সাধারণ জ্ঞান : কবি-সাহিত্যিক

।।এক।।
জসীমউদ্দীন
(১৯০৩-১৯৭৬ খ্রি.)
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি 'পল্লিকবি' নামে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের লেকচারার ছিলেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক 'ডি-লিট' ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ 'একুশে পদক' লাভ করেন।১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ তিনি ঢাকায় পরলোকগমন করেন।

কাব্যগ্রন্থ
রাখালী — কবির প্রথম গ্রন্থ তথা কাব্যগ্রন্থ
নকশী কাঁথার মাঠ — কবির শ্রেষ্ঠ কাহিনীকাব্য। ইংরেজি অনুবাদের নাম 'Field of the Embroidery Quilt'. এর অনুবাদক EM Milford

এছাড়া সোজন বাদিয়ার ঘাট, বালুচর, মাটির কান্না, মা জননী কান্দে, ধানখেত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

নাটক
বেদের মেয়ে (গীতিনাট্য)

উপন্যাস
একমাত্র উপন্যাস 'বোবা কাহিনী'।

গানের সংকলন
রঙিলা নায়ের মাঝি, গাঙ্গের পাড় ইত্যাদি।

জসীমউদ্দীন তার বন্ধুকে কাজল গাঁয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।

।।দুই।।
সৈয়দ মুজতবা আলী
(১৯০৪-১৯৭৪ খ্রি.)
সৈয়দ মুজতবা আলী রম্য রচনার লেখক হিসেবে সুপরিচিত। কাজী নজরুল ইসলামের পর তিনি বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি আরবি-ফারসী শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।

জন্মস্থান
করিমগঞ্জ, সিলেট।

রম্যগল্প
পঞ্চতন্ত্র, চাচা-কাহিনী

উপন্যাস
অবিশ্বাস্য, শবনম

ভ্রমণকাহিনী
দেশে বিদেশে — গ্রন্থটিতে কাবুল শহরের কাহিনী প্রধান্য পেয়েছে। সাংবাদিক নজেস আফরোজ In A Land Far from Home:A Bengali in Afghanistan নামে বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

।।তিন।।
বুদ্ধদেব বসু
(১৯০৮-১৯৭৪ খ্রি.)
তিরিশ দশকের কবি হিসেবে বুদ্ধদেব বসু খ্যাত ছিলেন। তিনি 'প্রগতি' 'কবিতা' পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে থাকার সময় তিনি 'বাসন্তিকা' পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। রবীন্দ্রনাথের পর বুদ্ধদেব বসুকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়।

জন্মস্থান
কুমিল্লা জেলা।

কাব্যগ্রন্থ
বন্দীর বন্দনা, কঙ্কাবতী, যে আঁধার আলোর অধিক, স্বাগত বিদায়।

উপন্যাস
তিথিডোর, জঙ্গম ইত্যাদি।

প্রবন্ধ
হঠাৎ আলোর ঝলকানি।

।।চার।।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
(১৯০৮-১৯৫৬ খ্রি.)
১৯০৮ সালে ১৯ মে ভারতের বিহারে (বর্তমান ঝাড়খণ্ডের দুমকা শহরে) জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস ঢাকার বিক্রমপুরে। পিতা প্রদত্ত তার নাম 'প্রবোধকুমার' এবং ডাকনাম মানিক।

তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

তিনি প্রথম জীবনে ফ্রয়েডীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তী তে তিনি মার্কসিজম বা মার্কবাগ দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তিনি মার্কসবাদী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাত ছিলেন।

উপন্যাস
পদ্মা নদীর মাঝি — জেলে জীবন নিয়ে রচিত।
জননী — মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক উপন্যাস।

এছাড়া পুতুল নাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য উল্লেখযোগ্য।

গল্পগ্রন্থ
আত্মহত্যার অধিকার, প্রাগৈতিহাসিক, সরীসৃপ, ভেজাল ইত্যাদি।

।।পাঁচ।।
সুফিয়া কামাল
(১৯১১-১৯৯৯ খ্রি.)
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি সুফিয়া কামাল বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে 'জননী সাহসিকা' বলা হয়। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র কাব্যধারার একজন অন্যতম গীতিকবি।

গল্পগ্রন্থ
কেয়ার কাঁটা— তার প্রথম গ্রন্থ।এটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয়।

