অনুচ্ছেদ : প্রাথমিক শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা


বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে বলা হয় প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এই শিক্ষা লাভ করা মানুষের অবশ্য কর্তব্য। এজন্যই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই একটি করে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বিশেষ গরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১,৬৫,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই, খাতা ও পোশাক প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এগারো হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৭৪ সালে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে অগ্রগণ্য মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯০ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস করা হয়। সমগ্র দেশে এ কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৩ সাল থেকে। সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ২০১৪ সালের মধ্যে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলেও বর্তমান সময় পর্যন্ত যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এছাড়া এ কার্যক্রমের অধীনে ৬০% শিক্ষয়িত্রী নিয়োগের নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা অনেকাংশে কার্যকর হয়েছে। নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের পদায়নও নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। মেয়েরা যাতে স্কুলে আসতে উৎসাহিত হয় এবং তাদের আর্থিক সংকট কিছুটা দূর হয় সেজন্য দেওয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। এসব ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে শিক্ষা গ্রহণের প্রতি শিশুদের অভিভাকদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় উপস্থিতির হার বেড়ে প্রায় ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের দেশে জনসংখ্যার আধিক্য, কুসংস্কার, দারিদ্র ইত্যাদি কারণে শিক্ষার হার আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়নি। তবে দারিদ্র্যের হার ক্রমশ কমতে থাকায় শিক্ষার হার অচিরেই আরও বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করলে শিক্ষার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ফলে শিশুদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কাজেই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post