ভাবসম্প্রসারণ : যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা

যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা
যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।

মূলভাব : যুদ্ধ মানে প্রলয়, যুদ্ধ মানে ধ্বংস। ক্রোধ, লোভ, ক্ষমতার দম্ভ প্রভৃতির বশবর্তী হয়ে মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠে। বস্তুত যুদ্ধ যেন শত্রুর সাথে শত্রুর খেলা। 

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষকে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে মানুষ নানাভাবে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করে আসছে। কিন্তু টিকে থাকার জন্য আদিকালের সেই যুদ্ধ আর আজকের সুসভ্য মানুষের অসভ্য বর্বরোচিত প্রতিহিংসা, লোভ, ক্ষমতার দম্ভ বহিঃপ্রকাশের যুদ্ধ এক নয়। তখন মানুষ যুদ্ধ করত পশুর সাথে আর এখন মানুষ যুদ্ধ করে মানুষের সাথে। ভাইয়ে-ভাইয়ে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, দেশে-দেশে, জাতিতে-জাতিতে আজ অহরহ যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া যেন মানুষ স্থির হতে পারছে না। এমন কোন দিন নেই, যেদিনটিতে দু’চার’টি দেশে যুদ্ধ হচ্ছে না, দু চার লাখ মানুষের শোণিতে ধরাতল রঞ্জিত হচ্ছে না। অথচ যারা যুদ্ধের চাবিকাঠি নাড়ে তাদের কাছে যেন সেটা পুতুল খেলার মত। তারা যেন শত্রুতে শত্রুতে খেলা করে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আমরা জানি। আধুনিক যুদ্ধের ভয়াবহতাও আমরা ভালো করেই বুঝি। কিন্তু তারপরও আমাদের ক্ষমতা লিপ্সুদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব কাটেনি। অন্যের অধিকার খর্ব করার জন্য আমাদের শাসকগোষ্ঠী সদা সাজোয়ান। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই আমরা যার জ্বলন্ত প্রমাণ পেলাম ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার মধ্য দিয়ে। এ তো ক’দিন আগে শক্তিধর ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর কাছে হেরে গেল স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন। স্বাধীনতা হারাল ইরাক পরিণত হল ইঙ্গ-মার্কিনীদের আধুনিক কালোনীতে। প্রাণ হারালো অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ইরাকিদের রক্তের দাগ এখনও মাটি সম্পূর্ণ শুষে নিতে পারিনি। আজও রক্ত ঝরছেই সেখানে। অথচ যুদ্ধের হোতা জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং টনি ব্লেয়ার হেসে-খেলেই দেখছেন সে দৃশ্য। শত্রু অজুহাতে সাদ্দামকে তারা শক্তি দিয়ে কব্জা করেছেন। তারা যখন খুশি যাকে খুশি আক্রমণের হুমকি দিচ্ছেন। বস্তুত সারা বিশ্বে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো যেন তাদের খেলার পাত্র, সারা বিশ্বের নিরীহ মানুষগুলোর রক্তখেলা যেন তাদের প্রমোদের বিষয়। আর সে কারণেই বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা। যুদ্ধ হচ্ছে যোদ্ধাদের খেয়ালীপনা, শত্রু শত্রু খেলা। যার শিকার হয় অধিকাংশ সাধারণ মানুষ।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : সুস্থ সহযোগিতা সমাজবন্ধনের মূল সূত্র। মানুষে মানুষে আত্মিক যোগাযোগের মাধ্যমেই সমাজবন্ধনের ভিত্তি দৃঢ় হয়। এর অভাবে সমাজে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক জঘন্য হিংসা প্রবৃত্তি, যা তাকে যুদ্ধাভিমুখী করে তোলে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির, জাতির বিপক্ষে জাতির তথা দেশের বিপরীতে দেশের সংঘাত মানবতার অবমাননাই ঘোষিত করে। যুদ্ধই মানুষের অন্যতম আদিম রিপু- যুদ্ধই মানুষের মাঝে সাময়িক পশুত্ব এনে দেয়। অপরকে পর্যুদস্ত করে, লাঞ্ছিত করে নিজের প্রতিষ্ঠা ঘটানোই যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য। পেশিশক্তি পশুশক্তির নামান্তর। বলীয়ানের সঙ্গে লড়াইয়ে দুর্বল বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। একদিন পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে, তখন চরম বিপর্যয় নেমে আসে। এভাবেই যুদ্ধের মাধ্যমে মানবতাবোধের অবক্ষয় হয়। মনুষ্যত্বের অবহেলার সাধনায় কে কত দক্ষ, কত পোক্ত- তাই নির্ণয় করতে জমে ওঠে যুদ্ধের আসর। শান্তিপ্রিয় নিরীহ জাতির ভাগ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে না গিয়েও যুদ্ধের বিষময় ফল প্রত্যক্ষভাবে মানুষ লাঞ্ছিত করে।

মন্তব্য : যুদ্ধ মানুষের এমন এক সর্বনাশা খেলা যার অবসান হয় তখনই, যখন চারদিকে নেমে আসে মৃত্যুপুরীর স্তব্ধতা। তাই আজ বিশ্বের প্রতিটি সচেতন মানুষের একান্ত দাবি- ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post