভাষণে বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিচিত্ররূপের সমাবেশ নিজেকে দেখেছেন। প্রাণের অপূর্বতা নিয়ে তাঁর অনন্য সৃষ্টিসমূহ আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। অন্তরের সুব্যপ্ত তাগিদে আবহমান কালের মানুষের সান্নিধ্য অনুভব করেছেন তিনি।

ড. গোস্বামী বলেন, সবরকম তুচ্ছতা, সংকীর্ণতা এবং সম্প্রদায়গত সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজীবন ব্রতী ছিলেন অনির্বাণ প্রদীপ জ্বালানোর সাধনায়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি ওবায়েদ আকাশ, কবি সৈয়দ সারোয়ার, কবি গাউসুর রহমান ও কবি সেলিম মাহমুদ।

কবি ওবায়েদ আকাশ বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার শক্তিকে প্রমাণ করেছেন। তিনি অমর। তিনি ছিলেন আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ। 

কবি গাউসুর রহমান বলেন, দ্বীপের চারদিকে যেমন থাকে জল আমাদের চারদিকেও তেমনই রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন ধ্যানস্থ, আত্মস্থ, চেতনায় গভীর মগ্ন। কার ধ্যান করতেন তিনি? শূন্যতার?  অসীমের? সে শূন্যতাও ছিল বাঙ্গময়, রূপময়। নিরুদ্দেশ সৌন্দর্যের উপসাক ছিলেন তিনি। নির্ঝরের মতো চলছে লেখা, গানও চলছে ফাঁকে ফাঁকে। সুর দেওয়া, নাটকের মহড়া, পড়া এবং পড়ানোও চলছে এরই মধ্যে- এ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। 

তিনি বলেন, কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, পর্যটক, গায়ক, সুরস্রষ্টা, শিক্ষক এ মানুষটির তুলনা আমরা আর খুঁজে পাই না। 

সেলিম মাহমুদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ পার্থিব দেহ ছেড়েছেন কবেই। কিন্তু আজও কতভাবে বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে আছেন তিনি। কত স্মরণে, সৃজনশীলতায়, মননে, উচ্চারণে এত জীবন্ত আর কাউক্ব ভাবা যায় না। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একবার নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। আরও কয়েকবার পেতে পারতেন। গল্পগুচ্ছের জন্যে অন্তত আরও একবার তো বটেই।

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন, কবি হিমেল বরকত, বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক সাইফুন নাহার ও এনায়েত উল্লাহ। 

কবি হিমেল বরকত বলেন, নিস্তব্ধতার সংগীত সৃষ্টি হয় রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষের জন্যেই। অপরূপের গর্ভে জন্মায় রূপ। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন তাই অনড় মহীরূহের মতো।

সভাপতির ভাষণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, রবীন্দ্রনাথ দর্শন ছিল ’যেখানে বন্ধু পাই, সেখানেই নবজন্ম ঘঠে।’ তিনি অনুভব করেছিলেন, ‘এখনও হয় নি খোলা আমার জীবন আবরণ, সম্পূর্ণ যে আমি রয়েছে গোপনে আগোচর।’

তিনি বলেন, রবীন্দ্র অনুধ্যান ও রবীন্দ্র জীবন দর্শন বিশ্লেষণের জন্যে আজও সারস্বত সাধনা অবিরত চলছে। এ এক সুস্থ অন্বেষণ। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথের উজ্জ্বল সৃষ্টিশীলতার, মননশীলতার প্রদীপ জ্বালাতে পারি, তাহলে সামাজিক তমসা অনেকটা অপসারিত করতে পারব। 

সেমিনার শেষে বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী ও ফাহমিদা খাতুন পরিবেশিত রবীন্দ্রসংগীত এবং আবৃত্তিকার ঝর্ণা সরকারের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতার আবৃত্তি।

এ উপলক্ষে আয়োজিত স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে স্থানীয় তরুণ কবিরা অংশ নেন। সমগ্র অনুষ্টান উপস্থাপনা করেন সহকারী শিক্ষক শহীদ খান।

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা: শ্রাবণ আহসান; ২২ মাস্টারপাড়া, জয়পুরহাট। 
প্রতিবেদনের শিরোনাম: রবীন্দ্রনাথ জন্মজয়ন্তী উদযাপন।
প্রতিবেদন তৈরির সময়: দুপুর ২টা।
তারিখ: ৮ই মে, ২০১৯।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post