ভাবসম্প্রসারণ : প্রথম যেদিন তুমি এসেছিল ভবে, / তুমি মাত্র কেঁদেছিলে, হেসেছিল সবে। / এমন জীবন হবে করিতে গঠন / মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।

প্রথম যেদিন তুমি এসেছিল ভবে,
তুমি মাত্র কেঁদেছিলে, হেসেছিল সবে।
এমন জীবন হবে করিতে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন।

মূলভাব : মানবশিশু যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয় তখন অজানা-অচেনা পরিবেশে সে আর্তচিৎকার দ্বারা তার আগমনবার্তা সবাইকে জানিয়ে দেয়। অন্যদিকে তাকে পাওয়ার আনন্দে সবাই হয়ে ওঠে আত্মহারা। তাই মানুষের উচিত মহৎকর্ম দিয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাতে তার মৃত্যুতে তাকে হারানোর বেদনায় জগদ্বাসী আর্তনাদ করে এবং তা দেখে সে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানবশিশুর শুভাগমনে পরিবার পরিজন তথা পরিপাশ্বের মানুষেরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ আনন্দ স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে বা। কারণ অধিকাংশ মানবশিশু বড় হয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও মহৎকর্মের মধ্য দিয়ে জীবনে সার্থকতা লাভে ব্যর্থ হয়। দুঃখ-দৈন্য, অভাব-অভিযোগ, পরিবেশ-প্রতিবেশির নেতিবাচক প্রভাব, নিজের কুপ্রবৃত্তির তাড়না প্রভৃতি কারণে অধিকাংশ মানুষের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু এসব নেতিবাচকের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে যারা সম্মুখে অগ্রসর হন তারাই পারেন নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। এ শ্রেণির মানুষ একদিকে শিল্প-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করেন, অন্যদিকে দুঃখ দৈন্য, হতাশা-ব্যর্থতা এসবের সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করে থাকেন। আর এঁরা কেবল নিজের জীবনকেই সুন্দর ও শোভনীয় করে গড়ে তুলেন না; বরং সমাজকেও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এঁদের কেউ কেউ নব নব আবিষ্কারের দ্বারা সমাজের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন; কেউবা সমাজ সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন; আবার কেউ কেউ সমাজ থেকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস প্রভৃতি দূর করার কাজে ব্রতী হন। কারণ এরা জানেন যে, ফুলের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যে যেমন ফুলের বাগান ও গাছের যথাযথ পরিচর্যা আবশ্যক, তেমনি ব্যক্তির নিজের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে হলে কিংবা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে জীবনের বিচরণক্ষেত্র তথা সমাজকেও সুন্দর করে গড়ে তোলা দরকার। তাই তো এরা মানবকল্যাণ তথা দেশের সেবায় হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সমাজ এমন মহৎ প্রাণ ব্যক্তিদের মৃত্যুতে হত বেদনাহত। আর সে বেদনায় রেশ থাকে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। আমাদের উচিত এ শ্রেণির মানুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানবকল্যানে আত্মনিয়োগ করে পৃথিবীতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

মন্তব্য : মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে যারা সুন্দর ও সফলভাবে গড়ে তুলতে পারেন তাদের মৃত্যু জীবনের পরিসমাপ্তি নয়, বরং অমরত্ব লাভের সোপানমাত্র।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post