রচনা : কাগজ

ভূমিকা : সভ্যতার প্রসার ও বিকাশের ক্ষেত্রে কাগজের প্রয়োজন অপরিহার্য। বর্তমান যুগে কাগজ শিক্ষার ও রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম প্রয়োজনীয় বস্তু।

বর্ণনা : কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ তালপাতা, ভুর্জপত্র ও গাছের বাকল দিয়ে লেখার কাজ চালাত। কিন্তু এসব উপাদান সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর এবং ব্যয় সাপেক্ষ ছিল। ক্রমে ক্রমে কাগজ আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে সেসব অসুবিধা দূর হয়েছে।

ইতিহাস : অনেকের মতে খ্রিষ্টিয় প্রথম শতকে চীন দেশে রেশম থেকে কাজগ তৈরি হতো। বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, চীনা কারিগর টংসাই লুন (Ts’ailum) সম্রাট হো ডি-এর রাজত্বকালে সর্বপ্রথম গাছের বাকল, শন, ছেঁড়া কাপড় থেকে মণ্ড তৈরি করে ১০৫ খ্রিষ্টাব্দে কাজগ তৈরি করেন। আমাদের দেশে বহুকাল যাবৎ চীনদেশের কাগজ এবং তুলট কাগজের ব্যবহারের প্রচলন ছিল। ক্রমে বিভিন্ন দেশে উন্নতমানের কাগজ বের হওয়ায় পুরনো কাগজের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

চীনের ন্যায় আমাদের দেশেও প্রাচীনকালে কাগজ তৈরি করা হতো। তবে সে-কাগজ ছিল হাতের তৈরি। বর্তমান যুগেহাতের তৈরি কাগজের দ্বারা দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের দেশে চন্দ্রঘোনা, পাকশি ও খুলনায় তিনটি আধুনিক কাগজের কল স্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি বেসকারি কাগজকলও স্থাপিত হয়েছে।

উপকরণ : ঘাস, পাট, শন, বাঁশ, কাঠ ও কাপড় ইত্যাদি দিয়ে কাগজের মণ্ড প্রস্তুত করা হয়। আমাদের দেশে বাঁশ, সুন্দরি ও গেওয়া কাঠ এবং আখের ছোবড়া থেকে কাগজ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে মণ্ড তৈরি হতে শুরু করে নির্দিষ্ট আকারের যাবতীয় কাগজ যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি করা হয়।

ছেঁড়া কাপড়, ঘাস প্রভৃতির অভাবে ইউরোপে কাঠ হতেও কাগজ প্রস্তুত করা হয়। চামড়া দ্বারা মূল্যবান কাগজ প্রস্তুত হয়। চামড়ার তৈরি কাগজ দীর্ঘস্থায়ী ও সুদৃঢ় বলে মূল্যবান দিললপত্রাদিতে ঐ কাগজ ব্যবহৃত হয। এস এস সি, এইচ এস সি ও কলেজের সার্টিফিকেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ডিপ্লোমা ইত্যাদির সনদপত্র পুরু মূল্যবান কাগজে ছাপা হয়।

শ্রেণিভেদ : উৎপাদনভেদে কাগজের গুণের যেমন তারতম্য হয় তেমনি মূল্যেরও তারতম্য হয়। ডিমাই, ক্রাউন, ফুলসক্যাপ প্রভৃতি নানা আকারের কাগজ যেমন হয় তেমনি প্রয়োজন অনুযায়ী আজকাল পাতলা, মোটা, মসৃণ, অমসৃণ ও রঙিন, অফসেট প্রভৃতি নানা রকমের ও নানা রঙের কাগজ প্রস্তুত হয়।

বাংলাদেশে কাগজশিল্প : দুটি সরকারি কাগজ কল ছাড়াও বাংলাদেশে এখন প্রায় পাঁচ ছটি বেসরকারি কাগজ কল স্থাপিত হয়েছে- সেগুলো নানা ধরনের উন্নতমানের কাগজ তৈরি করছে। তার পরও বিদেশ থেকে আমাদের প্রচুর কাগজ আমদানি করতে হচ্ছে।

উপসংহার : বর্তমান জগতে কাগজের প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা বলে শেষ করা যায় না। কাগজ আবিষ্কারের ফলে মানবসভ্যতার এত উন্নতি সম্ভব হয়েছে। কাজেই কাগজকে মানবসভ্যতার উন্নতির ভিত্তি বলা যেতে পারে। কাগজ না হলে বই ছাপা, রাষ্ট্র পরিচালনা, সংবাদপত্র ছাপা সম্ভব হতো না। কাগজ না হলে মোটের ওপর সভ্যতার অগ্রগতির পথে প্রতি পদে বাধার সৃষ্টি হতো। আধুনিক যুগে কাগজ আমাদের শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা তথা মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম প্রধান নিয়ামক।

3 Comments

  1. অনেক সুন্দৱ হয়েছে ধন্যবাাদ

    ReplyDelete
  2. কাগজের বেবহার থাকলে ভাল হত👍👍👍

    ReplyDelete
  3. খুব ভাল হয়েছে লিখাটা।

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post