ভাবসম্প্রসারণ : নির্গুণ স্বজন শ্রেয় পর পর সদয়

নির্গুণ স্বজন শ্রেয় পর পর সদয় 

মূলভাব : আত্মীয় নির্গুণ অর্থাৎ, গুণহীন হলেও গুণবান পরের চেয়ে ভালো। কারণ পর যে, সে সমসময়ই পর। পর কখনও আপন হতে পারে না। 

সম্প্রসারিত-ভাব : আত্মীয়স্বজন, পরিবার প্রতিজন নিয়েই মানুষের সমাজ সংসার ও জীবন। কিন্তু বৈষয়িক কারণে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক অনেক সময় তিক্ততায় ভরে ওঠে। আমরা তখন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতেও দ্বিধাবোধ করি না। তখন অনেকেই বলে থাকেন, “আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে জঙ্গল ভালো।” -কথাটি সম্যক সত্য হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক নয়। কারণ আত্মীয় সব সময় আত্মীয়ই। রক্তের বাঁধন কখনও বিচ্ছিন্ন করা যায় না। পর কখনও আত্মীয়ের বিকল্প হয় না। কারণ আত্মীয়ের সাথে যে আত্মার সম্পর্ক থাকে তা অবিচ্ছেদ্য। আর পরের সাথে তা কখনও স্থাপিত হতে পারে না। তাই আত্মীয় যদি নির্গুণ অর্থাৎ গুণহীনও হয় তবু সে গুণবান পরের চেয়ে ভালো। কারণ পরের ভালোত্ব বা গুণ দিয়ে নিজের কাজ হয় না। সেজন্য নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা ভালো। অন্যের গুণ বা ভালত্ব নিয়ে গর্ব করে মোটেই লাভ নেই। নিজের ছেলে অন্ধ হলেও ভালো। পরের পদ্মলোচন ছেলের দিকে তাকিয়ে কোন লাভ নেই। কারণ, বিপদের সময় এগিয়ে এলে নিজের অন্ধ ছেলেটাই আসবে। তখন অন্যের পদ্মলোচন ছেয়ে কাজে আসবে না। তাই প্রতিটি মানুষের চিন্তা করা ‍উচিত যে, স্বজন যদি গণহীনও হয়, তবে সে গুণবাণ অনাত্মীয় বা পরের থেকে শ্রেয়। অনুরূপ নিজের পরিবার, সমাজ, গ্রাম, স্বদেশ স্বজাতি যেমনই হোক না কেন তা নিজেরই। অন্য জাতি বা অন্য দেশের অঢেল সম্পদ, গগণচুম্বি ঐশ্বর্য, উন্নত সংস্কৃতি থাকলেও পর সব সময়ই পর। 

গুণী পরকে আপন করার চেষ্টা বৃথা। তার চেয়ে নির্গুণ স্বজনই শ্রেয়। কারণ অসময়ে তাকেই কাজে লাগে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post