ব্যাকরণ : শব্দের শ্রেণিবিভাগ : গঠন অনুসারে

শব্দের শ্রেণিবিভাগ 
গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব। যেমন— শব্দগুলো কোন উৎস থেকে এসেছে অথবা কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে কিংবা কোন ধরনের অর্থ প্রকাশ করছে। শব্দের শ্রেণিবিভাগের প্রক্রিয়া তিনটি। যথা:—

১. উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ : 
(ক) তদ্ভব 
(খ) তৎসম
(গ) অর্ধ—তৎসম
(ঘ) দেশি এবং 
(ঙ) বিদেশী শব্দ

২. গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ :
(ক) মৌলিক শব্দ 
(খ) সাধিত শব্দ 

৩. অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ :
(ক) যৌগিক শব্দ
(খ) রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ এবং
(গ) যোগরূঢ় শব্দ 

গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ

একটি শব্দ কিভাবে গঠিত হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি, শব্দ দু' রকম :

ক) মৌলিক শব্দ এবং
(খ) সাধিত শব্দ

মৌলিক শব্দ : যে—সব শব্দ বিশ্লেষণ করা বা ভাঙা যায় না, গোটা শব্দটাই নিজে নিজেই সম্পূর্ণ  হয়ে আছে বা স্বয়ংসিদ্ধ, তাকে মৌলিক শব্দ বলে।

মৌলিক শব্দ ভাঙতে চাইলেও তার ভগ্ন বা বিশ্লিষ্ট অংশের কোনো অর্থ হয় না; সে কারণে অবিভাজ্য ও অর্থযুক্ত শব্দই মৌলিক শব্দ অর্থাৎ স্পস্ট অর্থ ও অবিভাজ্যতাই মৌলিক শব্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মৌলিক শব্দগুলোই হচ্ছে ভাষার মূল উপকরণ। মৌলিক শব্দকে সিদ্ধ শব্দ বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দও বলা হয়। উদাহরণ— গোলাপ, নাক, লাল, তিন, মা, পা, ঘোড়া, উট, বউ, লতা ইত্যাদি। 

সংস্কৃত থেকে আগত তৎসম শব্দ, বা তা থেকে উদ্ভূত তদ্ভব শব্দ, এমনকি বাংলায় চালু বিদেশী শব্দও মৌলিক শব্দ হতে পারে। যেমন— হস্ত, মানুষ, চাঁদ, প্রিন্টার, দাম ইত্যাদি। 

সাধিত শব্দ : যে—সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় বা ভাঙা যায় এবং ভগ্ন অংশের সুস্পষ্ট অর্থ থাকে, সেরকম বিভাজ্য শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। 

মৌলিক শব্দ থেকেই সাধারণত সাধিত শব্দ গঠন করা হয়। সাধিত শব্দ মাত্রই বিশ্লেষযোগ্য। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয় থাকে। উদাহরণ— 

(১) উপসর্গ যোগ করে : অকাজ (অ+কাজ), এখানে ‘অ’ উপসর্গ।

(২) নাম প্রকৃতির সাথে শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি যোগ করে। মানুষকে (মানুষ + কে), এখানে ‘মানুষ’ নাম প্রকৃতি এবং ‘কে’ শব্দ বিভক্তি। 

(৩) ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে— পড়া (পড় + আ), এখানে ‘পড়’ ধাতু এবং ‘আ’ কৃৎ প্রত্যয়।

(৪) শব্দের সাথে তদ্ধিত প্রত্যয় যোগ করে— ঢাকাই (ঢাকা + আই), এখানে ‘ঢাকা’ একটি শব্দ এবং ‘আই’ তদ্ধিত প্রত্যয়। এরকম আরোঃ মেঘলা (মেঘ + লা)।

(৫) সমাসবদ্ধ করে— রাজপুত্র (রাজার পুত্র),  নীলাকাশ (নীল যে আকাশ) ইত্যাদি। 

এছাড়া— দয়ালু, জমিদার, দায়িত্ব, চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), ডুবুরি (ডুব্ + উরি), চলন্ত (চল্ + অন্ত), প্রশাসন (প্র + শাসন), গরমিল (গর + মিল) ইত্যাদি সাধিত শব্দের উদাহরণ।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post