মার্চের দিনগুলি

ভাবসম্প্রসারণ : রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা, / সূর্য নাহি ফেরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা।

রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা,
সূর্য নাহি ফেরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা।

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- অমোঘ বিশ্বনিয়মে মহাকাল এই তিন কালপরিক্রমায় বয়ে চলেছে নিরবধি। মানব জীবনেও লীলায়িত এই কালপ্রবাহে। এই কাল পরিক্রমায় ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের অধীরতা সামান্যই। বর্তমানই মানুষের জীবনে সবচেয়ে ফলপ্রসূ বাস্তব। এই বর্তমানই একসময় পরিণত হয় স্মৃতিবাহী অতীতে। শত চেষ্টাতেও সে অতীতকে ফিরিয়ে আনা যায় না বর্তমানের চৌহদ্দিতে। তাই অতীতের জন্যে আক্ষেপ না করে যে বর্তমান হাতের মুঠোয়, তার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লাভের চেষ্টা করাই শ্রেয়।

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে দিনের শেষে সূর্য অস্ত যায়। তারপর কালো আঁধারে ঢাকা পড়ে বিশ্বচরাচর। রাতের আকাশে অন্ধকারের বুক চিরে মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করে অসংখ্য নক্ষত্র। অনুপম সে সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে রাতের বেলায় কেউ যদি সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত আকাশের জন্যে হা-হুতাশ করে, তার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে তবে সে কেবল ব্যর্থই হয় না, রাতের সৌন্দর্য উপলব্ধি থেকেও সে বঞ্চিত হয়। অথচ এ জগতে কেউ কেউ এই সত্যটুকু বুঝতে পারেন না। তাঁরা কঠিন বাস্তবে প্রত্যাশিত মাধুর্য না দেখলে বর্তমানকে মেনে নিতে পারেন না। বিগত দিনের স্মৃতিকে বুকে আঁকড়ে থাকতে চান। অতীত স্মৃতির জাবর কেটে ভুলে থাকতে চান বর্তমানকে। তাঁদের কাছে বর্তমানের চেয়ে অধিকতর সুখস্বপ্নময় মনে হয় ফেলে আসা অতীতকে। আর বর্তমান সম্পর্কে গভীর হতাশা তাঁদের আচ্ছন্ন করে। কিন্তু বাস্তবে এঁরা বুঝতে পারেন না যে, অতীতের জন্যে হা-হুতাশ করে বর্তমানকে উপেক্ষা করায় লাভ তো হয়ই না, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাফল্য ও সম্ভাবনার সুযোগটুকুও নষ্ট হয়। এ ধরনের অতীত-আচ্ছন্নতা জীবনে বর্তমানকে কাজে লাগাতে কেবল ব্যর্থ হয় না, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও নিঃশেষে বিলীন করে ফেলে। ফলে শেষ পর্যন্ত জীবন আচ্ছন্ন হয় ব্যর্থতা ও হতাশায়। তাই বিগতের জন্যে শোক না করে বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়াই শ্রেয়। প্রকৃতির অমোষ নিয়ম মেনে নিয়েই জীবনের পূর্ণতার পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টাতেই সার্থকতা আসে।

অতীতের শোকে বর্তমানকে উপেক্ষা করা বিজ্ঞতার পরিচায়ক নয়। তাতে অতীতকে পাওয়া যায় না, বর্তমানও ব্যর্থ হয়।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


প্রবাদে আছে, ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না।’ -এটাই জীবনের নিয়ম। জীবন গতিশীল। গতিশীল জীবনে আজ বা বর্তমান কাল তা অতীত। শত চেষ্টাতেও অতীতকে কখনো ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই অতীতের জন্যে আক্ষেপ না করে বর্তমান যা হাতের মুঠোয়, তার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লাভের চেষ্টা করাই উত্তম।

জীবনে সুখ-দুঃখ আসে পালাক্রমে। গতজীবনের সুখের কথা ভেবে ভেবে বর্তমানের দুঃখ-কষ্টকে মেনে না নেয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা এই দুঃখ-কষ্ট এক সময় আবার অতীতে পরিণত হবে, বর্তমান হয়ে আসবে সোনালি ভবিষ্যৎ। তাই এই পরিবর্তনশীল-জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ ও আনন্দের উৎস হিসেবে বিবেচনা করলে জীবন কখনো বেদনায় ভরে ওঠবে না, ব্যর্থতায়ও পর্যবসিত হবে না। প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যায়, ঘটে রাত্রির আগমন। অগণিত নক্ষত্র রাতের আকাশে অনির্বচনীয় রূপ ধারণ করে। আবার শুক্লপক্ষে রাতে জ্যোৎস্নায় আলোর বন্যায় অন্ধকার দূর করে জগৎকে স্নিগ্ধ আলোয় ভরে তোলে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু কেউ যদি রাতের রূপকে উপভোগ না করে, রাতের বেলায় অস্ত যাওয়া সূর্যের অভাব অনুভব করে তবে সে রাতের যে অনুপম সৌন্দর্য তা থেকেই বঞ্চিত হয, হারানো সূর্যকে কখনোই সে ফিরে পায় না। তদ্রুপ, অতীতের সোনালি ও সুখময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে কেউ যদি কেবল বেদনায় ডুবে থাকে, তাহলে অতীত তো ফিরে আসেই না, বরং বর্তমানের সব সুখ-দুঃখ থেকে সে বঞ্চিত হয়। তাই অতীতের সুখস্বপ্নে বিভোর না থেকে বর্তমানকে সহজভাবে মেনে নিয়ে তাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে এবং উপভোগ করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানকে নির্মাণ করে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলা যায়। তাই, যা চলে গেছে, যা কিছু অতীত তাকে নিয়ে আফসোস না করে বর্তমানকে মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

অতীতের জন্য যারা হা-হুতাশ করে তাদের জীবন ব্যর্থতা ও হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কেননা অতীত স্মৃতির রোমন্থনে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হয়।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post