৯ম শ্রেণি : হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা : ১০ম সপ্তাহ : ২০২১

৯ম শ্রেণি : হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা : ১০ম সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : তোমার হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে বর্ণিত দেব-দেবীর মধ্যে যেকোনো ২জন দেবতার উপাসনা কর। উপাসনা শেষে নিম্ন লিখিত সংকেত ব্যবহার করে ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

সংকেত :
১. দেব-দেবীর নাম
২. আরাধনার প্রস্তুতি ও উপকরণ
৩. মন্ত্র
৪. আরাধনার উপায়
৫. আরাধনা শেষে তোমার শারীরিক ও মানসিক অনুভূতি
৬. এই আরাধনা কেন প্রয়োজন

নমুনা সমাধান

দেবদেবীর নাম : দেব দেবী ঈশ্বরের সাকার রূপ। ঈশ্বর নিজের কোন গুণ বা ক্ষমতাকে বিশেষ আকার বা রূপে প্রকাশ করেন। যেমন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর দুর্গা সরস্বতী প্রভৃতি ঈশ্বরের বিশেষ গুণ বা ক্ষমতাকে ধারণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণুর পালনকর্তা, সরস্বতী বিদ্যার দেবী, লক্ষ্মী ধন-সম্পদের ও ভাগ্যের দেবী, শিব প্রলয়ের দেবতা ইত্যাদি। তবে এসব দেবদেবী মানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, কালী, সরস্বতী প্রভৃতি এক ঈশ্বরের বিভিন্ন সাকার রূপ। এছাড়াও রয়েছেন আরো অনেক দেবদেবী যেমন গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, মনসা, শনিদেব প্রভৃতি।

নারায়ণ আরাধনা প্রস্তুতি ও উপকরণ : প্রতিমা রূপে, শালগ্রাম শিলা রূপে, তাম্রপাত্রে নারায়ণ পূজা করা হয়। শালগ্রাম শিলা এক প্রকার সামুদ্রিক জীবাশ্ম। ভারতের গণ্ডকী নদী তীরে শালগ্রাম নামক গ্রামে পাওয়া যায়। এই যে জীবাশ্ম টি গোল ও কালো রঙের হয়ে থাকে। এই শিলা কে নারায়ণ চক্র ও বলা হয়। নারায়ণ পূজা অন্যান্য পূজার মত সাধারন পূজা বিধি অনুসরণ করতে হয়। তারপর বিশেষভাবে নির্ধারিত মন্ত্রে নারায়ণের পূজা করা হয়। সাধারণত নারায়ণ পূজার জন্য সাদা ফুলের প্রয়োজন হয় তুলসী পাতা নারায়ণের প্রিয়।

নারায়ণের প্রণামমন্ত্র : 

"ওঁর নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ।
জগদ্বিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায নমো নমঃ।"

সরলার্থ : নারায়ন ব্রহ্মণ্যদেব। তিনি কৃষ্ণ, তিনি গোবিন্দ। তিনি পৃথিবী, ব্রাহ্মণ ও জগতের হিতে সাধন করেন। তাঁকে বারবার নমস্কার জানাই।

শনিদেবের আরাধনার প্রস্তুতি ও উপকরণ : শনিদেবের পূজা পদ্ধতি সাধারণত মন্দিরে বা পারিবারিক পর্যায়ে সূর্যাস্তের পরে শনি পূজা করা হয়। অন্যান্য পূজার মতো সকল ধরনের বিধান অনুসরণ করা হয়। পারিবারিক পর্যায়ে শনি পূজার ক্ষেত্রে বাড়ির আঙিনা কে বেছে নেওয়া হয়। গৃহের অভ্যন্তরে শনি পূজা করা হয় না। পূজার মন্ত্র ও শনিদেবের পাঁচালী পাঠ করা হয়। পাড়া-প্রতিবেশীদের পূজা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। শনি পূজায় ভোগ হিসেবে পাঁচ প্রকারের ঋতুভিত্তিক ফল নিবেদন করা হয়। কোন কোন অঞ্চলে খিচুড়ি, দুধ, চিনি, বাতাসা কলা, গুড়, মিষ্টান্ন বা ময়দার প্রসাদ তৈরি করা হয়। খিচুড়ি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মুগের ডাল ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও পূজার উপকরণ হিসেবে পান-সুপারি, মধু, মাসকলাই, বেগুনি বা কালো রংয়ের ফুলের প্রয়োজন হয়। শনি পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