কাব্যগ্রন্থ
সাঁঝের মায়া — তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ
উদাত্ত পৃথিবী — (কবিতা - জাগো তবে অরণ্য কন্যারা)।

এছাড়া 'অভিযাত্রীক', 'মায়া কাজল' উল্লেখযোগ্য।

শিশুতোষ
ইতল বিতল, নওল কিশোরের দরবারে

ডায়েরি
একাত্তরের ডায়েরি

।।ছয়।।
আহসান হাবিব
(১৯১৭ - ১৯৮৫ খ্রি.)
আহসান হাবীবের কবিতার বিষয়বস্তু ছিল বস্তুনিষ্ঠতা ও বাস্তব জীবনবোধ। তিনি পঞ্চাশের দশকে অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত।

কাব্যগ্রন্থ
রাত্রিশেষ, আশায় বসতি, ছায়া হরিণ, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, প্রেমের কবিতা, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ উল্লেখযোগ্য।

।।সাত।।
শওকত ওসমান
(১৯১৭-১৯৯৮ খ্রি.)
পরিচিতি
শওকত ওসমান মূলত একজন কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম 'শেখ আজিজুর রহমান'

উপন্যাস
জননী — প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ।
ক্রীতদাসের হাসি — এটি একটি প্রতীকাশ্রয়ী উপন্যাস উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৬৬ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়া 'বনি আদম', 'চৌরসন্ধি' উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস
জাহান্নাম হইতে বিদায়, নেকড়ে অরণ্য

প্রবন্ধ
সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই

নাটক
আমলার মামলা

শিশুতোষ
ওটেন সাহেবের বাংলো

।।আট।।
ফররুখ আহমদ
(১৯১৮-১৯৭৪ খ্রি.)
ফররুখ আহমেদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন যশোরের (বর্তমান মাগুরা) মাঝআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে 'মুসলিম বা ইসলামী পুনর্জাগরণের কবি' বলা হয়। তিনি তার কবিতায় আরবি - ফারসী শব্দের প্রয়োগে নৈপূণ্য দেখান।

কাব্যগ্রন্থ
সাত সাগররের মাঝি — কবির প্রথম প্রকাশিত এবং শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। মুসলিম জাগরণের লক্ষ্যে গ্রন্থের কবিতাগুলী রচিত। ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থটির মূল উপজীব্য।
হাতেমতায়ী — এ গ্রন্থটির জন্য তিনি 'আদমজি পুরস্কার' (১৯৬৬) লাভ করেন।
সিরাজাম মুনীরা — বাংলা ভাষায় রচিত।

এছাড়া 'মুহূর্তের কবিতা' ও 'নৌফেল ও হাতেম' উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।

কবিতা (কাব্যগ্রন্থ)
সাত সাগরের মাঝি (সাত সাগরের মাঝি)।

পাঞ্জেরি (সাত সাগরের মাঝি) [মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত]

পুরস্কার
বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০ সাল), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৬), মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৭৭), এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০)

।।নয়।।
ড. আহমদ শরীফ
(১৯২১-১৯৯৯ খ্রি.)
জন্মস্থান
সুচক্রদণ্ডি গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রবন্ধ গ্রন্থ
বিচিত্র চিন্তা, বাঙালী ও বাঙলা সাহিত্য, স্বদেশ চিন্তা — উল্লেখযোগ্য।

প্রবন্ধ
সংস্কৃতি

।।দশ।।
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
(১৯২১-২০০২ খ্রি.)
জন্মস্থান
খুলনা

উপন্যাস
বিশ শতকের মেয়ে, বহ্নিবলয়

নাটক
রমনার পার্কে, দুয়ে দুয়ে চার

প্রবন্ধ
আমি বীরাঙ্গনা বলছি, শরৎ প্রতিভা

।।এগার।।
সৈয়দ আলী আহসান
(১৯২২-২০০২ খ্রি.)
জন্মস্থান
যশোরের (বর্তমান মাগুরা) আলোকদিয়া গ্রামে।

কবিতা
একক সন্ধ্যায় বসন্ত
আমার পূর্ব বাংলা (কবিতা)

নাটক
ইডিপাস — গ্রিক ট্রাজেডি 'ইডিপাস' এর বঙ্গানুবাদ।

।।বার।।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
(১৯২২-১৯৭১ খ্রি.)
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯২২ সালের ১৫ আগষ্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে চেতনার প্রবাহরীতির উপন্যাস লেখেন। তিনি কথা-সাহিত্যিক ও নাট্যকার।

