ব্যাকরণ : উপসর্গ

উপসর্গ

উপসর্গ কাকে বলে?
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি অন্য অর্থপূর্ণ শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠণ করে সেগুলোকে উপসর্গ বলে। উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অন্য শব্দের আগে বসলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। উপসর্গ যুক্ত হয়ে শব্দের বৈচিত্র্য বা পরিবর্তন আনয়ন করে। উপসর্গযোগে ভিন্নার্থক পৃথক পৃথক শব্দ গঠন করা যায়। এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে, উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যাতকতা আছে।

উপসর্গকে ইংরেজি গ্রামারের ভাষায় বলে Prefix.

উপসর্গের প্রভাবে শব্দের কয়েক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন—

(১) নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়।
(২) শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয়।
(৩) শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে।
(৪) শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে।
(৫) শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
(৬) শব্দের বিপরীতার্থক পরিবর্তন আনতে পারে।
(৭) শব্দের সংগঠনগত পরিবর্তন হতে পারে।

বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের উপসর্গ আছে। যথা : খাঁটি বাংলা, তৎসম বা সংস্কৃত ও বিদেশী উপসর্গ।

খাঁটি বাংলা উপসর্গ 
যে উপসর্গুলো সাধারণত খাঁটি বাংলা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করে তাদেরকে খাঁটি বাংলা উপসর্গ বলে। খাঁটি বাংলা উপসর্গের সংখ্যা মোট একুশটি। যথা—

অ/ অঘা / অজ / অনা / আ / আড় / আন / আব / ইতি / উন (ঊনা) / কদ্ / কু / নি / পাতি / বি / ভর / রাম / স / সা / সু / হা /

তৎসম উপসর্গ :
যে উপসর্গুলো সাধারণত তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করে তাদেরকে তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ বলে। বাংলা ভাষায় বহু তৎসম শব্দ হুবহু ব্যবহৃত হয়। এসব শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত উপসর্গ আগে বসে নতুন রূপে অর্থের সংকোচন – সম্প্রসারণ করে থাকে। তৎসম উপসর্গ মোট কুড়িটি। যথা—

প্র / পরা / অপ / সম / নি / অব / অনু / নির / দুর / বি / অধি / সু / উৎ / পরি / প্রতি / অপি / উপ / অভি / অতি / আ /


বিদেশী উপসর্গ :
যে উপসর্গগুলো বিদেশী শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে, তাদেরকে বিদেশী উপসর্গ বলে। বাংলা ভাষায় বহু বিদেশী শব্দের ব্যবহার আছে। যেমন— বেমালুম শব্দটিতে ' মালুম ' আরবি শব্দটির আগে ' বে ' ফারসি উপসর্গ টি যুক্ত হয়েছে। এরূপ আরো: বেহায়া, বেনজির, বেশরম, বেকার ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কিছু বিদেশী উপসর্গ দেখানো হল:

(১) আরবি উপসর্গ : যে অর্থে ব্যবহৃত হয়—

গর > অভাব অর্থে — উদা: গর–হাজির, গর–রাজি, গরমিল।
লা > না অর্থে — উদা: লাপাত্তা, লাখেরাজ, লাওয়ারিশ।
আম > সাধারন অর্থে — উদা: আমদরবার, আমমুক্তার।
খাস > বিশেষ অর্থে — উদা: খাসদরবার, খাসমহল, খাসজমি।
খয়ের > ভাল অর্থে — উদা: খয়ের খাঁ।
বাজে > বিবিধ অর্থে — উদা: বাজেকথা, বাজেকলম।

(২) ইংরেজি উপসর্গ : যে অর্থে ব্যবহার হয়—

হাফ > আধা অর্থে — উদা: হাফস্কুল, হাফহাত।
হেড > প্রধান অর্থে — উদা: হেডপণ্ডিত, হেডঅফিস, হেডমাস্টার।
ফুল > পূর্ণ অর্থে — উদা: ফুলপ্যান্ট, ফুলমোজা।
সাব > অধীন অর্থে — উদা: সাব–জর্জ, সাব–ইন্সপেক্টর।

(৩) হিন্দি উপসর্গ : যে অর্থে ব্যবহৃত হয়—

হর > প্রত্যেক অর্থে — উদা: হররোজ, হরকিসিম, হরহামেশা।

(৪) ফারসি উপসর্গ : যে অর্থে ব্যবহৃত হয়—

না > না অর্থে — উদা: নারাজ, নাখোশ, নামঞ্জুর।
নিম > আধা অর্থে — উদা: নিমক্ষণ, নিমরাজি, নিমকাজ।
ব > সহিত অর্থে — উদা: বনাম, বকলম, বমাল।
বর > বাহিরে/মধ্য অর্থে — উদা: বরখেলাপ, বরদাস্ত, বরখাস্ত।
বে > না অর্থে — উদা: বেআদব, বেশরম, বেরহম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post