মার্চের দিনগুলি

অনুচ্ছেদ : রোহিঙ্গা সংকট

রোহিঙ্গা সংকট


আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ মুহূর্তে যত সমস্যা-সংকট রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট সবচেয়ে ভয়াবহ ও স্পর্শকাতর। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রসঙ্গটিই এখন প্রকট ও জটিল। কেননা দীর্ঘদিন তাদেরকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাই সংগত কারণেই এই সমস্যাটি এখন আন্তর্জাতিক সংকটে রূপ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলকে রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা বারবার নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিতাড়িত হয়েছে। সর্বশেষ ৩ জুন ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী রাখাইন বৌদ্ধদের গণহত্যা, নির্যাতন ও জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা দুর্গম এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ শুধু মানবিক কারণে এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার জোগান দিয়ে যাচ্ছে সাধ্যমতো। মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে নাগরিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও তারা যে সেখানকারই অধিবাসী তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়ার চুক্তি করেছে। কিন্তু তারপরও নানা অজুহাতে মিয়ানমার কয়েক দফা তারিখ নির্ধারণ করেও তাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি প্রথম থেকেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে খুব গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। যে কারণে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং তাঁর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো। সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশনের ভাষণেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ রেখেছেন। কেননা এই বিরাট সংখ্যক উদ্বাস্তুর বোঝা বহন করার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সংহতি রক্ষার প্রয়োজনেও রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণ খুবই জরুরি। কাজেই বিশ্ব সম্প্রদায় এ বিষয়ে কার্যকর তৎপর হলেই রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত হবে।


একই অনুচ্ছেদ আরেকবার সংগ্রহ করে দেয়া হলো


রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা প্রায় ১.১ মিলিয়ন সংখ্যক। রোহিঙ্গাদের উপর হামলাগুলি মায়ানমারের পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাতে নিয়মিত এবং ব্যাপকভাবে সাজানো হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের একটি বিতর্কিত প্রতিবেদন হলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি, কিন্তু দেশটি জাতিসংঘ বা বাইয়ের সংগঠন বা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনা করার কোনো অনুমতি দেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে সীমান্তে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহিত তথ্যের মাধ্যমে ও তাদের ইন্টারভিউর মাধ্যমে বেশির ভাগ তথ্য জানা যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন যেখানে শরণার্থী গণধর্ষণ, গণহত্যা, এবং নিষ্ঠুর বিদ্রোহের গল্প বলেছে। যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে রিপোর্ট করা সাক্ষাত্কারে অর্ধেকের বেশি নারী সাক্ষাৎকার দিয়েছে। স্যাটেলাইট ছবিতে রোহিঙ্গাদের গ্রামে আগুন জ্বলছে। শরণার্থীরা মায়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দোষারোপ করে, আর বার্মিজ সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। গত গ্রীষ্মে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্যার কারণে শরণার্থী শিবিরে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কলেরা প্রাদুর্ভাব, পানি সংকট এবং অপুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। নিষ্ঠুর, দুঃখজনক মায়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা চালিত সামান্য সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার আন্দোলন বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। প্রকৃতপক্ষে এটি যুদ্ধ, একটি আইন। যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদেরকে অপরাধের শাস্তি দেওয়া উচিত। যারা গণহত্যার সমর্থন করে তাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post