উপন্যাস
লালসালু — গ্রাম বাংলার মানুষের অশিক্ষা - কুশিক্ষা এবং ধর্মীয় ভন্ডামীর নিখুঁত

চিত্র উপন্যাসের মূল উপজীব্য। ১৯৪৭ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এটি ফারসী ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত। ইংরেজি অনুবাদ — Tree Without roots.
"ঠক পীরের পানি পড়ায় কি কোন কাম হয়?" — উক্তিটি আক্কাসের।

চাঁদের অমাবস্যা — এটি মনো সমীক্ষামূলক রচনা।

কাঁদো নদী কাঁদো — এটি মনো সমীক্ষামূলক রচনা।

নাটক
তরঙ্গভঙ্গ, বহিপীর, সুড়ঙ্গ – উল্লেখযোগ্য।

গল্পগ্রন্থ
দুই তীর ও অন্যান্য গল্প — এই গল্পের জন্য আদমজি পুরস্কার পান।'একটি তুলসী গাছের কাহিনী' গ্রন্থটির একটি বিখ্যাত ছোটগল্প।

এছাড়া 'নয়নচারা' – উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ।

।।তের।।
মুনীর চৌধুরী
(১৯২৫-১৯৭১ খ্রি.)
মুনীর চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষা বিজ্ঞানী ও শহীদ বুদ্ধিজীবি। তিনি নাট্যকার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে প্রথম বাংলা টাইপ রাইটার নির্মান করেন যা 'মুনীর অপটিমা' নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন।

নাটক
রক্তাক্ত প্রান্তর — তার প্রথম নাটক। নাটকটির মূল উপজীব্য পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী।

কবর — ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমির নিয়ে রচিত। মুনীর চৌধুরী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালীন সময়ে এটি লিখেন।নাটকটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রাজবন্দীদের দ্বারা প্রথম মঞ্চায়িত হয়।

এছাড়া পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য, মানুষ, চিঠি এবং দন্ডকারণ্য – উল্লেখযোগ্য।

অনূদিত নাটক
মুখরা রমনী বশীকরণ — শেক্সপীয়রের 'The Taming of the Shrew' এর অনুবাদ।

রূপার কৌটা:– জন গলস ওয়ার্দির 'The Silver Box' অবলম্বনে।

এছাড়া 'কেউ কিছু বলতে পারে না' – উল্লেখযোগ্য।

।।চৌদ্দ।।
সুকান্ত ভট্টাচার্য
(১৯২৬-১৯৪৭ খ্রি.)
সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ সালের ১৫ আগষ্ট কলকাতার কালিঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী প্রগতি চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। সুকান্ত ভট্টাচার্যকে 'কিশোর কবি' বলা হয়। অনাচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদ তার কবিতার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর (২০ বছর ৯ মাস) বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তিনি অকাল মৃত্যু বরণ করেন।

কাব্যগ্রন্থ
ছাড়পত্র, ঘুম নেই, হরতাল, পূর্বাভাস

কবিতা (কাব্যগ্রন্থ)
ছাড়পত্র (ছাড়পত্র), আঠার বছর বয়স (ছাড়পত্র), রানার, গায়ে, এক যে ছিলো — উল্লেখযোগ্য।

কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতার লাইন
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। 
----মহাজীবন

গভীর দুঃখে মগ্ন আকাশ, সমস্ত পৃথিবী!
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। ----ছাড়পত্র

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাতে তার মুখে খবর পেলুম
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক। ----ছাড়পত্র

।।পনের।।
শামসুদ্দীন আবুল কালাম
(১৯২৬-১৯৯৭ খ্রি.)
জন্মস্থান
কামদেবপুর গ্রাম, নলছিটি, বরিশাল।

উপন্যাস
কাশবনের কন্যা, কাঞ্চনমালা, কাঞ্চনগ্রাম

গল্প
পথ জানা নেই, অনেক দিনের আশা, শাহের বানু

।।ষোল।।
আবু ইসহাক
(১৯২৬-২০০৩ খ্রি.)

