রচনা : বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

সূচনা : জাতীয় পতাকা হল একটি স্বাধীন জাতির মর্যাদার প্রতীক বা চিহ্ন। সব স্বাধীন দেশেরই একটি জাতীয় পতাকা থাকে। পরাধীন দেশের অধিবাসীরা কোন স্বতন্ত্র জাতি বলে স্বীকৃত নয় বলে এদের জাতীয় পতাকাও থাকে না। জাতীয় পতাকা প্রধানত স্ব-স্ব দেশের তাৎপর্য বহন করে।

পরিচয় : প্রথম দিকে আমাদের পতাকটি ছিল সবুজ জমিনের উপর গোলাকার লাল বৃত্ত এবং সে বৃত্তের মধ্যে সোনালি রং-এর বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত। পরবর্তীকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর সামান্য পরিবর্তন করে নতুন একটি নকসা তৈরি করেন। পরিবর্তিত নকসা দু’টি রং-এ রঞ্জিত। ঘন সবুজের মাঝে একটি লাল বৃত্ত। পতাকাটি সাধারণত লম্বায় দশ ফুট ও চওড়ায় ছয় ফুট। অর্থাৎ এ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে ১০:৬। মাপের এ অনুপাত ঠিক রেখে বিভিন্ন মাপের ছোট- বড় পতাকা তৈরি করা যায়। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

তাৎপর্য : আমাদের পতাকার রং নির্বাচন যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এর সবুজ রং তারুণ্য ও সজীবতার প্রতীক। লাল রংটি উদীয়মান সূর্য ও শহীদের তাজা রক্তের স্মৃতি বহন করছে। সূর্য যেমন অন্ধকারকে দূর করে অবারিত আলো বিচ্ছুরণ করে, তেমনি আমাদের পতাকার লাল বৃত্তটি বন্ধনহীন জীবন ও সংশয়হীন ভবিষ্যতের সূচনা স্বরূপ।

ব্যবহার : জাতীয় পতাকা আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। প্রতি বছর ঐতিহাসিক ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর এ পাতাকা আনুষ্ঠানিক- ভাবে উত্তোলন করা হয়। দেশের স্বাধীনতা, ঐক্য ও সংহতির প্রতীক ও পতাকাকে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের শুরুতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা দেখান হয়। এ পাতাকার সম্মান রক্ষার্থে সরকারী বিধিনিষেধ মানতে হয়। সাধারণত পার্লামেন্ট, সরকারি অফিস, আদালত প্রভৃতির ওপরে এটি নিয়মিত ওড়ান হয়। রাষ্ট্রপতি, উপ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী এবং বিশেষ কিছু ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ লোক গাড়িতে এ পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। শহীদ দিবসে এবং কোন বড় নেতার মৃত্যুতে এ পাতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরসমূহ ছাড়া সিনেমা হলগুলোতে ছবি প্রদর্শনের পূর্বে জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হয় এবং সবাই দাঁড়িয়ে এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। তা না হলে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়। বিদেশে প্রেরিত খেলোয়াড় দলের সাথে এ পতাকা প্রেরিত হয়। এটি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পরিচয় দেয়। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে আমাদের জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। জাতিসংঘ এবং অলিম্পিক অনুষ্ঠানে প্রত্যেক সদস্য দেশের পতাকা ওড়ান হয়। জাতীয় পতাকা প্রত্যেকটি দেশের স্ব-স্ব পরিচয় বহন করে।

উপসংহার : জাতীয় পতাকা আমাদের কষ্টার্জিত বস্তু বলে তা আমাদের প্রাণ প্রিয়। এর মান অক্ষুণ্ণ রাখা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।

7 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post