শনিদেবের প্রণামমন্ত্র :
"ওঁ নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যাং রবিসূতমহাগ্রহম।
ছায়ায়া গর্ভস্যুতং ত্বং নমামি শনৈশ্চর।"

সরলার্থ : তোমার দেহ নীল বর্ণ। তুমি সূর্য দেবতার পুএ, ছায়ার গর্ভে তোমার জন্ম ।তোমাকে আমি নমস্কার জানাই ।

আরাধনার উপায় : পূজা করা, জপ ধ্যান বা যোগ সাধনা, তন্ত্র সাধনা প্রবৃত্তি ।এছাড়াও দেবদেবীর উদ্দেশ্যে মন্ত্র পাঠ, প্রার্থনা মন্ত্র, পুষ্পাঞ্জলী প্রদান প্রণাম মন্ত্র পাঠ, আরতি গান কীর্তন প্রভৃতি উপাসনার উপায় হিসেবে ধরা হয়। এ বাহ্য আচরণের মাধ্যমে মূলত অন্তরের ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ইষ্ট দেবতার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়। উপাসনা ও প্রার্থনার জন্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে অনেক মন্ত্র বা শ্লোক রয়েছে। সেগুলো আবৃত্তি করে উপাসনা করা হয় বা প্রার্থনা জানানো হয়।

আরাধনা শেষে আমার শারীরিক ও মানসিক অনুভূতি : ঈশ্বরের আরাধনা মানসিক অবস্থার উন্নতি করে। আরাধনা শেষে আমি মানসিক প্রশান্তি লাভ করেছি। মনের কুটিলতা দূর হয়েছে এবং মনকে সুস্থ মনে হয়েছে। মনকে যেন সবসময় সত্যের পথে পরিচালিত করি এমন ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে। উপাসনার ফলে আমার মনের কামনা, বাসনা, তৃষ্ণা, অহমিকা, আমিত্ব, হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়েছে বলে বোধ করছি।

আরাধনা প্রয়োজনীয়তা :

১) হৃদয় পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করা : ঈশ্বরের আরাধনা হৃদয়কে পরিশুদ্ধ পবিত্র করে এবং সুন্দর অনুভূতির সৃষ্টি করে। 

২) মনের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করা : আরাধনা মনের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে। মনের আবেগকে পরিশুদ্ধ, উন্নত ও নিয়ন্ত্রণ করে।

৩) ভক্তদের মনে ঈশ্বরের উপস্থিতি সৃষ্টি করা : উপাসনা ভক্তদের ঈশ্বরের কাছাকাছি অবস্থানে সুযোগ করে দেয় এবং ধর্মীয় বিষয়ে গভীর চেতনার সৃষ্টি করে।

৪) মোক্ষলাভ : মোক্ষ অর্থ চিরমুক্তি। দেহান্তরের মধ্য দিয়ে জীবাত্মা একদেহ থেকে অন্য দেহে যায়। কিন্তু পূণ্য বলে একসময় আর দেহান্তর হয়না। তখন জীবাত্মাকে আর অন্য দেহে যেতে হয়না। জীবাত্মা ও পরমাত্মা লীন হয়ে যায়। তখন আর পুনর্জন্ম হয় না। একে বলে মোক্ষলাভ। উপাসনার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ শেষে মোক্ষলাভ।


আরো দেখুন :
১০ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post