জন্মস্থান
শিরঙ্গল গ্রাম, নড়িয়া, শরিয়তপুর।

উপন্যাস
সূর্য দীঘল বাড়ী  পঞ্চাশ সনের মন্বন্তর, দেশবিভাগ এবং স্বাধীনতা লাভের আনন্দ ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা এবং দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসটির পটভূমি ঢাকা জেলার পাশ্ববর্তী একটি গ্রাম। উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৯৫৫ সাল। উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র জয়গুন।

এছাড়া 'পদ্মার পলিদ্বীপ', 'জাল' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গল্পগ্রন্থ
মহাপতঙ্গ

ছোটগল্প
জোঁক

।।সতের।।
শহীদুল্লা কায়সার
(১৯২৭-১৯৭১ খ্রি.)
শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম 'আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা'। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়। এরপর তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।তিনি একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী।

উপন্যাস
সারেং বৌ - তার প্রথম উপন্যাস। সমুদ্র উপকূলবর্তী জনপদের চিত্র উপন্যাসের মূল কথা।

এছাড়া 'সংশপ্তক' উল্লেখযোগ্য।

প্রবন্ধ
পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (ভ্রমণকাহিনী)

রাজবন্দীর রোজনামচা (স্মৃতিকথা)

।।আঠার।।
শামসুর রাহমান
(১৯২৯-২০০৬ খ্রি.)
শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন।কবির পিতার বাড়ী নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাহাড়তলী গ্রামে।বাংলাদেশের সমকালের কবিদের মধ্যে তাকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। তাকে 'নাগরিক' কবিও বলা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি 'মজলুম আদিব' ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। কবি ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট ঢাকায় পরলোকগমন করেন।

কাব্যগ্রন্থ
প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে,

প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে,

রৌদ্র করোটিতে,

বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে (দ্যাখে),

দুঃসময়ের মুখোমুখি,

বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়,

নিরালোকে দিব্যরথ,

বিধ্বস্ত নীলিমা,

বন্দী শিবির থেকে,

উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ,

নিজ বাসভূমে,

কবিতা
স্বাধীনতা তুমি,

তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা,

একটি ফটোগ্রাফ,

আসাদের শার্ট,

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়,

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।

উপন্যাস
অক্টোপাস

আত্নস্মৃতি
স্মৃতিশহর, কালের ধুলোয় লেখা

শিশুতোষ
এলাটিং বেলাটিং,

ধান ভানলে কুঁড়ো দিবো,

গোলাপ ফুটে খুকির হাতে।

কবিতার উল্লেখযোগ্য লাইন
এই পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত
ঘোষণার ধবনি-প্রতিধবনি তুলে,
নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে। ----তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনত)

স্বাধীনতা তুমি, রবি ঠাকুরের অজর কবিতা। ----স্বাধীনতা তুমি)

স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। ----স্বাধীনতা তুমি

এ আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন,
পাথরের টুকরোর মতন
ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে
বছর-তিনেক আগে কাক-ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে। ----একটি ফটোগ্রাফ

মেঘনা নদী দেবো পাড়ি; কল-অলা এক নায়ে।
আবার আমি যাবো আমার; পাহাড়তলী গাঁয়ে। ----প্রিয় স্বাধীনতা

।।ঊনিশ।।
আলাউদ্দিন আল আজাদ
(১৯৩২-২০০৯ খ্রি.)
ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

জন্মস্থান
রামনগর গ্রাম, রায়পুরা, নরসিংদী।

উপন্যাস
তেইশ নম্বর তৈলচিত্র – মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ।এই উপন্যাসটি 'বসুন্ধরা' নামে চলচ্চিত্রায়িত হয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

কর্ণফলী – উপজাতীদের জীবনচিত্র নিয়ে রচিত।

নাটক
নরকে লাল গোলাপ – মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক
মায়াবী প্রহর

গল্প
ধান-কন্যা

কাব্যগ্রন্থ
মানচিত্র

কবিতা
স্মৃতিস্তম্ভ (মানচিত্র) : শহীদ মিনার সম্পর্কে লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা।

।।বিশ।।
হাসান হাফিজুর রহমানন
(১৯৩২-১৯৮৩ খ্রি.)
জন্মস্থান
জামালপুর জেলায় নানা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন।তার পৈত্রিক বাড়ী জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার কুলকান্দি গ্রামে।

কবিতা
অমর একুশে (বিমুখ প্রান্তর)

