ভাবসম্প্রসারণ : সত্যমূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি / ভালো নয় ভালো নয়, নকল সে সৌখিন মজদুরি

সত্যমূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি
ভালো নয় ভালো নয়, নকল সে সৌখিন মজদুরি

মূলভাব : খ্যাতিমান কোনো সাহিত্যিকের খ্যাতিকে পুঁজি করে তার সাহিত্য-কর্মের ভাব ও বিষয়ের অনুকরণ করা চুরিরই শামিল। আর এ নকল প্রক্রিয়ার মজদুরি একেবারেই নিরর্থক।

সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায় থেকেই মানুষ নানারকম শিল্পকর্ম ও সাহিত্যকর্মের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তখন থেকেই মানুষ তার মনের ভাবনা, জীবনাপলব্ধি, জীবনজিজ্ঞাসা, সৌন্দর্যেবোধ মানসকল্পনার দ্বারা সাহিত্যে রূপ দিতে থাকে। তখন কেবল নিজের অন্তরাত্মার তৃপ্তি এবং অবসর বিনোদনের লক্ষ্যে সাহিত্যকর্ম সম্পাদান করলেও বহু মানুষ কেবল তাদের সাহিত্য-কর্মের দ্বারা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। প্রাচীন গ্রিসের সেই হোমার, সফোক্লিস থেকে শুরু করে আজকের বাংলা সাহিত্যের নজরুল-রবীন্দ্রনাথসহ বহু সাহিত্যেক এর আদর্শ উদাহারন। কিন্তু এসব জগদ্বিখ্যাত সাহিত্যিকের খ্যাতিকে পুঁজি করে একশ্রেনীর মানুষ সাহিত্য-সাধনায় আত্মনিয়োগ করে। কিন্তু এসব মানুষের সাহিত্য-চর্চা সত্যিকারের সাহিত্য-সাধনা তো নয়ই, বরং তা অন্যের জিনিস চুরি ও নকল করার সমতুল্য। এ নকল বা চুরি তার কোনো কাজেই আসে না। হতে পারে তা শৌখিন মজদুরি, কিন্তু সে শ্রমের কোনো মূল্য নেই; তা একেবারেই পন্ডশ্রম। কারণ এ নকল-প্রবণতা তাকে কখনোই সাহিত্যাঙ্গনে খ্যাতিমান করে তুলতে পারে না; বরং এটি তাকে নিন্দিতই করে তোলে। তা সত্যকে মেনে নিয়ে পূর্ববর্তী খ্যাতিমান সাহিত্যকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আপন গতিতে সাহিত্য-সাধনা করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে নিজের সাহিত্য-কর্ম পাঠক-মনে উপযোগিতা সৃষ্টি করতে পারলে অবশ্যই সাহিত্যিক খ্যাতি লাভ করা যাবে।

মন্তব্য : অন্যের অনুকরণ না করে নিজের জীবনবোধ, সত্যোপলব্ধি, সৌন্দর্যবোধ, জীবনজিজ্ঞাসা প্রভৃতির সঙ্গে মননশীল চিন্তা ও কল্পনার সমন্বয় ঘটিয়ে সাহিত্য-সাধনা করতে হবে। তবেই মানুষের সাহিত্য-সাধনা। স্বমহিমায় তাৎপর্যমন্ডিত হয়ে উঠবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post