মার্চের দিনগুলি

ভাবসম্প্রসারণ : প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত বাঁচিবার অধিকার তাহারই

প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত বাঁচিবার অধিকার তাহারই

ভীরুতা ও পলায়নপরতা নয়, মরণজয়ী সাহসী আত্মপ্রত্যয়ই জীবনের যথার্থ ধর্ম। এই বৈশিষ্ট্যই জীবনকে করে তোলে সার্থক, তাকে দেয় মহিমা। মরণজয়ী দুঃসাহসী মানুষরাই মৃত্যুকে বুক পেতে নিয়ে গড়ে তুলেছে মানব সভ্যতার এই মহিমান্বিত ঐশ্বর্য। মৃত্যুকে বরণ করে মৃত্যুকে জয় করেছেন তাঁরা। অমর হয়ে বেঁচে আছেন পৃথিবীতে।

মৃত্যু মানব জীবনের অনিবার্য পরিণতি। মৃত্যুকে সে যতই ভয় পাক না কেন একদিন না একদিন মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় তাকে । তাই মৃত্যুকে ভয় পেলে চলে না। মৃত্যুভয়ে সদাসর্বদা সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত জীবনের মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। কারণ, মৃত্যুভয়ে যে চিন্তিত থাকে তার পক্ষে জীবনের সৌন্দর্য ও আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয় না। তাই জীবনকে উপভোগ করতে হলে চাই মৃত্যুকে সহজভাবে গ্রহণ করার সাহসিকতা। মানুষের জীবন কর্মের জীবন। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজেরই কমবেশি ঝুঁকি থাকে। যে কাজ যত দুরূহ, যত বিপজ্জনক সে কাজে মৃত্যুর ঝুঁকি তত বেশি। তাই মৃত্যুভয়ে ভীত লোক কোনা কঠিন কাজ স্বচ্ছন্দভাবে করতে পারে না। দৃঢ়চিত্ত সাহসী লোকই পারে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে। মৃত্যুভয়ে ভীত লোক সেখানে পরাজিত হয়। পলায়নী মনোভাব নিয়ে সে পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যেতে পারলেই তার পক্ষে সাহসের সঙ্গে বাঁচা এবং কঠিন কর্ম সম্পাদন সম্ভব হয়। সাহসী পৌরুষদীপ্ত লোকরাই জাতীয় জীবনে দুর্যোগের মুহূর্তে জীবন বাজি রেখে দুর্যোগ মোকাবেলা করেন। এঁদের পক্ষেই ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে মহাসমুদ্র পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়, সম্ভব হয় মহাকাশে বিচরণের। জীবন বাজি রেখেই এঁরা খনি থেকে আকরিক সংগ্রহ করেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় বিপন্ন মানুষকে বাঁচাবার জন্যে এগিয়ে যান। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এঁরাই জীবন দিয়ে চির অমরত্ব লাভ করেন। জীবন-মৃত্যুকে যাঁরা পায়ের ভৃত্য করতে পারেন তাঁরাই পান জীবনের পতাকা বয়ে নেওয়ার অধিকার। এঁদের কথা স্মরণ করেই কবি উচ্চারণ করেন :
’মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তাকেই টানে,
মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বাঁচতে তারাই জানে।’


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : ন্যায় ও সত্যের জন্য যাঁরা হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেন তাঁরাই প্রকৃত পক্ষে অমরত্ব লাভের অধিকারী।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ এ পৃথিবীতে যদি যথাযোগ্য মর্যাদা সহযোগে বেঁচে থাকতে পারে তবেই জীবনের সার্থকতা ফুটে উঠতে পারে। মর্যাদা সহকারে বাঁচার অর্থ ব্যক্তিপূর্ণ জীবনের যথাযথ রূপায়ন। সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ ও সংকট সাহসের সাথে মোকাবেলা করার মধ্যেই বির্ভর করে জীবনে সাফল্য। বিপদে মানুষ যদি ভীত হয়ে পড়ে তবে তাতে জীবনের গৌরব প্রকাশ পায় না। বাঁচতে হবে সাহসের সাথে। এর জন্য জীবনে বিপদকে তুচ্ছ ভাবতে হবে। যদি জীবন পণ করারও প্রযোজন পড়ে তবে তাও করার সাহস থাকতে হবে। আত্মত্যাগের সাহস থাকলে জীবনের মূল্য বোঝা যায়। আর কোনো কিছুর ভয়ে ‍যদি জড়োসড়ো ও নির্জীব হতে হয় তবে মানুষের বাঁচার কোনো সার্থকতা নেই। সাহসের সাথে সকল বিপদ মোকাবিলা করলেই জীবনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষকে তাই যথার্থ সাহসী হয়ে জীবনের গৌরব প্রমাণ করতে হবে। আত্মত্যাগী সাহসী মানুষেরই বাঁচার অধিকার আছে। ভীরু কাপুরুষ ও দুর্বল চিত্তের সে অধিকার নেই। সাহসের সাথে সকল বিপদ মোকাবেলা করলেই জীবনের অধিকার প্রমাণিত হবে।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post