গল্প
আরো দুটি মৃত্যু

প্রবন্ধ
একুশে ফেব্রুয়ারি – ভাষা আন্দোলনের প্রথম সাহিত্য সংকলন। ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় এবং গ্রন্থটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। এই সংকলনে কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, গান, নকশা ও ইতিহাস শিরোনামে ৬ টি বিভাগে মোট ২২ জন লেখকের রচনা রয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ – তিনি মুক্তিযুদ্ধের দলিল সম্পাদনার জন্যে বিখ্যাত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক দলিল' সংগ্রহের প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল। ১৬ খন্ডের এ গ্রন্থটি ১৯৮২-৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

।।একুশ।।
আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহ
(১৯৩৪-২০০১ খ্রি.)
জন্মস্থান
বহেরচর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল

কাব্যগ্রন্থ
সাত নরী হার (প্রথম কাব্য)
আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

কবিতা
মাগো ওরা বলে
কোনো এক মাকে (কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা)

।।বাইশ।।
জহির রায়হান
(১৯৩৫-১৯৭২ খ্রি.)
জহির রায়হানের জন্মতারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। ১৯৩৩ সালে (উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সংকলন) এবং ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট (বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান) উল্লেখ আছে।তিনি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনমুখী সমাজ সচেতন সাহিত্যিক জহির রায়হানের সহোদর ভাই ছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে মিরপুরে যান এবং নিখোঁজ হন।

উপন্যাস
হাজার বছর ধরে – উপন্যাসটি প্রথমে আদমজি পুরস্কার পায়।এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কার পায়।

আরেক ফাল্গুন – বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক প্রথম উপন্যাস।

এছাড়া বরফ গলা নদী, আর কতদিন, শেষ বিকেলের মেয়ে, কয়েকটি মৃত্যু তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।

গল্প
একুশের গল্প – বিখ্যাত উক্তি 'তপুকে আবার ফিরে পাবো, একথা ভুলেও ভাবিনি একদিন।'

চলচ্চিত্র
বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার ছিলেন জহির রায়হান।তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা -

কখনোও আসেনি – জহির রায়হানের প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র।

কাঁচের দেয়াল – নিগার পুরস্কার লাভ করে।

সঙ্গম – বাংলাদেশের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এটি ১৯৭০ সালে নির্মিত হয়।

জীবন থেকে নেওয়া – বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনভিক্তিক।বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এই চলচ্চিত্রে জাতীয় সঙীত বাজানো হয়।

Stop genocide – পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গনহত্যার প্রামাণ্যচিত্র।

Let there be light – প্রামাণ্যচিত্র

।।তেইশ।।
রাবেয়া খাতুন
(১৯৩৫ খ্রি. –)
জন্ম
ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে।

উপন্যাস
মধুমতি, মেঘের পরে মেঘ, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, ফেরারী সূর্য, বায়ান্ন গলির এক গলি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখ্য - মধুমতি, মেঘের পরে মেঘ, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি উপন্যাস তিনটি পরবর্তী তে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

।।চব্বিশ।।
সৈয়দ শামসুল হক
(১৯৩৫ খ্রি. —)
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।বাংলাদেশের বর্তমান সাহিত্যাঙ্গনে কবিতা,নাটক,উপন্যাস, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় তার সাবলিল পদচারণার জন্য তাকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়।

কাব্য
পরানের গহীন ভিতর, কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে

উপন্যাস
নিষিদ্ধ লোবান – মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক (গেরিলা নামে চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে)

নীলদংশন – মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক

এছাড়া - সীমানা ছাড়িয়ে, খেলারাম খেলে যা উল্লেখযোগ্য।

নাটক
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (কাব্যনাট্য) – মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক এ নাটকে যুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনীর গ্রামে প্রবেশের সময়কার ঘটনা এখানে স্থান পেয়েছে।

এছাড়া- নূরুলদীনের সারাজীবন, গণনায়ক উল্লেখযোগ্য।

।।পঁচিশ।।
আল মাহমুদ
(১৯৩৬ খ্রি. –)
জন্মস্থান
মোড়াইল গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকৃত নাম
মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ

কাব্যগ্রন্থ
সোনালী কাবিন, লোক লোকান্তর, বখতিয়ারের ঘোড়া, পাখির কাছে ফুলের কাছে।

কবিতা
নোলক (সোনালী কাবিন)

