ভাবসম্প্রসারণ : সমস্ত পাথর হলে মহামূল্য মণি / মণির কদর কিছু হত না কখনি

সমস্ত পাথর হলে মহামূল্য মণি
মণির কদর কিছু হত না কখনি

মুলভাব : মূল্যবান জিনিস যদি পরিমাণে বেশি হয় তাহলে তার মর্যাদা থাকে না। সবকিছুর অতিরিক্ত সমাদরের যোগ্য নয়। বরং যা সহজে পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও পরিমাণে কম, তারই মূল্য বেশি। আদরও তার বেশি হয়ে থাকে। 

সম্প্রসারিত ভাব : মণি, মুক্তা খুবই মূল্যবান পদার্থ। বহু অর্থ ব্যয় করে সেসব সংগ্রহ করতে হয়। মানুষ পরম যত্নে সেসব রক্ষা করে থাকে। মণি, মুক্তা এক শ্রেণীর পাথর। এগুলো খুবই বিরল বলে এত সমাদর। সব পাথর যদি মণি হয়ে যেত তাহলে তা মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে যেত। তখন তার মূল্য কমে আসত, তার সমাদরও এত থাকত না। প্রাচুর্যের কারণেই মণির কদর কমে আসত। মানুষের জীবনেও একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন গুণের মানুষের কদর সমাজে আছে সত্য। কিন্তু সে ধরনের লোক যদি বেশি থাকে তাহলে তাদের কদর কমে আসে। সংখ্যায় আধিক্য তাদের মর্যাদা লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। 

পৃথিবীর সকল পাথর যদি মণি, মুক্তা হত তাহলে তার আর কদর থাকত না। সেভাবে এ পৃথিবীর সকল মানুষ যদি জ্ঞানী-গুনী ও শিক্ষিত হত। তাহলে সে সম্পর্কে তাদের কোন মূল্যই থাকত না।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


ভাব-সম্প্রসারণ : জগতে উপযোগিতা ও প্রাপ্যতা যাচাই করে বস্তুসামগ্রীর মূল্যমান নির্ধারিত হয়ে থাকে। যে বস্তুর উপযোগিতা ও গুণগত উৎকর্ষ যত বেশি তার মূল্য ও গুরুত্ব তত বেশি। এ ধরনের বস্তু যতই দুষ্প্রাপ্য হয় ততই তা মূল্যমানের দিক থেকে অসাধারণত্ব লাভ করে। পক্ষান্তরে মূল্যবান জিনিস যদি বহুল প্রাপ্য হয় তবে তার মর্যাদা ও গুরুত্ব কমে যা। যেসব জিনিস যত্রতত্র বহুল পরিমাণে পাওয়া যায় গুণত উৎকর্ষ সত্ত্বেও সেগুলোর প্রকৃত সমাদর হয় না। পক্ষান্তরে গুণগত উৎকর্ষের পাশাপাশি যেসব দ্রব্যসামগ্রী বিরল ও দুর্লভ সেগুলোকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে গণ্য করা হয়ে থাকে এবং তার কদর ও সমাদরও হয় যথেষ্ট।

মণিমুক্তা এক ধরনের পাথর। তবে এগুলো আর দশটা পাথরের মতো সাধারণ পাথর নয়। এদের সৌন্দর্য অনুপম, প্রাপ্যতা বিরল। গুণগত উৎকর্ষ ও বিরল প্রাপ্যতার কারণে মণিমুক্তা মানুষের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান সামগ্রী। এগুলো পাওয়ার জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। কারো কাছে যদি বিরল মণিমুক্তা থাকে তবে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। দুষ্প্রাপ্য ও অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে মণিমুক্তাকে তিনি অত্যন্ত সযত্নে রক্ষা করেন। তা দেখার জন্যে অনেক দর্শনার্থী তার কাছে ‍ছুটে আসেন। গুণে-মানে অসাধারণ এবং দুষ্প্রাপ্য বলেও মণিমুক্তার সমাদর এত বেশি। কিন্তু সাধারণ পাথরের সঙ্গে মণিমুক্তার যদি পার্থক্য না থাকতো, যদি সব পাথরই মণিমুক্তার মতো মূল্যবান পাথরে পরিণত হত তবে মণিমুক্তার এত গুরুত্ব ও এত সমাদর থাকত না।

মানুষের মধ্যেও যাঁরা বিরল প্রতিভাবান ও অসাধারণ গুণী তাঁরা সমাজে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে থাকে। তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে বরেণ্য গুণীজন হিসেবে সমাদৃত হন। কিন্তু সমাজের সব লোকই যদি এ ধরনের গুণীজনে পরিণত হন তবে গুণীর সমাদর আর আগের মতো থাকে না।

প্রকৃত গুণীর সংখ্যা কম বলেই তাঁদের এত সম্মান ও মর্যাদা। নির্গুণ আর গুণী ব্যক্তি কখনোই একই মর্যাদা পেতে পারেন না। নির্গুণকে গুণীর সঙ্গে এক কাতারে দাঁড় করালে প্রকৃত গুণীর সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post