উপন্যাস
আগুনের মেয়ে, ডাহুকী, কাবিলের বোন

।।ছাব্বিশ।।
হাসান আজিজুল হক
(১৯৩৯ খ্রি. –)

জন্মস্থান
যবগ্রাম, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

উপন্যাস
আগুনপাখি, সাবিত্রী উপাখ্যান, শামুক, বৃত্তায়ন

গল্পগ্রন্থ
আত্মজা ও একটি করবি গাছ (৮টি গল্প)

।।সাতাশ।।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
(১৯৪৩ - ১৯৯৭ খ্রি.)
জন্ম
গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।তার পৈত্রিক বাড়ী বগুড়া জেলায়।

উপন্যাস
চিলেকোঠার সিপাই – (১৯৮৭ খ্রি.) ঊনসত্তরে গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত।

খোয়াবনামা – তেভাগা আন্দোলন, ১৯৪৩-এর মন্বন্তর, ফকির সন্ন্যাসীর বিদ্রোহ প্রভূতি ঐতিহাসিক উপাদান নিয়ে রচিত।

গল্পগ্রন্থ
দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, খোঁয়ারি

গল্প
রেইন কোর্ট, ফোঁড়া, মিলির হাতে স্টেনগান

প্রবন্ধ গ্রন্থ
সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু

।।আটাশ।।
আহমদ ছফা
(১৯৪৩ – ২০০১ খ্রি.)
জন্মস্থান
গাছবাড়িয়া গ্রাম, হাশিমপুর ইউনিয়ন, চন্দনাইশ উপজেলা, চট্টগ্রাম।

উপন্যাস
গাভী বিত্তান্ত, ওঙ্কার, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী

প্রবন্ধ
যদ্যপি আমার গুরু

।।ঊনত্রিশ।।
নির্মলেন্দু গুণ
(১৯৪৫ খ্রি.–)
জন্ম
কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোনা।

পরিচিতি
তাকে উপমহাদেশের 'কবিদের কবি' বলা হয়।

কাব্যগ্রন্থ
প্রেমাংশুর রক্ত চাই, না প্রেমিক না বিপ্লবী, বাংলার মাটি বাংলার জল

কবিতা
হুলিয়া

।।ত্রিশ।।
হুমায়ূন আহমেদ
(১৯৪৮ – ২০১২ খ্রি.)
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।ডাকনাম 'কাজল' (শামসুর রহমান)।২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।তিনি ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

উপন্যাস
  • নন্দিত নরকে
  • হিমু
  • বহুব্রীহি
  • নক্ষত্রের রাত
  • এইসব দিনরাত্রি
  • রজনী
  • শঙ্খনীল কারাগার (চরিত্র: মতিন ও কমল)
  • অপরাহ্ন
  • মিসির আলী
  • তেঁতুল বনে জোৎস্না
  • দেয়াল (রাজনৈতিক উপন্যাস)
  • দূরে কোথায়
  • কোথাও কেউ নেই (চরিত্র: বাকের ভাই)
  • অয়োময়
  • দারুচিনি দ্বীপ
  • আজ রবিবার
  • কৃষ্ণপক্ষ
  • দীঘির জলে কার ছায়া গো
  • কে কথা কয়

মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক উপন্যাস
  • আগুনের পরশমণি : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি বাস্তব খন্ডচিত্র
  • জোছনা ও জননীর গল্প
  • শ্যামল ছায়া
  • সূর্যের দিন

গল্প
  • এলেবেলে (রম্যগল্প)
  • আনন্দবেদনার কাব্য

চলচ্চিত্র
  • ঘেটুপুত্র কমলা : সর্বশেষ চলচ্চিত্র
  • দুই দুয়ারী
  • শ্যামল ছায়া
  • শ্রাবণ মেঘের দিন
  • নয় নম্বর বিপদ সংকেত
  • আমার আছে জল

যে সকল উপন্যাস পরবর্তীতে নাটকে রূপান্তর করা হয়
  • হিমু
  • বহুব্রীহি
  • নক্ষত্রের রাত
  • এইসব দিনরাত্রি
  • অপরাহ্ন
  • কোথাও কেউ নেই (চরিত্র: বাকের ভাই)
  • অয়োময়
  • আজ রবিবার

আজিবুল হাসান
৩০ মার্চ, ২০২১
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post